নতুন মামলায় বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সঙ্গে ব্যবসায়িক ‘পার্টনার’ বিএনপি নেতাও

গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যূত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার ছোট ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়াসহ একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের দুই মালিককে আসামি করে মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের আদালতে।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এ অভিযোগ উপস্থাপনের পর আদালত অভিযোগটি তদন্ত করে ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় চট্টগ্রামভিত্তিক নিপকো প্রপার্টিজ লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাউজানের বাসিন্দা মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৪৮), তার ছোট ভাই একই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান এইচএম জামাল উদ্দীন (৪৫) ছাড়াও আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক উপকমিটির সদস্য ও চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে (৪৫)। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পর বিপ্লব বড়ুয়া ও বিদ্যুৎ বড়ুয়া দুজনেই ভারতে পালিয়ে যান।

এর আগে গত ২২ আগস্ট বিপ্লব বড়ুয়া, তার ভাই বিদ্যুৎ বড়ুয়া, বিদ্যুৎ বড়ুয়ার স্ত্রী অগ্নি বড়ুয়া এবং তাদের ব্যবসায়িক সহযোগী বিএনপি নেতা এইচএম জামাল উদ্দিনসহ মোট চারজনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয় আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) নির্দেশে।

মামলাটির বাদি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক এম সাইফুদ্দিন সৈয়দ। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। সাইফুদ্দিন এর আগে গত ৭ অক্টোবর তিন কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধেও চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতে একটি মামলা করেছিলেন। এতে আরও যাদের আসামি করা হয়, তারা হলেন রেজাউল করিম চৌধুরীর মেয়ে সাবিহা তাসনিম তানিম, ভাই নুরুল করিম চৌধুরী, নিকটাত্মীয় মাহমুদুর রহমান চৌধুরী, টিপু রহমান এবং নজরুল ইসলাম অপু। ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালে বাদীকে হত্যা ও লাশ গুমের ভয় দেখিয়ে তার একটি সম্পত্তি জোরপূর্বক বিক্রি ও প্রতিশ্রুতিমতো ৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা নির্ধারিত সময়ে পরিশোধ না করে আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়।

বৃহস্পতিবার দায়ের করা নতুন মামলার অভিযোগে বলা হয়, চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী মৌজায় বাদি সাইফুদ্দীন সৈয়দ তার মালিকানাধীন একটি জায়গায় সাততলাবিশিষ্ট বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য নিপকো প্রপার্টিজ লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। এরপর প্রতিষ্ঠানটি নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করার বিষয়টি বাদির নজরে এলে তিনি তাতে বাধা দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আসামিরা তাদের ব্যবসায়িক সহযোগী বিদ্যুৎ বড়ুয়ার বড় ভাই সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়ার ভয় দেখিয়ে বাদির লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দেন।

অভিযোগে বলা হয়, ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটি চুক্তির শর্ত মতে কাজ না করায় চুক্তিপত্র বাতিল মর্মে ২০১৩ সালের ৩১ মার্চ বাদি একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ১ নম্বর আসামির বরাবরে। কিন্তু এরপরও আসামিরা গায়ের জোরে কাজ করে যেতে থাকে। ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর বিল্ডিংয়ের নির্মাণকাজ শেষ করে ৬টি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে না পারায় ফ্ল্যাটগুলোর মোট ৭৮ মাসের ভাড়া বাবদ ১ কোটি ৯৫ হাজার টাকা প্রাপ্য দাবি করে আরও একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান ২০২৩ সালের ৩ মে। এতে আসামিরা ক্ষিপ্ত হয়ে বাদিকে প্রাণে মেরে ফেলবে বলে ভয়ভীতি দেখান। এর জের ধরে বাদি সাইফুদ্দীন সৈয়দ আসামিদের বিরুদ্ধে ওই বছরের ১৫ জুন খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দাখিল করেন। পরে বাদি ব্যাংক ঋণ নিয়ে তার ভাগে পাওয়া ছয়টি ফ্ল্যাটের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করেন।

অভিযোগে বলা হয়, চলতি বছরের ২০ জুলাই বাদি সাইফুদ্দীন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গেলে সেখানে তিনি মহিউদ্দিন ও এইচএম জামাল উদ্দীনের সঙ্গে বিদ্যুৎ বড়ুয়াকেও দেখতে পান। এ সময় তিনি প্রাপ্য টাকা পরিশোধের অনুরোধ জানালে মহিউদ্দিন ও জামাল বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে বলেন, ‘বিপ্লব বড়ুয়াকে ফোন লাগাও, শালার পুতকে অপহরণ করে লাশ গুম করে ফেলতে হবে।’ প্রাণনাশের হুমকির মুখে সাইফুদ্দীন ওই অফিস থেকে বের হয়ে যান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm