‘দুদকের চোখ’ এবার রেলওয়ে কর্মকর্তা জোবেদা আক্তারে, এত সম্পদের উৎস খুঁজছে

রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সহকারী মহাব্যবস্থাপক জোবেদা আক্তারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দুটি অভিযোগ জমা পড়েছে। যার একটি রেলের ৮৬৩ জন খালাসী নিয়োগ সংক্রান্ত, অপরটি তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের।

খালাসী নিয়োগ দুর্নীতিতে জোবেদাসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও অপর অবৈধ সম্পদ অর্জন তদন্ত রিপোর্ট এখনো জমা দেয়নি দুদক।

জোবেদা আক্তারের পরিবারের নামে নির্মানাধীন বিলাসবহুল চারটি ফ্লাটের সন্ধান মিলেছে। দুদকের চোখ ফাঁকি দিতে বেনামী আরও ফ্ল্যাট থাকার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রামের ডবলমুরি থানার ১২ নম্বর কোয়ার্টার ডিটি রোডে ডায়মন্ড টাচ কমিউনিটি সেন্টার পাশে ১৪ তলা ভবনে জোবেদা আক্তার, তার স্বামী, পিতা ও ভাইয়ের নামে চারটি ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া যায়।

ওই ভবনের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার আবু তাহের জানান, ১৪ তলা ভবনে ১ হাজার ২৫০ বর্গ ফুটের মোট ৮০টি ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। যার মধ্যে জোবেদা আক্তার ও তার স্বামীর দুইটি ফ্ল্যাট রয়েছে।

জানা যায়, গত ২৮ মার্চ দুদক মানি লন্ডারিং আইনের ৪(২)সহ ১৯৪৭ সালের দুনীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২)ধারা মোতাবেক জোবেদা আক্তারসহ ১২জনের নামে রেলের ৮৬৩ জন খালাসী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগে মামলার অনুমতি পায়। মামলা দায়েরের পর জোবেদা আক্তারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এরপর তার বিরুেদ্ধ অবৈধ সম্পদের নানা অভিযোগ উঠে আসে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, জোবেদা আক্তারের পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে চারটি ফ্ল্যাট। যার মধ্যে তার নিজের একটি, স্বামী হুমায়ুন কবিরের একটি, বাবা গোলাম সারওয়ার একটি, ভাই মাঈন উদ্দিনের নামে একটি।

একই পরিবারের চার সদস্যের চারটি ফ্ল্যাট কেনার তথ্য দুদকের কাছে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে জোবেদা আক্তার উল্লেখ করলেও সরেজমিন অনুসন্ধানে মিলছে ভিন্ন তথ্য।

ইউনাইটেড সমিতির নামে ৭৬ জন সদস্য দেখিয়ে প্রায় সাড়ে ১৫ গণ্ডা জায়গা, প্রধান সড়কের সাথে লাগোয়া পাহাড়তলী ডায়মন্ড টার্চ কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন একটি জায়গার ক্রয়মূল্য দেখানো হয় ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অথচ স্থানীয়রা জানান, এই জমির দাম আরও কয়েকগুণ বেশি। জোবেদা আক্তারের স্বামী ওই জমিতে ভবন নির্মাণ কমিটির সভাপতি।

জানা গেছে, ইউনাইটেড সমিতির ব্যানারে সদস্যদের থেকে জন প্রতি নেওয়া হয়েছিল ১০ লাখ টাকা। সেই অনুযায়ী ৭৬ জনের টাকার পরিমাণ হওয়ার কথা ৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রায় ১৬ গণ্ডা জায়গা কিভাবে মাত্র ২ কোটি ৭০ লাখ টাকায় ক্রয় করা হলো তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

ওই জমির মালিক ও ভবনের সদস্য মোরশেদ আলম নামের রেলওয়ে এক ঠিকাদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুরুতেই আমাদের কাছ থেকে জমি ক্রয় বাবদ জমা নেওয়া হয় ১০ লাখ টাকা। প্রায় ২ বছর পর আমার টাকা প্রয়োজন হলে আমি সেই ফ্ল্যাটের জায়গা বিক্রি করে দিই। ভবন নির্মাণের জন্য কিস্তির মাধ্যমে আরও ৩০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। এই টাকা দিতে আমি অপারগ হওয়ায় আমি আমার অংশ বিক্রি করে দিই। এই ভবন নির্মিত হলে প্রতি ফ্ল্যাটের দাম হবে প্রায় কোটি টাকা।’

রেলওয়ের সাবেক অর্থ ও হিসাব কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমিও এখানকার ফ্ল্যাট সদস্য। এছাড়া ম্যানেজার আবু তাহেরও ফ্ল্যাট সদস্য। তিনি বলেন, জোবেদা ও তার স্বামীর দুইটি ফ্ল্যাট রয়েছে। মূলত ফ্ল্যাটের ওই দুই সদস্য শেখানো কথা বলছে বলেই প্রমাণ মিলেছে। কারণ দুদকের কাছে দেওয়া জোবেদার তথ্যে চারটি ফ্ল্যাটের উল্লেখ থাকলেও তারা বিষয়টি স্বীকার করেননি।’

এ বিষয়ে জোবেদা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ফোন এসএমএস দিলেও তিনি কোন রিপ্লাই দেননি।

দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সমিতির ৭৬ জনের নামে জায়গা ক্রয় ও জোবেদা আক্তারের পরিবারের চার জনের নামে চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জোবেদা আক্তার উল্লেখ করেন।’ তদন্তের স্বার্থে তিনি আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!