দৈনন্দিন জীবনে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলার গুরুত্ব ও ফজিলত

ইসলামী ‍পরিভাষাগুলোর একটি ‘ইনশাল্লাহ’। এর অর্থ হলো যদি আল্লাহ চান অথবা আল্লাহর ইচ্ছা থাকলে এই কাজটি করা সম্ভব। ভবিষ্যত বা আগামীতে কোনো কাজ করার আগে এই পরিভাষাটি ব্যবহার করতে হয়। আমরা দৈনন্দিন জীবনে নানা পরিভাষা ব্যবহার করে থাকি। এটা আমাদের যাপিত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোনো না কোনোভাবে মানুষ অন্যকে ধন্যবাদ জানায়। কিংবা সৌজন্যবোধ জ্ঞাপন করে। অথবা ভিন্ন কিছুতে পরিভাষা ব্যবহার করে। সেই ধরনের ইসলামী পরিভাষা নিয়ে আমাদের আয়োজন। আমরা কাজে সফল হলে আমাদের যা করতে হবে তা হলো ইনশাআল্লাহ বলতে হবে। কোরআন হাদীস থেকে ইনশাআল্লাহ বলার ফজিলত জানব-ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ হলো যদি আল্লাহ চান। ভবিষ্যতের কোনো কাজ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করতে ইনশাআল্লাহ শব্দটি ব্যবহার করতে হয়। অর্থাৎ যদি আল্লাহ চান আল্লাহর ইচ্ছায় যা ভবিষ্যতের প্রতিটি কাজের অভিপ্রায় ব্যক্ত করার সঙ্গে সম্পর্কিত। ইসলামী শরীয়তে ভবিষ্যতে কোনো কাজ বা¯তবায়নের দৃঢ় ইচ্ছা ব্যক্ত করার সময় ‘ইনশাআল্লাহ’ বলার গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রকৃত মুমিনের হৃদয়ে অটুট বিশ্বাস থাকে যে আল্লাহতায়ালা সর্বজ্ঞ ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যা চান তাই করেন। তাকে বাধ্য করার সাধ্য কারও নেই। এবং তিনি কোনো কিছু করতে বাধ্য নন। তাই তিনি মানবজাতিকে উপদেশ দিয়েছেন তারা ভবিষ্যতে কোনো কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করলে বা কোনো কিছু অর্জন করতে চাইলে বিষয়টি সম্পাদন হওয়া না-হওয়ার ব্যাপারটি সম্পূর্ণভাবে আল্লাহর মর্জির ওপর ছেড়ে দেবে এবং বলবে ‘ইনশাআল্লাহ’ অর্থাৎ, আল্লাহ যদি চান। আল্লাহতায়ালা যেহেতু বান্দার পূর্বাপর সব বিষয়ে পূর্ণ ওয়াকিবহাল এবং তার ভালো-মন্দের ব্যাপারে পূর্ণ অবগত তাই বিষয়টি বান্দার জন্য কল্যাণকর হলে তিনি তা সম্পাদন করে দেবেন আর অকল্যাণকর হলে এর থেকে তাকে দূরে সরিয়ে রাখবেন।

পরিভাষাগুলোর ক্ষেত্রে ‘ইনশাআল্লাহ’ অন্যতম। প্রতিটি মুসলমান কোনো না কোনো কাজে ও ক্ষেত্রে এটি বলে থাকেন। প্রখ্যাত ইসলামিক গবেষক ও জনপ্রিয় ধর্মীয় আলোচক মিজানুর রহমান আজহারী ‘ইনশাআল্লাহ’ বিষয়ে কিছু কথা বলেছেন। তিনি তার ভেরিফায়েড পেজে লিখেছেন-ভবিষ্যতের কোনো কথা কিংবা কাজের পূর্বে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলা-ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্মীয় রীতি ; যা আল্লাহতাআলা নিজেই শিখিয়েছেন। কোরআনে আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেছেন তোমাদের কোনো ইচ্ছে বা¯তবে রূপ নেবে না যদি না আল্লাহ ইচ্ছা করেন ; যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক। (সুরা আত-তাকওয়ির,আয়াত : ২৯)

মুমিন তার জীবনের প্রতিটি কাজেই আল্লাহকে স্মরণ করবে। সে নির্ভর করবে একমাত্র আল্লাহর ওপর নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও অন্যান্য উপায়-উপকরণের ওপর নয়। তাই তো মুমিন ভবিষ্যতের কোনো কাজের কথা বলতে গিয়ে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলে। ‘ইনশাআল্লাহ’ শব্দের অর্থ-যদি আল্লাহ চান। অর্থাৎ যদি আল্লাহ চান তাহলে আমি অমুক কাজটি করব বা অমুক কাজটি হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক এটিকেট বা আদব। কোরআনুল কারিমে আল্লাহতাআলা নিজেই ইনশাআল্লাহ বলেছেন প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ‌ তাঁর রাসুলকে সত্য স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন-যা ছিল সরাসরি হক। ইনশাআল্লাহ তোমরা পূর্ণ নিরাপত্তার সঙ্গে অবশ্যই মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে। (সুরা আল-ফাতহ,আয়াত : ২৭)

