ধর্ষণকাণ্ডে দুই ট্রেনে চার মাস ধরে বন্ধ ক্যাটারিং সার্ভিস, যাত্রীদের দুর্ভোগ
রহস্যজনক কারণে কাউকে দায়িত্বও দিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ
চার মাস ধরে নেই চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের দুটি আন্তঃনগর ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস। এতে প্রতিদিন যাত্রীদের খাবার নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় সাড়ে ১০ ঘণ্টার যাত্রায় ট্রেন চলাকালীন কোনো ধরনের খাবার কিনে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই যাত্রীদের জন্য। ফলে অসুস্থ রোগী থেকে শুরু করে নারী ও শিশুদের জন্য ট্রেনে যাত্রা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। রহস্যজনক কারণে ক্যাটারিং সার্ভিসের জন্য নতুন কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও দায়িত্ব দিচ্ছে না রেল কর্তৃপক্ষ।
এর আগে চট্টগ্রাম-সিলেট রুটের উদয়ন আন্তঃনগর ট্রেনে ধর্ষণের ঘটনার অভিযোগ ওঠার পর ক্যাটারিং সার্ভিস বন্ধ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খাবার বিক্রির দায়িত্বের থাকা সেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস স্থগিতে করা হলেও অন্য কোনো ঠিকাদার নিয়োগ দেয়নি রেলওয়ে। এসএ কর্পোরেশন নামের ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চার কর্মীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। এরপর রহস্যজনকভাবে অন্য কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকেও ক্যাটারিং সার্ভিসের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে চার মাস ধরেই যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এদিকে ফেনী ও লাকসামসহ বেশ কয়েকটি স্টেশনের প্লাটফর্মের দোকান উচ্ছেদ ও ভাসমান হকারদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকায় ট্রেন থেকে নেমে খাবার কেনা দুরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে যাত্রীদের জন্য। আবার অনেকে ট্রেন ছেড়ে দেওয়ার ভয়েও প্লাটফর্মে নামতে চান না।
রোববার (৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম রেল স্টেশন থেকে সিলেটগামী ‘পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে’ দেখা গেছে খাবারের কোচ একেবারে ফাঁকা পড়ে আছে। অনেক যাত্রী ট্রেন ভ্রমণে তাদের দুর্ভোগের কথাও এ সময় তুলে ধরেছেন। এছাড়া সিলেটগামী রাতের ট্রেন ‘উদয়ন এক্সপ্রেসে’ও বন্ধ রয়েছে ক্যাটারিং সার্ভিস।
পাহাড়িকা এক্সপ্রেসে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেনে খাবার গাড়িটির কার্যক্রম বন্ধ। দায়িত্বরত টিটিই, এটেনডেন্ট, পুলিশও যাত্রীদের ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে সিলেটের উদ্দেশ্যে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ছাড়ে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে। আর উদয়ন এক্সপ্রেস ছাড়ে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে। এ দুটি ট্রেন প্রায় সাড়ে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা শেষে গন্তব্যে পৌঁছায়। ট্রেন দুটি আবার সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যেও ছেড়ে আসে সকালে ও রাতে।
কিন্তু গত ২৬ জুন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন দুটিতে খাবার বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ‘উদয়ন এক্সপ্রেস’ ট্রেনের খাওয়ার বগিতে ২৫ জুন রাতে এক তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় এসএ কর্পোরেশন নামের ক্যাটারিং সার্ভিসের চার কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে রেল পুলিশ। এ ঘটনায় এসএ কর্পোরেশনের ক্যাটারিং সার্ভিস কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ জারি করা হয়। ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত হিসেবে মো. জামাল (২৭), মো. শরীফ (২৮), মো. রাশেদ (২৭) ও আবদুর রব ওরফে রাসেল (২৮) নামের চার কর্মীকে গ্রেপ্তার করে রেলওয়ে পুলিশ। এছাড়া এ ঘটনায় ট্রেনটির পরিচালক (গার্ড) আবদুর রহিমকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়।
যাত্রীদের এমন দুর্ভোগের দায় কার—এমন প্রশ্নের জবাবে রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক ম্যানেজার (পূর্ব) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি সত্যি স্পর্শকাতর। তবে যাত্রীদের এমন দুর্ভোগের বিষয়টি আমি অবহিত নই। এ সমস্যা সমাধানে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করবো।’
ডিজে