দুবাইয়ের ড্যান্সবারে হাজারেরও বেশি নারী পাচারে চট্টগ্রামের আজম খান

এক হাজারেরও বেশি নারীকে কাজ দেওয়ার নামে যৌনকর্মে বাধ্য করতেন আজম খান নামের এক ব্যক্তি। সারাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে নারীদের সংগ্রহ করতেন আজম। হোটেলে কাজ দেওয়ার কথা বলে তাদের জোর করে ড্যান্সবার ও যৌনকর্মে বাধ্য করা হতো। একেকজনকে ৫০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার কথা বলে ওই নারীদের পাচার করা হয় দুবাইয়ে।

আজম খানের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। দুবাইয়ে নারীপাচার চক্রে তার আরও দুই ভাই জড়িত রয়েছে। দুবাইয়ে চার তারকাযুক্ত তিনটি ও তিন তারকাবিশিষ্ট একটি হোটেলের মালিক অভিযুক্ত এই আজম খান। তার মালিকানাধীন হোটেলগুলো হলো ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্র্যান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ার।

আরব আমিরাতের দুবাই থেকে পুলিশের তাড়া খেয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সেই ‘গডফাদার’ আজম খানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে কখন ও কোন্ জায়গা থেকে আজম খানকে ধরা হয়েছে সে তথ্য জানায়নি সিআইডি।

দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার আজম খান।
দুই সহযোগীসহ গ্রেপ্তার আজম খান।

রোববার (১২ জুলাই) ঢাকায় সিআইডির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অর্গানাইজড ক্রাইমের ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সি, বিদেশি এয়ারলাইন্স ও গ্রেপ্তারের তথ্য পরে জানানো হবে।

নারীপাচার ও যৌনচক্রে জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে সম্প্রতি দুবাই পুলিশ আজম খান সম্পর্কে আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাসকে অবহিত করে। আরব আমিরাত আজম খানের পাসপোর্টও বাতিল করে দেয়। এরপরই দুবাইতে বাংলাদেশ দূতাবাস পাসপোর্ট রেখে আজম খানকে দেশে পাঠিয়ে দেয়। এক্সিট পাস নিয়ে বাংলাদেশে বাংলাদেশে এসেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।

এমন একজন অপরাধী দেশে ফিরে কী করে পালিয়ে যেতে পারলেন— এমন প্রশ্নে ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘একজন আসামিকে পাঠানো হচ্ছে সেটা পুলিশকে আগে জানানো হয়নি। এই সুযোগে আজম খান নতুন পাসপোর্ট করে দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছিলেন।’

দুবাইয়ে আজম খানের ফরচুন পার্ল হোটেলের ড্যান্সবার।
দুবাইয়ে আজম খানের ফরচুন পার্ল হোটেলের ড্যান্সবার।

কিছুটা দেরিতে হলেও সিআইডি আজম খানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি দুই সহযোগী হলেন আল আমিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড ও আনোয়ার হোসেন ওরফে ময়না। গত ২ জুলাই এই ঘটনায় সিআইডি বাদী হয়ে লালবাগ থানায় মামলা করেছে। পাচারের শিকার নারীরা ইতিমধ্যে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

সিআইডি বলছে, গডফাদার আজম খান সারাদেশ থেকে দালালের মাধ্যমে নারীদের সংগ্রহ করতেন আজম। হোটেলে কাজ দেওয়ার কথা বলে জোর করে ড্যান্সবার ও যৌনকর্মে বাধ্য করা হতো ওই নারীদের। একেকজনকে ৫০ হাজার টাকা করে বেতন দেওয়ার কথা বলে নারীদের দুবাইয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। একাধিক ট্রাভেল এজেন্সি ও বিদেশি কিছু বিমান সংস্থা এই কাজে আজম খানকে সহযোগিতা দিতো।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির বাসিন্দা আজম খানের বিরুদ্ধে দেশেও ছয়টি হত্যা মামলাসহ ১৫টি মামলা রয়েছে। তার নারীপাচার ও যৌন নেটওয়ার্কে তিনি ছাড়াও দুবাইয়ে তার আরও দুই ভাই জড়িত। ভারত ও পাকিস্তানভিত্তিক কয়েকটি দল আজম খানের সঙ্গে যুক্ত আছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!