চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের হলফনামা ও মনোনয়নপত্রে মিথ্যা তথ্য ও তথ্যগোপন করার অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগে শিক্ষা উপমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নওফেলের প্রার্থিতা বাতিল ও মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণা করতে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন একই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সানজীদ রশীদ চৌধুরী।
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ে পাঠানো তিন পৃষ্ঠার অভিযোগে জানানো হয়, মহিবুল হাসান চৌধুরীর হলফনামা ও মনোনয়নপত্রে মাতার নাম ‘হাসিনা মহিউদ্দিন’ উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তার জন্মদাত্রী মাতা হলেন মরহুমা শাহেদা আক্তার ওরফে শাহেদা মহিউদ্দিন। এছাড়া তার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার মধ্যে গরমিল পাওয়া গেছে।
এর আগে গত সোমবার (৪ ডিসেম্বর) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে নওফেলসহ ৭ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর পাঁচ দিন পর এই অভিযোগ উঠলো।
নির্বাচন কমিশন বরাবরে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, মহিবুল হাসান চৌধুরীর পিতা প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম সিটির সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ১৯৮২ সালের মার্চে সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের শিক্ষিকা শাহেদা আক্তারকে বিয়ে করেন। পরে সামাজিকভাবে তিনি ‘শাহেদা মহিউদ্দিন’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন। শাহেদা আক্তারের গর্ভে ১৯৮৩ সালের ২৬ জুলাই মহিবুল হাসান চৌধুরীর জন্ম হয়। ১৯৮৬ সালের ১৯ অক্টোবর এক মর্মান্তিক বোমা দুর্ঘটনায় নিজ বাড়িতে শাহেদা মহিউদ্দিন মৃত্যবরণ করেন। এ বিষয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলাও হয়। সেই দুর্ঘটনায় বানু নামের এক গৃহকর্মীও মৃত্যুবরণ করেন।
অন্যদিকে ১৯৮৭ সালের জানুয়ারি/ফেব্রুয়ারিতে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে হাসিনা মহিউদ্দিন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তখন মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বয়স প্রায় ৪ বছর।
হলফনামায় ‘মিথ্যা তথ্য’ দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে অভিযোগে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০, বাংলাদেশ উত্তরাধিকার আইনসহ প্রতিটি স্থানে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, ‘মা’-‘মাতা’ অর্থ গর্ভধারিনী। এতে দুধ মা/পালক মা/পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীর কোনো স্থান নেই। আপিল আবেদনের সাথে সংযুক্ত সকল দলিলাদির দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, মহিবুল হাসান চৌধুরীর জন্মদাত্রী মাতা মরহুমা শাহেদা মহিউদ্দিন এবং হাসিনা মহিউদ্দিন তার পিতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় স্ত্রী, গর্ভধারিনী নন।’
একই অভিযোগে মহিবুল হাসান চৌধুরীর এনআইডি, হলফনামা এবং জাতীয় সংসদের সাংসদ ডায়েরিতে বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানার গরমিল আছে বলে উল্লেখ করা হয়।
নির্বাচন কমিশনে জমা পড়া মনোনয়নপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ঠিকানা এবার বদলে গেছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় নওফেলের ঠিকানা লেখা ছিল তাদের পৈতৃক বাড়ি — ২০৭ চশমা হিল আবাসিক এলাকা, ডাকঘর: পলিটিক্যাল ইন্সটিটিউট ৪২০৯, খুলশী। আর এবার জমা দেওয়া হলফনামায় নওফেলের পুরনো পৈত্রিক ঠিকানা বদলে নতুন ঠিকানা লেখা হয়েছে— গ্রাম: হাজারী লেইন, কে সি দে রোড, কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম।
এদিকে অভিযোগকারী জাতীয় পার্টির প্রার্থী সানজীদ রশীদ চৌধুরী বিষয়গুলো যাচাই করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (২০২৩ পর্যন্ত সংশোধিত) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন পর্যালোচনা করে মিথ্যা ও অসত্য তথ্য দেওয়ার কারণে মহিবুল হাসান চৌধুরীর প্রার্থিতা বাতিল ও মনোনয়ন অবৈধ ঘোষণার আবেদন জানিয়েছেন।
সিপি