আল্লাহতাআলা পাশাপাশি তার প্রিয় হাবিবকেও তিনি ভবিষ্যতের কোনো কাজের আগে ইনশাআল্লাহ বলার নির্দেশনা দিয়েছেন ইনশাআল্লাহ বলা ব্যতিরেকে কোনো জিনিসের ব্যাপারে কখনো একথা বলো না যে আমি আগামীকাল এ কাজটি করবো। যদি ভুলে এমন কথা মুখ থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে সাথে সাথেই নিজের রবকে স্মরণ করো এবং বলো আশা করা যায় আমার রব এ ব্যাপারে সত্যের নিকটতর কথার দিকে আমাকে পথ দেখিয়ে দেবেন। (সুরা আল-কাহাফ,আয়াত : ২৩-২৪)

ইসমাইল (আ.)-এর কোরবানির ঐতিহাসিক ঘটনাটি কারও অজানা নয়। স্বপ্নে তাকে কোরবানি করার নির্দেশ পেয়ে যখন ইবরাহিম (আ.)-তাকে সম্বোধন করে বললেন ছেলে আমার আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আমি তোমাকে জবাই করছি। দেখো এ বিষয়ে তোমার মতামত কী? এমন ভয়াবহ স্বপ্নের কথা শুনেও ইসমাইল (আ.)-বললেন বাবা আপনি সেটাই করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন। (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০২)। অবশ্য সব ধরনের কাজে ইনশাআল্লাহ বলা বৈধ নয়। এ বিষয়ে সাধারণ কথা হলো শরিয়তের আলোকে যেসব কাজ করা বৈধ তা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করার সময়ই ইনশাআল্লাহ বলবে। বাকি যেকোনো ধরনের অবৈধ কাজে ইনশাআল্লাহ বলা অবৈধ। যেমন চুরি, ডাকাতি, ব্যভিচার, সুদ, ঘুষ, দুর্নীতি, সন্ত্রাসী কর্মকা করার ইচ্ছা করে ইনশাআল্লাহ বলা সম্পূর্ণ হারাম।

ইনশাআল্লাহ বলার মাধ্যমে বান্দার বিনয় আকুতি এবং আল্লাহতাআলার ওপর পূর্ণ তাওয়াক্কুল প্রকাশ পায়। ভবিষ্যতের কোনো কাজের ইচ্ছা পোষণের ক্ষেত্রে আল্লাহর নাম নেওয়া থেকে বিরত থাকলে-বান্দার ঔদ্ধত্য-অহংকার প্রকাশ পায়। যা তার কাজটাকে বরকতহীন বানিয়ে দেয়। তাই আমাদের উচিত-ভবিষ্যতের যে কোন কাজের আগে ইনশাআল্লাহ বলার অভ্যাস করা এবং আমাদের শিশু কিশোরদের এই কুরআনিক এটিকেটে অভ্য¯ত করে তোলা। ইনশাআল্লাহর জবাবে বলা উচিত আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

ইনশাআল্লাহ : ইনশাআল্লাহ শব্দের অর্থ মহান আল্লাহ যদি চান তাহলে। ভবিষ্যতের হবে করবো বা ঘটবে এমন কোনো বিষয়ে ইনশাআল্লাহ বলা সুন্নত। যেমন-ইনশাআল্লাহ আমি আগামীকাল আপনার কাজটি করে দেবো। এতএব কোনো কাজ শুরুর আগে অবশ্যই ইনশাআল্লাহ বলা উচিত। কারণ মানুষ অনেক দুর্বল এবং কাজের ক্ষেত্রে অন্যের ওপর নির্ভরশীল তাই কাজ শুরুর আগে আল্লাহতায়ালার কাছে সাহায্য কামনা একান্ত কাম্য। কোরআনও এটাই শিক্ষা দেয়।

ইসলামের ইতিহাসে ইনশাআল্লাহ যেমন গুরুত্বপূর্ণ সব উম্মতের জন্যও তা জরুরি। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু সে জরুরি কাজটি করেছিলেন। ফলে বাঙালিদের শুধু বিজয়ই ঘটেনি বিজয়টি এত দ্রত ঘটেছিল যে বিশ্বের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে ছিল এটি একটি বিরল ঘটনা । মাত্র ৯ মাসের যুদ্ধে বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে ”ইনশাআল্লাহর” ফজিলত এমনই বরকতময় হয়ে উঠেছিল। আল্লাহতাআলা আমাদের সবাইকে পূর্ণ আস্থা ও অনুভূতির সঙ্গে ‘ইনশাআল্লাহ’ বলার এবং এটাকে আমাদের সবসময়কার অভ্যাসে পরিণত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm