দুর্নীতিবাজ জাহাঙ্গীরের পদত্যাগ চেয়ে চট্টগ্রামের ডায়াবেটিক হাসপাতালে বিক্ষোভ

চার কর্মকর্তার পদত্যাগ

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে স্বেচ্ছাচারিতা, স্বজনপ্রীতি ও সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ‘সভাপতি’ জাহাঙ্গীর চৌধুরীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১৪ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

শনিবার (৫ অক্টোবর) দুপুর থেকে চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলীর ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালে এ বিক্ষোভ চলে।

এদিকে বিক্ষোভের মুখে হাসপাতালের পরিচালক নওশাদ আজগর চৌধুরী, জাহাঙ্গীর চৌধুরী ভাতিজা প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা আমান উল্লাহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল এবং প্রধান নিরীক্ষা কর্মকর্তা ইয়াছিন চৌধুরীসহ চার কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল বারবার আলোচনায় আসছিল গত কয়েক বছর ধরে। বিশেষ করে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাসপাতাল ফান্ডের অর্থ কেলেঙ্কারি, সরকারি অনুদানের অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়মের প্রতিবাদ করায় ৪৩ স্টাফের চাকরিচ্যুতি, অনুমতি ছাড়া নিজের ইচ্ছায় অবৈধ ভবন নির্মাণ, স্বজনপ্রীতি করে ৪৬ আত্মীয়কে চাকরি দেওয়াসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। এরপর ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি সমাজসেবা অধিদপ্তর দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর চৌধুরীসহ কমিটির সব সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পরে বিভাগীয় সমাজসেবা কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মোস্তফা মোস্তাকুর রহিম খানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও সাত দিনের মাথায় দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন তিনি।

এদিকে হাসপাতালটিতে চলমান বিক্ষোভে আন্দোলনকারী চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ১৪ দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে— জাহাঙ্গীর চৌধুরী ও তার আত্মীয়করণ থেকে ডায়াবেটিক হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুক্তি, স্বাধীনভাবে কাজ করা এবং ২৪ বছরের প্রভিডেন্ট ফান্ডের হিসাব প্রদান, প্রত্যেক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আলাদা আলাদা পাশ বইয়ের ব্যবস্থা করা, চিকিৎসক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছ থেকে প্রগতি ইন্সুরেন্সের নামে কেটে নেওয়া টাকার হিসাব এবং লভ্যাংশসহ টাকা ফেরত, অবসরকালে অর্জিত ছুটিসহ অবিলম্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রাচ্যুয়িটি চালু করা, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনভাতা বৃদ্ধি করা, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মেডিকেল ভাতা ১৫০০ টাকা এবং যাতায়াত ভাতা ১৫০০ টাকায় উন্নীত করা।

দাবির মধ্যে আরও রয়েছে— কথায় কথায় চাকরিচ্যুতি বন্ধ করা এবং যাদের অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতি করা হয়েছে তাদের সকলকে স্বপদে চাকরিতে বহাল করা, জাহাঙ্গীর চৌধুরীর সীমাহীন দুর্নীতির তদন্ত এবং তার পরিবারের সদস্যদের কাছে হাসপাতালের বকেয়া পাওনা কয়েক লক্ষ টাকা হাসপাতালের ফান্ডে অবিলম্বে ফেরত দেওয়া, হাসপাতালের ফার্মেসি থেকে নেওয়া জাহাঙ্গীর চৌধুরী পরিবারের সদস্যদের কয়েক লক্ষ টাকার ইনসুলিন ও ওষুধের বকেয়া টাকা হাসপাতালের ফান্ডে ফেরত দেওয়া, হাসপাতালের দৈনিক আয় ১০ লাখ টাকার ওপরে হলেও হাসপাতালের ফান্ডে এফডিআর না থাকার ঘটনার তদন্ত, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে ২ কোটি টাকার অনুদান হাসপাতালের ফান্ডে জমা না দিয়ে জাহাঙ্গীর চৌধুরীর ব্যক্তিগত ফান্ডে কেন জমা হলো— তার তদন্ত এবং সমুদয় টাকা হাসপাতালের ফান্ডে জমা দেওয়া।

এছাড়া দাবির মধ্যে রয়েছে— প্রতিবার বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে থেকে চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক হাসপাতাল থেকে জাহাঙ্গীর চৌধুরী কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্ত করা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মোতাবেক সাড়ে ২৭ লক্ষ টাকা জাহাঙ্গীর চৌধুরীকে ডায়াবেটিক হাসপাতালের ফান্ডে জমা দেওয়া এবং অবিলম্বে সমাজসেবা অধিদপ্তর জেলা প্রশাসকের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm