নওফেলও চান সামনের লকডাউনে গার্মেন্টসসহ শিল্পকারখানা খোলা থাক

কোরবানির পর ২৩ জুন থেকে পরবর্তী লকডাউনে শিল্পকারখানা খোলা রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও। ‘কারখানা বন্ধ হয়ে শ্রমিকরা ঘরে থাকলে তাদের মধ্যে আরও বেশি মাখামাখি হয়’— এমন মন্তব্য করে এতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। এজন্য ব্যবসায়ীদের সাথে ‘সেই সম্পর্ক নাই’ জানিয়ে বাস্তবতার নিরিখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প কারখানা খোলা রাখার আহ্বান জানান উপমন্ত্রী।

শনিবার (১৭ জুলাই) চট্টগ্রাম নগরীর লালখানবাজারের শহীদনগর উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার বিতরণ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

করোনা মোকাবেলায় সরকারঘোষিত লকডাউনে গার্মেন্টস বন্ধ না থাকলেও আগামী ২৩ জুলাই থেকে শুরু হতে যাওয়া ১৪ দিনের লকডাউনে গার্মেন্টস ও শিল্পকারখানা বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি সব কিছু বন্ধ হয়ে গেলে নিম্ন আয়ের মানুষের থাকার জায়গাও থাকে না। কারণ কারখানা বন্ধ থাকলে সবাই ঘরে থাকে। ঘরে থাকলে মানুষের মধ্যে আরও বেশি মাখামাখি হয়, গ্যাদারিং হয়। সুতরাং কারখানাগুলো যদি অন্তত খোলা থাকে… রপ্তানিমুখী কারখানাগুলো যদি খোলা থাকে, আমাদের সাথে কারও কোন…ব্যবসায়ীর কোনো সেই সম্পর্ক নাই। বাস্তবতার নিরিখে… অনেক মানুষ এখানে আছেন গার্মেন্টসে চাকরি করেন। যে শিফটে তারা চাকরি করতে যান— তখন ঘরে একজন লোক ঘুমাতে পারে, রান্না করতে পারে। এখন তিনি কাজ না করে যদি ঘরে বসে থাকেন (এবং) সেখানে আরও বেশি মানুষ ঘরে থাকে। সেখানে আরও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয় (হবে)।’

এসব বিবেচনা রেখে কারখানা খোলা রাখার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রাম-৯ আসনের সংসদ সদস্য নওফেল বলেন, ‘যারা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে এবং শ্রমিকদের নিয়ে গিয়ে কারখানা চালান— সেগুলা যাতে খোলা রাখা হয়। সেই কথা বিবেচনায় রেখে বাস্তবতা মেনে এটা আমরা সরকারি পর্যায়ে আহবান রাখবো যাতে সেগুলো খোলা রাখার একটা ব্যবস্থা করা হয়।’

সব বন্ধ করে দিলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে অনেকে চিন্তা করলেও সেটা অনেক কঠিন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আসলে এখানে আমরা যারা চিন্তা করি, সব বন্ধ হয়ে গেলে বোধহয় সব ঠিক হয়ে গেল। অনেক সময় সেটা কিন্তু অনেক কঠিন এবং এই কঠিন বাস্তবতাটার জন্য আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাবো।’

দেশের সবাই দ্রুত ভ্যাকসিন পাবেন বলে আশ্বস্ত করে উপমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করছি সবাই দ্রুত ভ্যাকসিন দিতে পারবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোটি কোটি ভ্যাকসিন আনছেন। আপনারা তার জন্য দোয়া করবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আজকে যে সাহায্য পাচ্ছেন তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপহার। উনি রাষ্ট্রের সকল দরজা খুলে দিয়েছেন, সাধারণ মানুষকে খাবার ও অর্থ দেওয়ার জন্য, সহযোগিতা করার জন্য। কারণ তিনি চান এই সময়ে আমরা যতটুকু সম্ভব লকডাউন মেনে চলি, ঘরে থাকি। তারপরেও আমরা-আপনারা যদি লকডাউন মেনে না চলি, তাতে যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে আপনার পরিবারের কর্মক্ষম লোকটা মারা যান তাহলে আপনাদের সারাজীবন আফসোস করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না। তখন কিন্তু পুরো পরিবারই পথে বসে যাবে। এইটা ভেবেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খাবারের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। তিনি শুধু দিয়েই যাচ্ছেন। তার প্রতিদানে হিসেবে আমাদেরও তাকে কিছু দিতে হবে।’

‘আমরা তাকে একটা জিনিসই দিতে পারি তা হচ্ছে আমরা যেখানেই যাই না কেন, সবসময় যাতে করে মাস্কটা পরে থাকি। এই জিনিসটা আমরা উনাকে দিতে পারি। এইটা যদি আমরা শতভাগ নিশ্চিত করতে পারি তাহলে করোনা বাংলাদেশে অনেকাংশে কমে যাবে। তখন আর কোন লকডাউনের প্রয়োজন হবে’—যোগ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনে গরিবের যে কষ্ট হচ্ছে, সেই কষ্টে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাই এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে সবাই কে সচেতন হতে হবে।’

১৪ নং লালখানবাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলালের সভাপতিত্বে চলমান লকডাউনে কর্মহীন মানুষের মাঝে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার উপহার (নগদ অর্থ ও চাল) বিতরণ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুক, ১৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব সিদ্দিকী আহমেদ, পেশাজীবি নেতা আমজাদ হাজারী, নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শেখ দেলোয়ার হোসেন, সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর আঞ্জুমান আরা।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!