ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ মারা যাওয়ার পর থেকে পদটি খালি রয়েছে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে। গত ২ জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর থেকেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এ মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ত্বরান্বিত করতে চলছে এখন মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রীর খোঁজ। ইঙ্গিত মিলছে, চট্টগ্রামের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় উঠে এসেছে এমনই তথ্য।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এবং ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ধর্মমন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন।
তবে এদের মধ্যে রাজনৈতিক কারণেই সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন এমপি নদভী। কারণ দেশে জামায়াতের দূর্গ হিসেবে খ্যাত সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে নৌকা প্রতীককে প্রথমবারের মত টানা দুইবার বিজয়ী করে এনেছেন এমপি নদভী। জামায়াতকে তাদের ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত ঘাঁটিতে ‘তুলোধুনো’ করার কারিশমা দেখিয়েই এবার মন্ত্রীর মর্যাদা নেওয়ার আলোচনায় উঠে এলেন আওয়ামী লীগের এ সংসদ সদস্য।
অনেকের মতে, নিজেদের ঘাঁটিতে জামায়াতকে শুধু ‘বধ’ করাই নয়, হেফাজতে ইসলাম এবং কওমী মাদ্রাসাগুলোতে জামায়াতের দখলদারিত্বেও বাগড়া বসিয়েছেন এমপি নদভী। এসব জায়গায় জামায়াতের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল। সেখানেও এখন এমপি নদভী বিস্তার করেছেন নিজের প্রভাব। যার রাজনৈতিক ফসল যাচ্ছে এখন আওয়ামী লীগের ঘরে।
আবার মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক যোগসূত্র স্থাপনের সেতু তৈরিতেও ভূমিকা রেখে চলেছেন নদভী। এ জায়গায় আগে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার করে রেখেছিল যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী সংগঠন জামায়াতে ইসলাম। মূলত এসব কারণেই আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চপর্যায়ে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেছেন সাতকানিয়া-লোহাগাড়ার এ সংসদ সদস্য।
আবার রাজনৈতিক প্রভাবের পাশাপাশি সারা দেশে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা স্থাপনসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে আলোচনায় এমপি নদভী। তিনি এসব কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশন।
এ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জানান, আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের অধীনে নদভী সারা দেশে নির্মাণ করেছেন প্রায় ৭০০ মসজিদ। দেশের বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণ করেছেন তিনি প্রায় শতাধিক ভবন। দেশের প্রায় ৪০০ মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে তার হাত ধরেই। এছাড়াও প্রায় ৫০টি জেলায় বিস্তৃত রয়েছে নদভীর প্রতিষ্ঠিত আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের সেবা কার্যক্রম।
আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের বর্তমান চেয়ারম্যান ও এমপি নদভীর ভাই প্রফেসর ড. আবুল আলা মুহাম্মদ হুসামুদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আমিরাত, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে এমপি নদভী সরাসরি যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। যাতে কেউ বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করতে না পারে, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হতে না পারে। এই রাষ্ট্রগুলোর বিভিন্ন পর্যায় থেকে আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বাংলাদেশে উন্নয়ন সহযোগিতা নিয়ে আসছেন এমপি নদভী। শুধু তাই নয়, আমেরিকা, লন্ডন, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি রাষ্ট্রও আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এ দেশে উন্নয়ন সহযোগিতা করে আসছে।’
এদিকে মন্ত্রী হওয়ার আলোচনার বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুই বার সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ দিয়ে আমাকে সম্মানিত করেছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি যে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়ে তুলেছেন, আমি সে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একজন সক্রিয় কর্মী। জঙ্গিবাদী চিন্তার অপশক্তি যখন ধর্মকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে আমি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছি। দেশ ও আওয়ামী লীগ নিয়ে তারা যেন মুসলিম বিশ্বের কাছে বিভ্রান্তি ছড়াতে না পারে সে বিষয়ে আমি অতীতেও তৎপর ছিলাম, এখনো তৎপর আছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘নেত্রী যে দায়িত্ব আমাকে দিয়েছে সেটি আমি যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছি। মন্ত্রী কিংবা অন্য যেকোনো রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টিও নেত্রীর সিদ্ধান্ত। উনি যাকে যেখানে যখন যোগ্য মনে করবেন সেখানেই দায়িত্ব দিবেন। আমি নেত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থাশীল।’
এদিকে ধর্মমন্ত্রীর পদে আলোচনায় রয়েছেন ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীও। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের জন্য আদালতে মামলা দায়ের করে আলোচনায় ছিলেন নজিবুল বশর। এছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সরব থেকে সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেন চারবারের এ সংসদ সদস্য। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ঘটনায় নজিবুল বশরের দায়ের করা মামলায় প্রথম গ্রেফতার হন জামায়াতের নেতারা। পরে তারা যুদ্ধাপরাধের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হন।
২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে সকল দলের অংশগ্রহণ নিয়ে যখন সংশয় তৈরি হয়েছিল তখন নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে তরিকত ফেডারেশন নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের পাশে থাকায় ছোট এই দলটির প্রতিও গুরুত্ব রাখছে সরকার।
ফটিকছড়ি আসনের সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মন্ত্রিসভায় যুক্ত করবেন। এর বাইরে কোন কথা হতে পারে না।’
এমএফও/সিপি