দুর্যোগের এমন দিনেই ঈদ মার্কেটে উপচেপড়া ভিড়!

দরজায় কড়া নাড়ছে ঈদ। তবে এবারের ঈদটা ভিন্নরকমের। মানুষের মুখে নেই হাসি, তবুও তো অবুঝ সন্তানকে দিতে হবে ঈদের জামা। কোলের শিশু তো বুঝে না “করোনা বা আম্ফান” তার চাই নতুন জামা।

দুই সন্তানকে নিয়ে কেনাকাটা করতে আসেন শাহনাজ আকতার (ছদ্মনাম)। বড় মেয়ে মায়ের হাত ধরে হাঁটছে আর ছোট ছেলে কোলে। নিজে ও বড় মেয়ে মাস্ক পরা। ছোট ছেলের সুরক্ষার নেই কোনো ব্যবস্থা। প্রতিবেশিরা কেনাকাটা করেছে তাই দেখে বড় মেয়ের কান্নাকাটি করছে। এ জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছেন।

করোনা সংক্রমণের মধ্যেও চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী রুস্তমহাট হাজী ইমাম শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতাদের ভিড়ের সাথে বেড়েছে করোনা আতঙ্ক। সারি সারি দোকান ভিতর গলিতে হাঁটার সুযোগ নেই বললে চলে। প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যেই চলছে ঈদের কেনাবেচা। এ সুযোগে দোকানিরাও হাঁকাচ্ছে কাপড়ের অতিরিক্ত দাম এমনটায় অভিযোগ ক্রেতাদের।

প্রাঘাতি করোনাকে তোয়াক্কা না করে শিশুদেরও নিয়ে কেনাকাটা করছেন অভিভাবকরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য বিধিও মানছেন না কেউ। এ জন্য জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এদিকে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনায় উপজেলার কয়েকটি শপিংমল বন্ধ রাখা হলেও এসব শপিংমল বন্ধ না রাখায় বাড়ছে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি। যার কারণে বাড়তে পাড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের রোগীর সংখ্যাও।

বুধবার (২১ মে) সরেজমিনে উপজেলার বটতলী রুস্তমহাট হাজী ইমাম শপিং কমপ্লেক্সে ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দোকান খোলা রাখার অনুমতি থাকলেও বেশিরভাগই খোলা ছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত। এসব এলাকার বেশিরভাগ দোকানেই স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায় নি। শপিংমলে প্রবেশে সকাল থেকেই দেখা যায় দীর্ঘ লাইন। মানা হয়নি সামাজিক দূরত্ব ও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি। অসচেতন ক্রেতারা ঝুঁকি নিয়েই কেনাকাটা করছেন। রাস্তার দু’পাশে ফুটপাথেও বসেছে অস্থায়ী দোকান। সেখানের চিত্র আরও খারাপ। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা তো দূরের কথা, কারও কাছে নেই কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা।

মার্কেটের ফটকে দায়িত্ব পালনরত নিরাপত্তাকর্মী বলেন, মার্কেটে প্রবেশের আগে সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, জীবাণুনাশক স্প্রে করার ব্যবস্থা ছিলো। সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্যও অনুরোধ করা হচ্ছে। গরম আর মানুষের ভিড়ে সব উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। কোনোকিছুই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হচ্ছে। কেউ মানেন আর, কেউ মানছেন না। অনেক সময় পরিবারের অনেক সদস্য একসঙ্গে দোকানে ঢুকছেন। তখন তো আমাদের কিছু বলার থাকে না।

শপিং করতে আসা শাহনাজ আকতকর নামে এক নারী ক্রেতা বলেন, ঈদ নয় প্রয়োজনের তাগিদে মার্কেটে এসেছি। এসে দেখি মানুষে মার্কেট সয়লাব হয়ে গেছে। এ সুযোগে দোকানীরাও কাপড়ের অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছে। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার বাজারে নতুন তেমন কোনো কালেকশন নেই। পুরাতন মডেলের জামা কাপড়, লেহাঙ্গা, থ্রিপিস, শার্ট ও শিশুদের বস্ত্র বিক্রি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের এত চাপ যে ইচ্ছে করলেই সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। অনেকে মাস্ক ছাড়ই বাজারে এসেছেন।

সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশনা মেনে শপিংমল ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে বলে জানানো হয়। কিন্তু এখন মালিকদের মধ্যে দোকান খোলা ও না খোলা নিয়ে এক ধরনের সিদ্ধান্তহীনতা দেখা দিয়েছে। এ দুটি শপিংমল না খোলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ৮ লক্ষ টাকা দোকান ভাড়াও মওকুফের ঘোষণা করেন শপিং কমপ্লেক্সের মালিক মোহাম্মদ জামাল সওদাগর। সিদ্ধান্তের একদিন পরই ক্রেতাদের ভীড় দেখে খুলে দেন এ শপিংমলটিও। এতে দোকান এবং শপিংমলের মালিকদের সিদ্ধান্তহীনতা অভাব বলেও মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। মার্কেট ও দোকানপাট খোলার কারণে সড়কে বেড়েছে বিভিন্ন যানবাহনে উপস্থিতি। ফুটপাতে বসেছে ভ্রাসমান দোকানিরা।

বটতলী হাজী ইমাম শপিং কমপ্লেক্সের স্বত্বাধিকারী হাজী জামাল উদ্দিন সওদাগর বলেন, করোনা ভাইরাস উদ্বেগজনক হারে বিস্তারের কারণে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে ব্যবসায়ীসহ সর্বসম্মতক্রমে শপিংমলের ১০৫টি দোকান ঈদের আগ পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছোট বড় ব্যবসায়ীদের দুই মাসের ভাড়া বাবদ ৮ লক্ষ টাকা মওকুফের ঘোষণা দিয়েছিলাম। কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ীরা উপজেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়ে দোকানপাট খুলছে। তবে আমিও জানিয়ে দিয়েছি মার্কেটের ঝুঁকি এবং যাবতীয় খরচ তাদের বহন করতে হবে।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ জোবায়ের আহমেদ বলেন, সরকারিভাবে যে ঘোষণা হয়েছে, সেভাবেই দোকানপাট খুলতে হবে। সামাজিক দূরুত্ব বিষয়ে সবাইকে খেয়াল রাখার বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!