ফাঁসির দণ্ড পেয়ে দুবাই পালিয়ে যাওয়া খুনের আসামিকে সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করলেন দুবাই ও উত্তর আমিরাতে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান। এমন ঘটনায় দুবাইয়ে স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সামাজিত যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকে হয়ে ওঠেন সমালোচনামুখর।
গত ১১ নভেম্বর বিকেলে কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান বাংলাদেশ কনস্যুলেটের হলরুমে আরব আমিরাত বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এদের সকলে স্থানীয় বিএনপির ‘জাকির গ্রুপ’ নামে পরিচিত। আরব আমিরাত বিএনপির আহবায়ক জাকির হোসেন ও যুগ্ম আহবায়ক আবদুস সালাম তালুকদার ছাড়াও এতে বিএনপি নেতা সেজে উপস্থিত ছিলেন হাজী সেলিম খান নামের এক ব্যক্তি। ওই বৈঠক দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে চলে। এ সময় বিএনপি প্রতিনিধিরা কনসাল জেনারেলকে জাতীয়তাবাদী চেতনার লোকজন নিয়ে ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি’ গঠনের পরামর্শ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুবাই কনসুলেট জেনারেলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত হাজী সেলিম খান নামের ওই ব্যক্তির প্রকৃত নাম শওকত। তবে দুবাইয়ে তাকে সবাই ‘শেখ সেলিম’ নামেই চেনে। তিনি ঢাকার আলোচিত হত্যাকাণ্ড ওয়ার্ড কমিশনার আলিম হত্যার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিকেলে মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার পথে ঢাকার আজিমপুর রোডে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন ঢাকার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও আওয়ামী লীগ নেতা হাজি মো. আলীম। হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। এ নিয়ে লালবাগ থানায় মামলা হওয়ার পর পুলিশ তদন্ত শেষে আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
হত্যাকাণ্ডের প্রায় ১৮ বছর পর ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আলিম হত্যা মামলায় আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে রয়েছেন শওকত ওরফে হাজী সেলিম খান ওরফে শেখ সেলিম। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে হাজির না থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। রায়ে বলা হয়, পলাতক আসামিরা গ্রেপ্তার অথবা আত্মসমর্পণ করার পর তাদের বিরুদ্ধে এই রায় কার্যকর হবে।
জানা গেছে, ফাাঁসির দণ্ড পাওয়ার বছরদুয়েক পালিয়ে থাকার পর শওকত ওরফে হাজী সেলিম খান আরব আমিরাতের দুবাইয়ে পালিয়ে যান। পরে আমিরাতের আজমানে একটি স্টিল ওয়ার্কসপ গড়ে তোলেন।
শওকত ওরফে হাজী সেলিম খান আরব আমিরাত বিএনপির জাকির হোসেনের প্রশ্রয়ে এখন বিএনপি নেতা সাজলেও খুনের মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ছিলেন ঢাকার লালবাগ থানা শ্রমিক লীগের সভাপতি ও বঙ্গবাজার আওয়ামী লীগের প্রার্থী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক। জানা গেছে, ঢাকা ৬২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। ১৯৮১ সাল ও ২০০৮ সালে লালবাগে সমাবেশে গিয়ে শওকত ওরফে শওকত ওরফে হাজী সেলিম খানের বাড়িতেও যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।