দুদকের নিশানায় ১১৮, তালিকায় চট্টগ্রামের আরও নতুন মুখ

অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান

১১৮ ব্যক্তির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে চট্টগ্রামেরও রয়েছেন বেশ কয়েকজন। ইতিমধ্যে তাদের বিস্তারিত তথ্য জানতে বাংলাদেশ ফাইন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সহযোগিতা চেয়েছে দুদক।

চলমান শুদ্ধি অভিযানের অংশ হিসেবে যেসব ব্যক্তির অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে, তার মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই জসিম উদ্দিন মন্টু, স্ত্রী ও তিন ছেলেসহ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী ছাড়াও তালিকায় রয়েছেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।

এছাড়া তালিকায় রয়েছেন চার সংসদ সদস্য ও সাবেক এক সাংসদ। ঠিকাদারদের শুরুতেই রয়েছেন জি কে শামীম। দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা ভরেছে গণপূর্ত অধিদফতরের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তায়। আছেন ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক দুই কাণ্ডারী রেজওয়ান-রব্বানীও। ক্যাসিনোর মূল হোতারা ছাড়াও তালিকায় আছে প্রবাসের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী। আওয়ামী লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক দল বেশ কয়েকজন নেতাও অনুসন্ধানের তালিকায় আছেন। তবে পুরো তালিকায় একচেটিয়া প্রাধান্য যুবলীগ নেতাদের।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গঠিত সাত সদস্যের অনুসন্ধান টিম এরই মধ্যে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেছে। দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন এই টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

দুদকের অনুসন্ধানে চট্টগ্রামের যারা
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করছে, সেই তালিকায় যথারীতি রয়েছেন জাতীয় সংসদের হুইপ, চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব ও চট্টগ্রামের পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, যুবলীগের সাবেক সভাপতি চট্টগ্রামের রাউজানের বাসিন্দা ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির চৌধুরী ও ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরী। এদের সঙ্গে যুক্ত হলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ও চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর।

বহুল আলোচিত সেই ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ সেন্টার
বহুল আলোচিত সেই ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ সেন্টার

বান্দরবানের সিলভান ওয়াই রিসোর্ট
দুদকের অনুসন্ধান তালিকায় রয়েছেন বান্দরবানের বহুল আলোচিত ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ সেন্টারের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন মন্টু। তিনি চট্টগ্রাম-১৪ চন্দনাইশ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ছোট ভাই। দুদকের তালিকায় আরও রয়েছেন ওই রিসোর্টটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপন, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামিল উদ্দিন শুভ, পরিচালক এসএইচএম মহসিন, উম্মে হাবিবা নাসিমা আক্তার, জিয়াউদ্দিন আবীর এবং জাওয়াদ উদ্দিন আবরার।

এই রিসোর্টের অন্যতম প্রধান অংশীদার আলোচিত ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীম। বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে পর্যটনকেন্দ্র নীলাচলসংলগ্ন ছাইংঙ্গ্যাপাড়ায় ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা’ নামের রিসোর্টটি অবস্থিত। ৫০ একর এলাকাজুড়ে এতে অন্তত ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা যায়।

চার সাংসদ ও সাবেক একজন
দুদকের তালিকায় সংসদ সদস্য রয়েছেন চারজন। এরা হলেন জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম আবাহনী ক্লাবের মহাসচিব পটিয়া আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী, বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথ, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন ও তার স্ত্রী ফারজানা চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু ও তার স্ত্রী সায়মা আফরোজ এবং সাতক্ষীরার সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মুজিবুর রহমান।

ঠিকাদারের শুরুতেই জি কে শামীম
দুদকের তালিকায় শুরুতেই আছে গণপূর্ত অধিদফতরের ঠিকাদার জি কে শামীমের। এছাড়াও একে একে রয়েছেন পূর্ত অধিদফতরের ঠিকাদার তবিবুল হক তামিম, শিক্ষা অধিদফতরের ঠিকাদার মো. শফিকুল ইসলাম, পদ্মা অ্যাসোসিয়েটস ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের মালিক-ঠিকাদার মিনারুল চাকলাদার, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্সের মালিক-ঠিকাদার রেজোয়ান মোস্তাফিজ এবং নোয়াখালীর মেসার্স জামাল অ্যান্ড কোং-এর মালিক-ঠিকাদার জামাল হোসেন।

গণপূর্তে ভরা সরকারি কর্মকর্তাদের তালিকা
সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা দুদকের তালিকায় রয়েছেন, তারা হলেন গণপূর্ত অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদাত হোসেন ও রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী, উৎপল কুমার দে ও আবদুল হাই, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক মধু, নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত উল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী রোকনউদ্দিন, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল কাদের, নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আবদুল মোমিন চৌধুরী, নির্বাহী প্রকৌশলী ইলিয়াস আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা শাখার সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাজ্জাদ এবং গণপূর্ত সার্কেল-৪, ঢাকার উপ সহকারী প্রকৌশলী আলী আকবর হোসেন। তালিকায় নাম আছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলের উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলমের।

এছাড়া কমলাপুর আইসিডির কমিশনার আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান, সহকারী কমিশনার কানিজ ফারহানা শিমু, সহকারী কমিশনার আবুল কাশেম, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তুহিনুল হক ছাড়াও দুদকের তালিকায় নাম রয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. শহীদুল ইসলামের।

প্রবাসের দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী
ওমানে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী নাদিম এবং জার্মানিতে অবস্থানরত শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানও রয়েছেন দুদকের অনুসন্ধানে।

ক্যাসিনোর কাণ্ডারীরা
দুদকের তালিকায় আছেন ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূইয়া, বনানী গোল্ড ক্লাবের মালিক আবদুল আওয়াল ও আবুল কাশেম, কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসায়ী সেলিম প্রধান, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী জিয়া, শাহেদুল হক ও তার স্ত্রী সাবিনা তামান্না হক।

আছেন ছাত্রলীগের রেজওয়ান-রব্বানীও
ছাত্রলীগের যাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান চলছে, তারা হলেন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম সিদ্দিকী, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এফ রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং ঢাকা উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এসএম রবিউল ইসলাম সোহেল।

৫ আওয়ামী লীগ নেতা
গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন মিয়া, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রাশেদুল হক ভূইয়া, ঢাকার ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বাতেনুল হক ভূইয়া, হারুনুর রশীদ রয়েছেন দুদকের তালিকায়।

স্বেচ্ছাসেবক দলের যারা নজরদারিতে
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছারের স্ত্রী পারভীন সুলতানা, মেয়ে নুজহাত নাদিয়া নীলা, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কে এস মাসুদুর রহমান, তার বাবা আবুল খায়ের খান, মা রাজিয়া খান, স্ত্রী লুৎফুন নাহার লুনা।

একঝাঁক যুবলীগ
দুদকের তালিকায় যুবলীগের যারা রয়েছেন— যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ ও তার স্ত্রী সানজিদা রহমান, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট, সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূইয়া, প্রশান্ত কুমার হালদার, আফসার উদ্দিন মাস্টার, আয়েশা আক্তার, শামীমা সুলতানা, শেখ মাহামুদ জোনায়েদ, মো. জহুর আলম, এস এম আজমল হোসেন, ব্রজ গোপাল সরকার, শরফুল আওয়াল, ঢাকার মগবাজার টিঅ্যান্ডটি কলোনির জাকির, ঢাকার নয়াটোলার সেন্টু, ঢাকার বাড্ডার নাসির, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির বহিষ্কৃত দফতর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোমিনুল হক সাঈদ, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের বহিষ্কৃত সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহসভাপতি সরোয়ার হোসেন মনা, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহরাব হোসেন স্বপন, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন, যুবলীগ নেতা গাজী সরোয়ার বাবু, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সহসভাপতি মুরসালিক আহমেদ, তার মা আছিয়া বেগম, বাবা আবদুল লতিফ, স্ত্রী কাওছারী আজাদ, বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা কামরান প্রিন্স মোহাব্বত, যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মাকসুদুর রহমান, যুবলীগ নেতা আতিয়ার রহমান দীপু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান হোসেন খান, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক তসলিম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক কায়সার আহমেদ, যুবলীগ ঢাকা উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজুল ইসলাম চৌধুরী ওরফে বাপ্পী।

চার কাউন্সিলর
দুদকের তালিকায় রয়েছেন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের চার কাউন্সিলর। এরা হলেন— ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারিকুজ্জামান রাজীব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মঈনুল হক মঞ্জু।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!