দেড় হাজার নথি তলব হাইকোর্টের, বিপাকে কাস্টমস

কাস্টমসের কাছে প্রায় ২০ বছর আগের মামলার প্রায় দেড় হাজার নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। তবে পুরানো ওইসব মামলার নথি কাস্টমসের কাছে সংরক্ষণ নেই। এতে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, মামলার নথিগুলো পাঠানো তো দূরে থাক, ওই সব মামলা নিয়ে কাস্টমসের কাছে কোন তথ্যই নেই। কারণ গত ২০ বছর ধরে কয়েক ধাপে ধ্বংস করা হয়েছে অনেকগুলো নথিপত্র। এতে হাইকোর্ট তলব করা বেশির ভাগ মামলার নথিও রয়েছে।

কাস্টমস সূত্র জানায়, হাইকোর্টে চলমান মামলাগুলোর কাগজপত্র কাস্টমসের কাছে জমা রয়েছে। কিন্তু যেসব মামলার নথি চাওয়া হচ্ছে তা ২০ বছরের আগের। এতো পুরানো নথি সংরক্ষণের প্রশ্নই আসে না। ফলে দীর্ঘ ২০ বছর মামলাগুলো সচল না থাকার কারণে ধ্বংস তালিকায় চলে গেছে অনেক নথি। এই ধরণের একটি মামলা- কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট আপীলাত ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলা নং- আপিল মামলা –কাস ২৮৫/২০০২। যার বাদি চট্টগ্রামের ফিরিঙ্গি বাজারের মেসার্স মিজান এন্ড ব্রাদার্স। ওই মামলার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ৬ এপ্রিল দুপুর ২টায়। মামলাটি পরিচালনার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমসকে আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে নথি জমা দিতে বলা হয়েছে। চিঠিতে প্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য অতিরিক্ত বেঞ্চ-৩ এর অফিস সহকারী/পেশকার মোহাম্মদ তবিবর রহমানের সাথে যোগাযোগ করতেও বলা হয়েছে।

অপর একটি মামলার নম্বর ৫৫১/২০০১। যার বাদি ঢাকার তেজগাঁওয়ের মেসার্স নাবিষ্ক বিস্কুট এন্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি লিমিটেড। আগামী ১ মার্চ এটির শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। অতিরিক্ত বেঞ্চ-৩ এর রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষারিত নোটিশের কপি মামলা বাদি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও চট্টগ্রাম কাস্টমসের আইন শাখায় পাঠানো হয়েছে।

শুধু এই দুইটি মামলা নয়, এ ধরণের প্রায় ১ হাজার ৫০০ মামলার নথি চাওয়া হয়েছে কাস্টমসের কাছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল আলম বলেন, ‘পুরানো মামলাগুলো নিষ্পত্তি করার জন্য মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন হয়তো। কারণ পুরাতন মামলাগুলো ঝুলে থাকার চেয়ে শেষ হয়ে যাওয়া উত্তম। তবে এ সমস্ত মামলা আমাদানিকারক বা ব্যবসায়ীরা বাদি। কাস্টমসের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কিছু নেই মামলাগুলোতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কাস্টমসে জমে থাকা বেশ কিছু নথি আমরা সম্প্রতি ধ্বংস করেছি। তবে যেসব মামলা চলমান তা আমরা সংরক্ষিণ করি। আমার বিশ্বাস মামলা থাকলে নথিও আছে। সাময়িক শুল্কায়ন আছে, ব্যাংক গ্যারান্টি আছে, আন্ডার ট্রেকিং আছে এসব মামলার ফাইল আমরা ধ্বংস করি না। এখন হাইকোর্ট যে সব মামলার নথি চাচ্ছে সেগুলো অনেক দিনের পুরনো। আমাদের খুঁজে দেখতে হচ্ছে ফাইলগুলো আমাদের কাছে আছে কিনা। যা পাওয়া যাবে তা হাইকোর্টের কাছে পাঠানো হবে।’

চট্টগ্রাম কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘যে মামলাগুলো চলমান নেই সেসব মামলার কপি বা নথি সংরক্ষণ করে না কাস্টমস হাউস। ফলে প্রায় ২০ বছরে পুরনো নথি তলব করা হলে তা কিভাবে আমরা জমা দিব?’

জানা গেছে, হাইকোর্টের আপিল ট্রাইবুনাল থেকে চাওয়া মামলাগুলোর শুল্ক-কর সব আদায় হয়েছে। হয়ত অতিরিক্ত শুল্ক-কর আদায় হয়েছে এ ভেবে আমদানিকারক আপিল বিভাগে মামলা করেছে। পরবর্তীতে দেখা গেল, কিছু দিন মামলা চালিয়ে আর যোগাযোগ করেনি সংশ্লিষ্ট আমদানিকারক। ফলে মামলাগুলো হাইকোর্টের ওই বিভাগে অলস পড়েছিল। তবে, গত ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস বেশ কিছু পুরাতন নথি ধ্বংস করেছে। এর আগে ২০০৪ সালেও ধ্বংস হয় নথি। এর মধ্যে যে সব মামলা চলমান নেই সেসব মামলার নথিও ধ্বংস করা হয়েছে। তাই পুরাতন মামলার কোন নথিই কাস্টমসের কাছে সংরক্ষিত নেই।

কাস্টমসের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২১ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টমসের মোট ১১ হাজার ৬৮৩টি মামলা চলমান আছে বিভিন্ন আদালতে। হাইকোর্ট বিভাগে চলমান রিট মামলা ৬ হাজার ৬৯৯, আপিল কমিশনারেটের দপ্তরের বিচারাধীন মামলা ১৬৮টি, আপীল ট্রাইবুনালে ২ হাজার ৪৯৭, হাইকোর্ট বিভাগে ট্রাইব্যুনালে রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৬৭১, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৯১, নিষ্পত্তি হওয়া (কিন্তু নথি আসেনি) মামলা ১৫৫৭টি।

এসএ/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!