শনাক্ত ২৪/ নগরজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক, ‘ওষুধ’ ছিটিয়ে দায় সারছে চসিক

জুলাই মাস শেষ হতে আর সাতদিন বাকি। কিন্তু এই কয়েক দিনেই চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে ২৪ জন। বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ায় জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত মানুষ।

এ মাসের প্রথম ২০ দিনেই ১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও একদিনের ব্যবধানে নতুনভাবে আক্রান্ত হয়েছে আরও অন্তত ১০ জন। সর্বশেষ ২২ জুলাই আরও তিনজন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। রাজধানীতে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম নগরেও।

কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের দাবি, শহরে ডেঙ্গু নেই। রোববার (২১ জুলাই) সিটি করপোরেশনের ৪৮তম সাধারণ সভায় ডেঙ্গু ও চিকনগুনিয়া প্রসঙ্গে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘অদ্যাবধি চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগের সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের চলমান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।’

এদিকে নগরের সরকারি ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে প্রতিদিনই শনাক্ত হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী। এর আগে চমেক হাসপাতালে শনাক্ত হয় আট জন। এর মধ্যে রোববার (২১ জুলাই) আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালে চার জন, বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালে চার জন ছাড়াও মেডিকেল সেন্টার, সিএসসিআর এবং রয়েল হাসপাতালে একজন করে মোট ১১ জন রোগী শনাক্ত হয়। ২২ জুলাই শনাক্ত হয় আরও তিনজন। এর মধ্যে একজন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকি দুজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন অফিসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৭ সালে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৬৬ জন। ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে ১৭৭ জন। ২০১৯ সালের অর্ধবছরেই শনাক্ত হয় ২৪ জন।

চসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের এখানে এখনও ডেঙ্গু আসেনি। ঢাকায় মহামারী হলেও আমরা ভালো আছি। চসিকের (সিটি করপোরেশনের স্বাস্থ্যকেন্দ্র) হাসপাতালগুলোতে একজনও পাওয়া যায়নি। তবে আমরা সচেতনতা থেকেই ডেঙ্গু নিয়ে সতর্কতা ও সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা করছি। এর মাঝে পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। পাশাপাশি ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলরদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ প্রোগ্রাম আয়োজনও করা হচ্ছে।’

নগরীতে ডেঙ্গুর অস্তিত্ব পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই দু’একজন পাওয়া যায় ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী। এটাও তেমন। ঢাকার মতো আমাদের অবস্থা না। তাছাড়া আমাদের এরিয়াতে একজনও নেই।’

সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখানে যেগুলো আছে সবগুলো নরমাল ডেঙ্গু। ভয়ের কিছু নেই। সব আমাদের কন্ট্রোলে আছে। তাছাড়া আমরা প্রতিদিনই রিপোর্ট করছি কোথাও শনাক্ত হয়েছে কিনা। ঢাকায় এর প্রকোপ বাড়লেও আমাদের এখানে তেমন আশঙ্কা নেই। আর যারা ভর্তি হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই সুস্থ হয়ে বাসায়ও ফিরে গেছেন।’

এদিকে সিভিল সার্জন কার্যালয় ডেঙ্গু প্রতিরোধে ১৫টি উপজেলা তদারকির জন্য কন্ট্রোল রুম স্থাপন করেছে। নগরীতে অবস্থিত নয়টি আরবান ডিসপেনসারিতে ডেঙ্গু নিয়ে বিশেষ সতর্কতার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। সেই সাথে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য পাঁচ হাজার লিফলেট বিতরণ করা হবে। প্রথম দিনেই প্রায় এক হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

ডেঙ্গু সতর্কতায় চসিকের কাজ
গত ১৫ জুলাই নগরীতে মশা নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ৪১টি ওয়ার্ডজুড়ে ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। যার পরিচালনায় ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকা। তবে এ ক্রাশ প্রোগ্রামে আদৌ কোনো সুফল মিলবে কিনা–এ নিয়ে সন্দেহ আছে নগরবাসীর মধ্যে।

জানা গেছে, প্রতিদিন ১৬১ জন কর্মী নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে ও বিভিন্ন স্থানে ওষুধ ছিটাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে সচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ। প্রতিটি ওয়ার্ডের ঝোপঝাড় পরিস্কার ও নালা-নর্দমায় যেখানে মশা বংশবিস্তার করে, সেখানেও ওষুধ ছিটানো হচ্ছে বলে দাবি চসিকের। এসব ‘বহুমুখী কর্মসূচি’র কারণে মশার উপদ্রব ও ডেঙ্গুর প্রকোপ নেই চট্টগ্রামে – দাবি মেয়রের।

মেয়র বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। প্রতিটি ওয়ার্ডে বিগত সময়ের চেয়ে দ্বিগুণ-তিনগুণ কর্মী বেশি আছে।

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!