দ্রুতগামী ট্রেনের ২ ফুটে রেলের পয়েন্টসম্যানদের কাজ, একটু ভুলে নিশ্চিত মৃত্যু (ভিডিও)
বেসিক ট্রেনিং ছাড়াই নিয়োগ, নেই টিআই সনদও
রেলওয়ের পয়েন্টসম্যানদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। রেললাইন থেকে মাত্র ২ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে দ্রুতগতির ট্রেনে লাইন ক্লিয়ার বার্তা বা পরবর্তী স্টেশন বার্তা লুকস্টিকের মাধ্যমে দিতে হয় তাদের। চলন্ত ট্রেনে এই বার্তা দিতে একটু এদিক-সেদিক হলেই থাকে প্রাণ হারানোর শঙ্কা।
এছাড়া নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত পয়েন্টসম্যানদের বেসিক ট্রেনিং ছাড়ায় ফিল্ড ট্রেনিং দিয়ে কাজে নামানো হচ্ছে। এমনকি তাদের ট্রাফিক ইন্সপেক্টরের (টিআই) দেওয়া সনদও নেই। সর্বশেষ গত ৬ মার্চ দুর্ঘটনায় নিহত রেলের পয়েন্টসম্যান আজিজুল হকেরও ছিল না কোনো বেসিক ট্রেনিং।
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুতগতি ট্রেনে মোমেন্টাম সৃষ্টি হয়। ট্রেন চলাচলের রাস্তা থেকে ১০ ফুট দূরত্বে থাকে গেট। কিন্তু মাত্র ২ ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় পয়েন্টসম্যানদের। ক্লিয়ার করতে হয় পেপার লাইন্স ক্লিয়ার (পিএলসি)। এতে তাদের মৃত্যুঝুঁকি থাকে।
জানা গেছে, ট্রেন চলাচলের সময় পরবর্তী স্টেশনের বার্তা কাগজের মাধ্যমে লিখে দিতে হয় চালকদের। এই কাজ প্রত্যেক স্টেশনে করে থাকেন পয়েন্টসম্যানরা। তারা লুকস্টিকের মাধ্যমে (তারের গোল চাকা) দ্রুতগামী ট্রেনের চালকদের এটি দেন। ট্রেনের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে তাদের এটি দিতে হয়। গতির সঙ্গে তাদের সময় না মিললেই বড় দুর্ঘটনার শিকার হন তারা।
এদিকে রেলের নিয়ম অনুযায়ী পয়েন্টসম্যানরা প্রথমে একাডেমিতে বেসিক ট্রেনিং, পরে ফিল্ড ট্রেনিং নেবেন। এরপর ট্রাফিক ও সিগন্যাল ইন্সপেক্টর ফিট সনদ দেবেন। কিন্তু নতুন যোগ দেওয়া পয়েন্টসম্যানদের ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না এসব নিয়ম।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পরিবহন চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে ১১৩ জন নতুন পয়েন্টসম্যান নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের টিআই সনদ নেই। পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রাম বিভাগের কুমিরা, সীতাকুণ্ড, বারতাকিয়া, চিনকি আস্তানা, ফেনী, গুনবতী, লাকসাম, নাঙ্গলকোট, লালমাই, ইমামবাড়ী, কুমিল্লা স্টেশনে শূন্যপদের বিপরীতে নতুনদের নিয়োগ দিয়ে পিএলসি কাজ করানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে নতুন যোগ দেওয়া এক পয়েন্টসম্যান বলেন, ‘আমাকে দিয়ে চলন্ত ট্রেনের পিএলসি কাজ করানো হয়। একদিন শুধু ফিল্ড ট্রেনিং করানো হয়েছে। তারপর থেকে একাই করেছি, ভীষণ ভয় লাগে। একটু ভুলে নিশ্চিত মৃত্যু। শুনেছি রেল কোনো ঝুঁকি ভাতা দেয় না। ভাবছি চাকরি ছেড়ে দেবো।’
সহকারী বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা এনামুল হক সিকদার বলেন, ‘এর মধ্যে কোনো পয়েন্টসম্যানকে বেসিক কোর্স করানো হয়নি। নতুনদের বেসিক ছাড়াই ফিল্ড ট্রেনিং করানো হচ্ছে। তবে তাদের কেউই এখনও টিআই সনদ প্রাপ্ত নন।’
এই বিষয়ে জানতে বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা তারেক মো. ইমরানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে ক্ষুদেবার্তা দিলেও তিনি সাড়া দেননি।
এই বিষয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (সিওপিএস) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পয়েন্টসম্যান সংকট রয়েছে। তাদের ট্রেনিং কোর্স করানো সিডিউলও ফাঁকা নেই রেলওয়ে ট্রেনিংএকাডেমিতে (আরটিএ)। দুর্ঘটনা আপনার, আমার, সবার হতে পারে। তবুও এসব মেনেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।’
ডিজে