চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে চট্টগ্রাম নগরের ভোটের চিত্র নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম মহানগরের কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই আসনের বোয়ালখালীতে ৩৬ দশমিক ৫৭ শতাংশ ভোট ‘কাস্ট’ হলেও নগর অংশে ভোট গ্রহণ হয়েছে মাত্র ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নেতাদের ত্রিমুখী দ্বন্দ্বের কারণে নগরে ভোটের এমন করুণ চিত্র বলে দাবি করে এজন্য দলের দায়িত্বশীলদের দুষছেন কর্মীরা। অন্যদিকে নেতারা বলছেন, এই নির্বাচনকে সিরিয়াসলি নেয়নি ভোটাররা।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম-৮ আসনে নগরীর ১০১ কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯৫ জন। এর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৪৯ হাজার ৫৯ জন। তার মধ্যে নৌকা প্রতীকের মোছলেম উদ্দিন আহমদ পেয়েছেন ৩৬ হাজার ২২৯ ভোট। অর্থাৎ মোট ভোটের কেবল ১৫ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নির্বাচনকে ঘিরে থানা আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ ও কাউন্সিলরদের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব ছিল। ৫টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ও থানা আওয়ামী লীগের নেতারা চেয়েছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি সম্পাদক হতে। কিন্তু এদের মধ্য থেকে দুজনকে চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব দেওয়া গেছে। ফলে বাকিরা নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম দিকেই নির্বাচন থেকে ছিটকে গেছে। তারা প্রত্যেকেই এটিকে আগামী সিটি কর্পোরেশনের রিহার্সাল হিসেবেই নিয়েছিলেন।
জানা গেছে, এসব সমস্যা সমাধানে মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে নগরীর একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠকও করেছিলেন মোছলেম উদ্দিন আহমদ। তবে এই বিরোধ সমন্বয় করে নির্বাচন পরিচালনায় মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যর্থ হয়েছেন বলে দাবি করেছেন নেতাকর্মীরা। এছাড়া তাদের দাবি, নির্বাচন পরিচালনায় খুব আন্তরিক ছিলেন না দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এমনকি ভোটার স্লিপটাও ঠিকঠাক করে বিলি করা হয়নি। এছাড়া বেশিরভাগ নেতাকর্মীর ফটোসেশন সর্বস্ব কার্যক্রমকেও এজন্য দায়ী করেছেন অনেকে। বেশিরভাগ প্রচারণা ছিল লোকদেখানো আর মহাসড়ককেন্দ্রিক। অলিগলিতে কোন প্রচারণা কিংবা পোস্টারও লাগানো হয়নি বলে জানা গেছে।
এবারের নির্বাচনের প্রচারণায় খুব সরব ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আবদুচ ছালাম। এই আসন থেকে মনোনায়নও চেয়েছিলেন তিনি। উপনির্বাচনে নগরের অংশে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম ৮ আসনে ভোটার উপস্থিতি কম হওয়া দুঃখজনক। তবে এমনই হবে সেটা আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিল। কিন্তু এসব নিয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেননি।’
অন্যদিকে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপনির্বাচনে এমনিতেই সবসময় ‘ডাল স্কোরিং’ থাকে। এছাড়া আমাদের নেতাকর্মীরা এই নির্বাচনকে সিরিয়াসলি নেয়নি। কারণ ভোটারদের প্রতি তাদের আস্থা ছিল ভোটাররা উন্নয়নের পক্ষই নেবে। এছাড়া নির্বাচনের দিন শীতও ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে বেশি। এসব কারণে কিছুটা ‘লো স্কোরিং’ হয়েছে।’
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘শীতের কারণে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা কম ছিল। এছাড়া শুধুমাত্র একটা আসনে নির্বাচন হয়েছে। শহরের বাকি অংশে সব অফিস আদালত কলকারখানা খোলা ছিল। এই এলাকায় বেশিরভাগ ভোটারই শ্রমজীবী। অফিস আদালত খোলা থাকায় তারা কর্মব্যস্ততার কারণে ভোট দিতে যেতে পারেনি।’
তবে বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন থেকে উৎসব ও বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে যাচ্ছে। এটা পুরো নির্বাচন ব্যবস্থার জন্য সুখকর নয়। ভোট কেন্দ্রে ভোটার না যাওয়া কিংবা ভোট দিতে যেতে না পারা, জোর খাটানো এগুলো ভোটাররা পছন্দ করছে না। সামগ্রিকভাবে এসবের ফলে ভোট দিতে নাগরিকদের মধ্যে অনীহা তৈরি হচ্ছে। ‘এজ ইট ইজ’ ধরনের ইলেকশন কখনো গণতন্ত্রের ভিতকে মজবুত করে না বলে দাবি তাদের।
এসএস/সিপি