দুদকের গভীর নিরবতা চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডির বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে

কারণ জানতে চান হাইকোর্ট

বিদেশে অর্থপাচার ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে কেন তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হবে না— জানতে চাইলেন হাইকোর্ট।

এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেছেন।

চার সপ্তাহের মধ্যে এলজিআরডি সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, চট্টগ্রাম ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড, দুদকের বিভাগীয় পরিচালক এবং ফজলুল্লাহকে তার জবাব দিতে বলা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ইকরাম উদ্দিন খান চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. নওশের আলী মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

ইকরাম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর ১২ নভেম্বর আদালত এ কে এম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেসব অভিযোগের বিষয়ে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে বা আদৌ কোনো পদক্ষেপ নিয়েছে কি না, তা জানাতে বলেছিলেন। কিন্তু দুদক সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানাতে পারেনি। তাই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছেন।’

অন্যদিকে দুদকের আইনজীবী নওশের মোল্লা বলেন, ‘একেএম ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করেছে। এখন তদন্তের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। আদালতকে তা জানানোর পর আদালত রুল জারি করেছেন।’

একেএম ফজলুল্লাহ ১৯৬৮ সালে ওয়াসার সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে নিয়োগ পান। পরে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পূর্ণ মেয়াদে দায়িত্ব পালন শেষে ১৯৯৮ সালে অবসর নেন তিনি। এরপর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ২০০৯ সালের ৮ জুলাই তাকে এক বছরের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে চট্টগ্রাম ওয়াসা বোর্ড গঠন হলে তিনি প্রথম দফায় তিন মাসের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেলেও পরে পাঁচ দফায় পুনর্নিয়োগ পেয়ে গত ৯ বছর ধরে এ দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

৮০ বছর বয়সী ফজলুল্লাহকে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর আরও তিন বছরের জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগ উঠেছে, ফজলুল্লাহ চট্টগ্রাম ওয়াসায় কয়েক হাজার কোটি টাকার চলমান প্রকল্পে নিজের ক্ষমতা দীর্ঘমেয়াদে পাকাপোক্ত করতে অনুগত বোর্ড দিয়ে ওই নিয়োগের সুপারিশ করিয়েছিলেন।

এদিকে ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম ওয়াসার গ্রাহক চট্টগ্রামের মোমিন রোডের বাসিন্দা মো. হাসান আলী দুদকের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক বরাবর ‘চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ’র গুরুতর দুর্নীতি, অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি প্রসঙ্গে অভিযোগ’ শীর্ষক একটি আবেদন দেন। এতে তিনি বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর-প্রতিবেদনও উদ্ধৃত করেন।

কিন্তু সেসব অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুদকের নিষ্ক্রিয়তা এবং ফজলুল্লাহর পুনঃনিয়োগের সুপারিশ চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ২০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টে জনস্বার্থে রিট আবেদন করেন তিনি। এরপর আদালত তার শুনানি একমাস মুলতবি রেখে এই সময়ের মধ্যে দুদককে পদক্ষেপ জানাতে বলে। কিন্তু গত বছর ১২ নভেম্বর রিটটি ফের শুনানির জন্য উঠলেও দুদক সুনির্দিষ্টভাবে কিছু জানায়নি।

তবে দুদকের আইনজীবী আদালতে বলেন, ফজলুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি দুদক গুরুত্বের সাথে দেখছে। এ বিষয়ে অনুসন্ধানও চলছে। তখন আদালত রিট আবেদনটির শুনানি আবারও এক মাসের জন্য মুলতবি করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) রিট আবেদনটির প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!