দেশের ৬৪ জেলায় মডেল মন্দির নির্মাণের দাবি

জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি মডেল মন্দির নির্মাণের দাবি জানিয়েছে শ্রীশ্রী জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ বাংলাদেশ-কেন্দ্রীয় কমিটি।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি শিল্পপতি সুকুমার চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘বিগত বছরে শারদোৎসবে কুমিল্লার পূজামণ্ডপে মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর রংপুর, পঞ্চগড় এবং চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক জেএম সেন হলসহ দেশের বিভিন্ন পূজোমণ্ডপে ভাঙচুর এবং সনাতনী সমাজের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়েছে এবং কয়েকজন নিরীহ সনাতনী ভক্তকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যা পুরো বিশ্বের বিবেকবান মানুষকে নাড়া দিয়েছে। পরিষদ এসব নারকীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার তীব্র প্রতিবাদ এবং ঘটনার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’

দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪টি মডেল মন্দির নির্মাণ, সারাদেশে বেদখল হওয়া মঠ-মন্দির ও দেবোত্তর সম্পত্তি উদ্ধার এবং সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন, সাম্প্রদায়িক হামলায় বিধ্বস্ত মঠ-মন্দির, ঘরবাড়ি সরকারি উদ্যোগে রামুর বৌদ্ধ বিহারের ন্যায় সেনাবাহিনী দ্বারা দ্রুত পুনঃনির্মাণ, এরশাদ সরকারের আমলে সৃষ্ট বাংলা নববর্ষের তারিখ বিভ্রাটের অবসানে পঞ্জিকা মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে ৪ দিনের সরকারি ছুটিসহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের আওতায় বার্ন হাসপাতাল নির্মাণে প্রাচীন শ্রীশ্রী রাধাগোবিন্দ মন্দির ও মন্দিরের স্থাপনাসমূহ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান তিনি।

শিল্পপতি সুকুমার চৌধুরী বলেন, ‘নড়াইলে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ তপন কুমার সরকারকে প্রকাশ্যে জুতার মালা পরিয়ে যে হেনস্ত এবং সাভারের আশুলিয়ায় স্কুল শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ এবং জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির আওতায় আনতে সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘বিগত ৪০ বছর ধরে জন্মাষ্টমী পরিষদ- সাড়ম্বরে বিভিন্ন কর্মসূচির আলোকে জন্মাষ্টমী পালন করে আসছে। এবছরও বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতায় মহাসাড়ম্বরে এবং মহামর্যাদায় জন্মাষ্টমী উৎসব উদযাপিত হবে।’

Yakub Group

তিনি আরও বলেন, ‘অব্যাহত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক শক্তির ক্রমবর্ধমান এদেশের সনাতনী সম্প্রদায়ের জনজীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এই মুহূর্তে তারা এক ভীতিকর পরিবেশ-পরিস্থিতির মুখোমুখি। দুঃখের সাথে বলতে হয়, আগামী সংসদ নির্বাচনের চার মাস আগেও সরকারের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই। এতে আমরা হতাশ ও বিষ্মিত। আমরা এ মুহূর্তে সরকারি প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন এবং আগামী নির্বাচনে আনুপাতিক হারে সংসদে সনাতনী সম্প্রদায়সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের জন্য আসন বরাদ্দ রাখার জোর দাবি জানাচ্ছি।’

সংবাদ সম্মেলেন জানানো হয়, পাঁচদিনব্যাপী আয়োজনমালায় রয়েছে—৫ সেপ্টেম্বর রহমতগঞ্জের রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণে সন্ধ্যা ৭টায় গীতা পাঠের মাধ্যমে মহতী মঙ্গলযজ্ঞের শুভ সূচনা। ৬ সেপ্টেম্বর সকাল ৯টায় ঐতিহাসিক বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রার উদ্বোধন, দুপুর ১২টায় মাতৃ সম্মেলন, বিকেল ৩টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিকেল ৫টায় সনাতন ধর্মমহাসম্মেলন, রাতে মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস, ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর মহানামযজ্ঞের শুভারম্ভ ও ষোড়শ প্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞ এবং ৯ সেপ্টেম্বর ভোরে মহানামযজ্ঞের পূর্নাহুতি। এছাড়া ৭ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পরিষদ নেতাদের সাক্ষাৎ।

এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন।

এতে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তপন কান্তি দাশ, অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার ও বিমল কান্তি দে, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, মহানগর জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক লায়ন শঙ্কর সেনগুপ্ত, পরিষদ কর্মকর্তা ডা. মনোতোষ ধর, সাধন ধর, লায়ন তপন কান্তি দাশ, প্রকৌশলী আশুতোষ দাশ, কাউন্সিলর জহরলাল হাজারী, শৈবাল দাশ সুমন, মহিলা কাউন্সিলর নিলু নাগ ও রুমকি সেনগুপ্ত, দেবাশীষ নাথ দেবু, সুমন দেবনাথ, সুমন মজুমদার, তাপস কুমার নন্দী, ডা. বিধান মিত্র, রতন আচার্য্য, সলিল কান্তি গুহ, সনজিত বৈদ্য, এস প্রকাশ পাল, সজল দত্ত, রাহুল দাশ, রাজীব দত্ত রিংকু ও পণ্ডিত গদাধর দাশ ব্রহ্মচারী।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!