দেড় হাজার বছরে এই প্রথম অন্যরকম ঈদ

মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন আজ। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর সোমবার সারা দেশে উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। তবে করোনাভাইরাসের মহামারিতে জীবন এখন ঘরবন্দি। তাই উৎসবও আজ বিবর্ণ। এমন ঈদ আর কখনও বাংলাদেশে আসেনি। দেড় হাজার বছর ধরে ঈদ উদযাপনের যে ধারা প্রচলিত, এবারই প্রথম তার ব্যতিক্রম ঘটলো।

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এই ঈদে উদযাপন বলতে তেমন কিছুই থাকছে না। ঈদের জামাত হবে মসজিদে। উন্মুক্ত স্থানে জামাত আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সরকারের। সরকারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, এবারের ঈদে কোলাকুলি থেকে বিরত থাকতে হবে। ঘরে থেকেই পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে কাটাতে হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ফলে এবার আর যাওয়া যাবে না প্রতিবেশী বা আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে। তাদেরও আর আসতে দেওয়া যাবে না।

চট্টগ্রামে রোববার (২৪ মে) পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭১০ জন। এর মধ্যে ১৬০ জন সুস্থ হলেও মারা গেছেন ৫৪ জন।

এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এবছর ঈদগাহ বা খোলা জায়গার পরিবর্তে ঈদের নামাজের জামাত নিকটস্থ মসজিদে আদায় করতে হবে। প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজের জামাতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। নামাজের আগে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। মুসল্লিরা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত করতে মসজিদে ওজুর স্থানে সাবান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে। মসজিদের প্রবেশ পথে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান ও পানি রাখতে হবে। প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং অজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। ঈদের নামাজের জামাতে আগত মুসল্লিকে অবশ্যই মাস্ক পরে মসজিদে আসতে হবে। মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না। ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে। এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে। শিশু, বয়োবৃদ্ধ, যেকোনও অসুস্থ ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।

এদিকে এবারের পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ ঈদগাহ বা উন্মুক্ত স্থানের পরিবর্তে মসজিদে আদায় করার আহবান জানিয়ে ঈদের জামাত আয়োজনে ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। সিএমপির দেওয়া ১৩ দফা নির্দেশনাগুলো হলো—

১. মুসল্লিদের জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে এবছর ঈদের নামাজের জামায়াত ঈদগাহ বা খােলা জায়গার পরিবর্তে নিকটস্থ মসজিদে আদায় করার জন্য অনুরােধ করা হলাে । প্রয়ােজনে একই মসজিদে একাধিক জামায়াতের আয়োজন করা যাবে।

২.ঈদের নামাজের জামায়াতের সময় মসজিদে কার্পেট বিছানাে যাবে না । নামাজের পূর্বে সম্পূর্ণ মসজিদ জীবানুনাশক দ্বারা পরিস্কার করতে হবে । মুসল্লীগন প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে জীবাণুমুক্ত করে জায়নামাজ নিয়ে আসবেন ।

৩. করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রােধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে অজুর স্থানে সাবান/হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখতে হবে ।

৪.মসজিদের প্রবেশদ্বারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার/হাত ধােয়ার ব্যবস্থাসহ সাবান-পানি রাখতে হবে।

৫. প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসা থেকে অজু করে মসজিদে আসতে হবে এবং ওজু করার সময় কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে।

৬. ঈদের নামাজের জামায়াতে আগত মুসল্লীকে অবশ্যই মাস্ক এবং নিজস্ব টুপি পরে মসজিদে আসতে হবে । মসজিদে সংরক্ষিত জায়নামাজ ও টুপি ব্যবহার করা যাবে না ।

৭. ঈদের নামাজ আদায়ের সময় কাতারে দাঁড়ানাের ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে ।

৮. এক কাতার অন্তর অন্তর কাতার করতে হবে ।

৯. শিশু, বায়ােবৃদ্ধ বা যে কোন অসুস্থ্য ব্যক্তি এবং অসুস্থদের সেবায় নিয়ােজিত ব্যক্তি ঈদের নামাজের জামায়াতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না ।

১০. সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিত কল্পে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ , স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী বাহিনীর নির্দেশনা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।

১১. করােনা ভাইরাস সংক্রমণ রােধ নিশ্চিতকল্পে মসজিদে জামায়াত শেষে কোলাকুলি এবং পরষ্পর হাত মেলানাে পরিহার করার জন্য অনুরােধ করা যাচ্ছে ।

১২. করােনা ভাইরাস মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পবিত্র ঈদ – উল – ফিতরের নামাজ শেষে দোয়া করার জন্য খতিব ও ইমামগণকে অনুরােধ করা যাচ্ছে ।

১৩. সম্মানিত খতিব, ইমাম এবং মসজিদ পরিচালনা কমিটি বিষয়গুলাে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন ।

এছাড়া সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা সংক্রান্তে মসজিদে ঈদের নামাজের জামায়াত আদায়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় সহযোগিতার জন্য নিকটস্থ থানার অফিসার ইনচার্জ এর সাথে যোগাযোগ করতে অথবা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের হটলাইন মোবাইল নম্বরে(০১৪০০-৪০০৪০০, ০১৮৮০-৮০৮০৮০) যোগাযোগ করার জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানিয়েছে সিএমপি।

ঈদ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে গণজমায়েত এড়িয়ে ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করার আহ্বান জানান তারা। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রোববার (২৪ মে) এক বাণীতে এই আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ঈদুল ফিতর মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা ও সংযম পালনের পর অপার খুশি আর আনন্দের বার্তা নিয়ে আমাদের মাঝে সমাগত হয় পবিত্র ঈদুল ফিতর। এদিন সব শ্রেণিপেশার মানুষ এক কাতারে শামিল হন এবং ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেন। ঈদ সবার মধ্যে গড়ে তোলে সৌহার্দ, সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন।

তিনি আরও বলেন, ইসলাম শান্তি ও কল্যাণের ধর্ম। এখানে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানির কোনও স্থান নেই। মানবিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক সহাবস্থান, পরমতসহিষ্ণুতা ও সাম্যসহ বিশ্বজনীন কল্যাণকে ইসলাম ধারণ করে। বিশ্বব্যাপী নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এ বছর ঈদুল ফিতর ভিন্ন প্রেক্ষাপটে পালিত হবে। এ কঠিন সময়ে আমি সমাজের স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গের প্রতি দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। একইসঙ্গে আমি দেশবাসীর প্রতি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে ঈদুল ফিতর উদযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি।
ঈদ উপলক্ষে এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মুসলিম জাহানের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমি দেশবাসী ও বিশ্বের সকল মুসলমানদের জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ঈদ মোবারক। ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মেলবন্ধন পরিব্যক্তি লাভ করুক—এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অস্বাভাবিক পরিবেশে এবার ঈদুল ফিতর উদযাপন করছি। করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। এক অদৃশ্য ভাইরাস মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে। এই বিপদের সময় আমাদের স্বাস্থ্যকর্মী, ডাক্তার, নার্স, পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ যারা জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা করে যাচ্ছেন তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের এই মহামারিতে অনুরোধ করবো, যথাসম্ভব গণজমায়েত এড়িয়ে আমরা যেন ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করি এবং আল্লাহর দরবারে বিশেষ দোয়া করি যে এই সংক্রমণ থেকে আমরা সবাই দ্রুত মুক্তি পাই।

মাতৃভূমি বাংলাদেশ ও মুসলিম উম্মাহর উত্তরোত্তর উন্নতি, সমৃদ্ধি ও অব্যাহত শান্তি কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!