বিএনপির দুই নেতার থাবায় নগর যুবদল হাঁটছে ছাত্রদলের পথেই!

যুবদলের থানা ও ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে নগর যুবদল আর নগর বিএনপির জড়িয়ে পড়েছে স্নায়ুযুদ্ধে। নগর বিএনপির শীর্ষ দুই নেতা ডা. শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্কর যুবদলের সদ্য ঘোষিত কমিটিগুলোতে নিজেদের পছন্দের লোক রাখতে না পেরে ক্ষিপ্ত। এ নিয়ে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে নগর বিএনপি ও নগর যুবদলের মধ্যে।

যুবদল নেতাদের দাবি যুবদলের কর্মসূচিতে সক্রিয়রাই পদ পেয়েছেন এবং থানা ও ওয়ার্ড কমিটিতে তাদেরই মূল্যায়ন হবে। ২৫ জুলাই কেন্দ্রীয় বিএনপির দপ্তর থেকে যুবদলের প্রতি নির্দেশনা এসেছিল নগর বিএনপির ‘সুপারিশ সাপেক্ষে’ কমিটি গঠন করতে। পরে এ নিয়ে সমালোচনার পর সেই নির্দেশনা পরিবর্তন হয়ে ৩১ জুলাই নতুন চিঠি ইস্যু হয় নগর নেতাদের ‘পরামর্শে’ কমিটি গঠনে। এই চিঠি আদান-প্রদানের মধ্যে কেন্দ্রীয় যুবদল স্থগিতাদেশ দিয়েছে সকল কমিটি গঠনে। কেউ বলছেন স্থগিতাদেশ নগর বিএনপি নেতাদের সফলতা। আবার কেউ বলছেন যুবদলের কৌশল।

২৮ জুলাই কেন্দ্রীয় যুবদলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক কামরুজ্জামান দুলাল স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত যুবদলের যেকোন পর্যায়ে কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়। আপাতত যুবদলের কোন কমিটি গঠন হচ্ছে না। তাই প্রশ্ন উঠেছে যুবদল কি ছাত্রদলের পরিণতিই বরণ করছে?

ছাত্রদল গাজী সিরাজ উল্লাহকে সভাপতি করে ১১ জনের একটি কমিটি ঘোষণা দিয়েছিল এক দশক আগে। ছাত্রদলের সেই কমিটি ১১ জনেই আছে। আবার ওরা ১১ জন এখন কেউ বিএনপির নেতা, কেউ যুবদলের আবার কেউ স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা। ১১ ছাত্রদল নেতার কারো কারো সন্তানেরও রাজনীতিতে নাম লেখানোর সময় হয়েছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ।

তবে শঙ্কার পাশাপাশি এই স্থগিতাদেশ নিয়ে আছে ভিন্নমতও। বয়স সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ায় ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের অনেকেই রাজনীতিতে পরিচয় সংকটে পড়বে। তাই তাদের যুবদলের নেতৃত্বে নিয়ে আসার কৌশল হিসেবে নগর যুবদলই নাকি এই স্থগিতাদেশ এনেছে। নগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ রাসেল বয়সের কারণে ছাত্রদল করতে পারছেন না। তা নিশ্চিত হওয়ার পরই তাকে সদ্য ঘোষিত পাঁচলাইশ থানা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক করা হয়েছে। রাসেল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের অনুসারী।

শেখ রাসেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ছাত্রদলের কমিটি গঠন না হওয়ায় আমরা অনেকেই নিজের যোগ্যতা অনুযায়ী পদ পাইনি। এখন ছাত্রদল করার বয়সসীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদলের পরবর্তী কমিটিতে শুধু বয়সের কারণে স্থান হবে না এমন অসংখ্য নেতাকে বাধ্য হয়ে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকসহ অঙ্গসংগঠনগুলোতেই রাজনীতি করতে হবে।’ এ থেকে বোঝা যায়, যুবদলের কমিটি গঠন স্থগিত হওয়াটা যুবদল নেতাদেরই কৌশল।

তবে দ্বন্দ্বের বিষয়টি এড়িয়ে যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি বলেন, ‘বিএনপি হলো আমাদের অভিভাবক সংগঠন। দল পরিচালনা হবে উনাদের পরামর্শেই। দল যদি চায় কমিটি হবে, না চাইলে কমিটি হবে না। বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে যারা মাঠে ছিল তারা নেতৃত্বে আসছে। সামনে যারা মাঠে থাকবে তারা নেতৃত্বে আসবে।’

