চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ১০ মার্চ থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেশ আগে থেকেই নগরে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী আমেজ। চসিকে প্রথমবারের মত দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনী আমেজের শুরু মূলত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে। ওই দিন মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। খানিক পরে নির্বাচনী এই আমাজে বিএনপি যুক্ত হলেও দেশের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলতে গেলে সে আলোচনায় নেই একেবারেই। তবে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড তেমনভাবে না থাকলেও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নকে ঘিরে একের পর এক নাটকীয় পরিবর্তনকে ঘিরে স্থানীয় ভোটারদের ব্যাপক আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
মেয়র ও কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্ধারিত হয়ে যায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই। নির্বাচনী এ আমেজে অবশ্য বিএনপি যোগ দেয় খানিকটা পরে। আওয়ামী লীগের মেয়র কাউন্সিলর পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার পরে মনোনয়ন বিক্রি শুরু করে তারা। মেয়র পদে বিএনপির মনোনয়ন সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার দিন ধার্য করা হয় ১৭ ,১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি। অন্যদিকে কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন বিক্রি করতে ১৯ ও ২০ তারিখ কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন বিক্রির কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে কেউ ফরম সংগ্রহ না করায় নির্ধারিত সময়ের পরেও ২১ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন বিক্রি করে তারা। মেয়র পদে বিএনপি থেকে ৬ জন ও কাউন্সিলর পদে মোট ২০৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে। তবে এখনো দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত ঘোষণা দিতে পারেনি তারা। আজ এ বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মিটিং অনুষ্ঠিত হয়েছে জানিয়ে নেতারা বলছেন— দুয়েকদিনের মধ্যেই ঘোষণা আসছে তাদের।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টি থেকে অনেকটা নিরবে মেয়র পদে প্রার্থী ঘোষণা করা হলেও নির্বাচনের আলোচনায় নেই দলটি। যদিও দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন জাতীয় পার্টি একটি নির্বাচনমুখী দল। চসিক নির্বাচনকে ঘিরে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো এখনো নড়েচড়ে না বসলেও সরকারি দল আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্বাচনকে ঘিরে নির্বাচনের আগেই একটা নির্বাচনী উৎসব দোলা দিয়ে গেছে ভোটারদের মনে। এই দলের মেয়র প্রার্থী হিসেবে কে মনোনয়ন পাচ্ছেন সেটা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ছিল। দিনশেষে অনেকটা চমক হিসবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ঘরে তুলেন নগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম চৌধুরী। বাদ পড়েন বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। এর পর কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রেও চমক দেয় দলটি। বর্তমান কাউন্সিলরদের মধ্যে এক ডজন কাউন্সিলর এবার মনোনয়ন চেয়েও পাননি দলটি থেকে।
নির্বাচনের প্রার্থীর বিষয়ে যখন অন্য দলগুলো কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারেনি তখন অঘোষিত প্রচার প্রচারণায় নেমে গেছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। নির্বাচনের প্রস্তুতির খসড়াও তৈরি হয়ে গেছে তাদের। এই প্রস্তুতিকে চূড়ান্ত রূপ দিতে কাল সন্ধ্যায় কার্যনির্বাহী কমিটির সভা ডেকেছে তারা।
নির্বাচনী প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নির্বাচনের বিষয়ে আমরা এক বছর আগে থেকেই পরিকল্পনা নেওয়া শুরু করেছি। এখন আমরা চূড়ান্ত কর্ম পরিকল্পনার বিষয়ে ভাবছি। দল হিসেবে আমাদের পরিকল্পনা ছিলই তাছাড়া এবারে নির্বাচন পরিচালনার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন আমাদের দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিনি অত্যন্ত দক্ষ ও প্রবীণ নেতা। নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার বিষয়ে উনি অত্যন্ত সঠিক নেতৃত্ব দিবেন।’
তিনি বলেন, ‘যেহেতু দলীয় প্রতীকে প্রথম নির্বাচন হচ্ছে সেহেতু আমরা চাই সাংগঠনিক কমিটিগুলোর মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারণার কাজ পরিচালনা করতে। সেক্ষেত্রে সমমনা অন্যান্য ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে এই নির্বাচনের প্রচারণায় যুক্ত করা যায় তা নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের অভ্যান্তরীণ বিরোধীতার সম্মুখীন হতে পারে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মেয়র পদে মনোনয়ন চেয়েও যারা পাননি তারা সবাই দলের ত্যাগী ও গুরুত্বপূর্ণ নেতা। দলের ও নেত্রীর প্রশ্নে তাদের আনুগত্য সন্দেহাতীত। এর মধ্যে মনোনয়ন চাওয়া সবাই রেজাউল করিম ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করছেন, আলাপ করছেন। কাজেই এরকম কোন আশংকায় আমরা ভুগছি না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবেই নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। চারদিকে নির্বাচনী উৎসব শুরু হয়েছে। এটিকে ধরে রেখে ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে আমাদের দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করবে। অন্যদিকে ভিন্ন দল বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরকেও আমরা স্বাগত জানাই। কারণ অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর নির্বাচনের জন্য এটা বেশ জরুরি।
তবে আওয়ামী লীগের কাছে উৎসব হলেও বিএনপির কাছে এটি বেশ উদ্বেগের। নির্বাচন সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উৎসবের কিছু নেই। এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে কোন নির্বাচন এখন পর্যন্ত সফল হয়নি, আগামীতেও হবে বলে আশা রাখিনা। তবুও আন্দোলনের অংশ হিসেবে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। এর মধ্যে আমরা মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। দুয়েকদিনের মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে। তবে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ৮ আসনের উপনির্বাচন ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কি হয়েছে সবাই তা দেখেছে।
অন্যদিকে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত ১২ জন কাউন্সিলরের ১০ জনই ইতোমধ্যে বিদ্রোহী নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন। এ ঘোষণা শেষ পর্যন্ত ঠিক থাকলে চসিক নির্বাচনে ভিন্ন একটা মাত্রা যোগ হবে বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। নির্বাচন কমিশন থেকে এখন পর্যন্ত মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১২২ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৭ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন।
চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমগুলো এগিয়ে নিচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে আমরা সব ধরনের পদক্ষেপ নেব।’
এআরটি /এসএস