ধর্ম নিয়ে কটুক্তি করে ৭ বছরের দণ্ড পেলেন রাঙামাটির দর্জি

ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তির অভিযোগে করা মামলায় রাঙামাটির এক দর্জিকে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এটি বাংলাদেশে হওয়া দ্বিতীয় রায়। গত মাসেই এ ধরনের প্রথম রায়েও এক ব্যক্তিকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আসসামস জগলুল হোসেন ওই দর্জিকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দিয়েছেন। একইসঙ্গে আসামিকে এক হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

২০১৭ সালে রাঙামাটির লংগদু থানায় ইসলামের নবী এবং ইসলাম ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করে দেওয়া এক ফেসবুক পোস্টের সূত্র ধরে হওয়া মামলায় এই রায় দেন আদালত।

ঘটনা কী ঘটেছিল?

রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার মাইনীমুখ বাজারে একটি দর্জি দোকানে কাজ করতেন সুজন দে। ২০১৭ সালের ১০মে বিকেলে মাইনীমুখ বাজারের সেই দোকানের সামনে থেকে পুলিশ সুজন দেকে গ্রেপ্তার করে। রাঙামাটি কর্মসূত্রে থাকলেও তার বাড়ি পিরোজপুর জেলায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগের দিন ওই ব্যক্তি ফেসবুকে ইসলামের নবী এবং ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে একটি স্ট্যাটাস দেন বলে অভিযোগ ছিল। পরদিন বাজারের মজসিদ থেকে মুসুল্লিরা একত্রিত হয়ে ওই ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে মিছিল করে এবং স্লোগান দেয়।

লংগদু থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মোহাম্মদ নুর বলেন, ‘মামলার এজাহারে উল্লেখ করা আছে যে, সুজন দে তার ফেসবুকে ইসলামের নবী এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করে এবং কটুক্তি করে স্ট্যাটাস দিয়েছিল। তখন এলাকায় এ নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এরপর ওইদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

কী মামলা?

সুজন দের বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের বিলুপ্ত হওয়া ৫৭ ধারায় মামলা করা হয়েছিল। পুলিশ বলছে, মামলাটি তদন্ত করে ২০১৭ সালের ৩০শে আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। আর অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে আদালত ২০১৭ সালের ২৬শে অক্টোবর সুজন দের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ওই মামলায় সুজন দেকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল।

রায়ে কী বলা হয়েছে?

ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি নজরুল ইসলাম শামীম বলেছেন, ‘আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে পেরেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আসামি সুজন দে ‘জানা-অজানা’ নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটুক্তিমূলক পোস্ট দেয়, এবং ওই আইডি তার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে খোলা হয়েছে— সেটা প্রমাণ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘ওই স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তিনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছেন, সে কারণে আদালত তাকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ১০০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো একমাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন।’

রায় ঘোষণার পর সুজন দেকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে তার পরিবারের কোনো সদস্য রায় ঘোষণার সময় আদালতে ছিলেন না। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুজন দে আপিল করবেন কিনা জানা যায়নি।

ফেসবুকে ধর্ম অবমাননা

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। বাংলাদেশে ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দায়ের মামলায় এটি দ্বিতীয় রায়। এ নিয়ে পরপর দুই মাসে একই ধরণের দুইটি রায় এলো।
বাংলাদেশে ২০১৮ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করা হলেও ওই আইনের অধীনে হওয়া মামলাগুলো এই আইন অনুযায়ী-ই বিচার হবার বিধান রাখা আছে আইনে।

বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালে ফেসবুকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বা ধর্মকে অবমাননা করে দায়ের হওয়া এখনও প্রায় ২০টির মত মামলা বিচারাধীন রয়েছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!