যুবদল সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ বলেন, ‘এটা তো আমাদের ব্যক্তিগত চাওয়া নয়। আমরা যা করছি তা দলের জন্য, যা করবো তাও দলের জন্য। বিএনপির নেতৃবৃন্দের পরামর্শও আমাদের দরকার। আমরা আমাদের সংগঠনের গঠনতন্ত্রের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ নেই।’

নগর যুবদলের নগর বিএনপিকে আমলে না আনার ক্ষেত্রে ‘খুঁটির জোর’ হিসেবে অনেকে সামনে আনছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মীর হেলালকে। এ ব্যাপারে মীর হেলাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দীপ্তি-শাহেদ চট্টগ্রামের রাজনীতিতে নতুন নয়। ছাত্রদল থেকে উঠে আসা পরীক্ষিত দুই জাতীয়তাবাদী সৈনিক। তারা তাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলবে। এতে আমার কোন ভূমিকা নেই। আমি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কেন্দ্র নিয়ে আছি। নগর রাজনীতিতে আমার কোন আগ্রহ নেই।’

নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘যুবদল যে কয়টা কমিটি ঘোষণা করেছে তাতে বিএনপির পরামর্শ রাখেনি। তাই তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বিএনপির পরামর্শে কমিটি গঠন করতে।’

ছাত্রদলের ১১ জনের কমিটি ১১ জনেই একদশক পার করার জন্য তিনি সরাসরি দায়ী করলেন কারারুদ্ধ ছাত্রদল সভাপতি গাজী সিরাজ উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলুকে। তাদের সিদ্ধান্তহীনতায় কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি বলে জানান ডা. শাহাদাত।

উল্লেখ্য, দুই যুগ আগে নগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম বক্করকে সভাপতি ও যুগ্ম সম্পাদক কাজী বেলালকে সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়েছিল যুবদল। তার ১১ বছর পর ২০১১ সালের ১৯ নভেম্বর কাজী বেলালকে সভাপতি ও মোশাররফ হোসেন দীপ্তিকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হলেও তা অসম্পন্নই ছিল। দুই যুগের মাথায় এসে ২০১৮ সালের ১ জুন মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, মোহাম্মদ শাহেদ, ইকবাল হোসেন, মোশাররফ হোসেন এবং এমদাদুল হক বাদশাকে দিয়ে ‘সুপারফাইভ’ কমিটি গঠন করে যুবদল। চার মাসের মাথায় ৩ অক্টোবর নগর যুবদলের ২৩১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবদল।

৩ জুলাই নগরের পাঁচটি থানা ও ১৫টি ওয়ার্ডের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে নগর যুবদল। ওয়ার্ড কমিটির জন্য তিন মাস এবং থানা কমিটির জন্য চার মাসের সময় নির্ধারণ করে দেয় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে। নির্দিষ্ট সময়ে কমিটি গঠনে ব্যর্থ হলে আহবায়ক কমিটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে বলে শর্ত দেওয়া হয়। মূলত ওই ১৮টি আহবায়ক কমিটি গঠন নিয়েই নগর বিএনপির সাথে দূরত্ব বিষয়টি প্রকাশ্যে এল।

নগর যুবদলের সুপারফাইভ কমিটি ঘোষণা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে চার মাস সময় বেধে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় যুবদল। নির্দিষ্ট সময়ে ওই সুপারফাইভ পূর্ণাঙ্গ রূপ পেয়েছিল। সোমবার (৫ আগস্ট) নগর বিএনপির শাহাদাত-বক্করের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে। আব্দুল্লাহ আল নোমান, মীর নাছিরসহ চট্টগ্রাম বিএনপির সব শীর্ষ নেতা রাঙ্গুনিয়ায় জিয়াউর রহমানের প্রথম মাজার জিয়ারত করেন। যুবদলের কমিটির প্রথম কর্মসূচিই ছিল রাঙ্গুনিয়ায় জিয়ার মাজার জিয়ারত। কিন্তু নিজেদের তিন বছরে নগর বিএনপি রাঙ্গুনিয়া যেতে পারেনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!