দুই জেনারেটরের জন্য ইউরোপ যাবেন যমুনার ৪ কর্তা!

ঢাকার কাওরানবাজার এলাকায় নির্মাণাধীন যমুনা ভবনের (ফেইজ-২) জন্য দুটি জেনারেটর কিনতে দরপত্র আহ্বান করেছে যমুনা অয়েল কোম্পানি। অভিযোগ উঠছে প্রকল্প পরিচালক নিজের লোককে কার্যাদেশ দিতে জুড়ে দিয়েছেন অসম শর্ত। আবার এই দুটি জেনারেটরের সম্ভাব্য সরবরাহকারীর কারখানা পরিদর্শনের জন্য ৪ কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানোর জন্য শর্তও সংযোজন করা হয়েছে সরকারি নীতি না মেনে। জেনারেটর সরবরাহকারীকে শুধু এ বাবদ গুণতে হবে অন্তত ২০ লাখ টাকা।

জানা গেছে, সম্প্রতি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় কৌশলে টেন্ডার শিডিউলের জেনারেল কন্ডিশনস অফ কন্ট্রাক্ট (জিসিসি) ৩২.১ ধারায় পরিবর্তন এনে যুক্ত করা হয়েছে ৪ জনকে বিদেশ ভ্রমণ করানোর শর্ত।

জিসিসি৩২.১ ধারায় ফ্যাক্টরি একসেপট্যান্স টেস্টে বিশেষ শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে, জেনারেটর যে কারখানায় উৎপাদন হয় সেই কারখানা পরিদর্শন করবেন চারজন প্রতিনিধি। এই চারজন প্রতিনিধির থাকা, খাওয়া, স্থানীয় যাতায়াত (বিদেশে) খরচ বহন করার পাশাপাশি বিমানের ইকোনমি ক্লাসের টিকিট খরচ বহন করতে হবে। চার কর্তাকে প্রতিদিন সম্মানী দিতে হবে আড়াইশ মার্কিন ডলার। সে হিসেবে প্রতিজনকে ১৫০০ ডলার করে মোট ৬ হাজার ডলার পরিশোধ করতে হবে, যা বাংলাদেশের ৫ লাখ ৪ হাজার টাকার সমান।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইউরোপে ৬ দিন ভ্রমণে জনপ্রতি খরচ হয় সাড়ে ৩-৪ লাখ টাকা। সে হিসেবে ৪ জনের জন্য জেনারেটর সরবরাহকারীকে বহন করতে হবে ২০ লাখ টাকারও বেশি!

অথচ সরকারের পাবলিক ওয়ার্কস ডিপার্টমেন্টের (পিডাব্লিউডি) নিয়মেই (২১০ পৃষ্ঠা, ধারা ১৩) আছে এক থেকে দুটি লিফট বা এসকেলেটর কিনতে একজন এবং তার অধিক প্রতি দুটির জন্য একজন যুক্ত হবেন। তবে পিডাব্লিউডি জেনারেটরকে ওই ক্লজে অন্তর্ভুক্ত করেনি। সেফটি বিবেচনায় জেনারেটর থেকে লিফট বেশি গুরুত্ব পায়। সাধারণ লিফট ও এসকেলেটর কেনার নিয়মে অভিজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টরা কারখানা পরিদর্শনে যান। সেই হিসেবে দুটি জেনারেটর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিদেশ যেতে পারেন মাত্র একজন কর্মকর্তা।

গত বছরের ২ এপ্রিল ঢাকায় ২০ তলাবিশিষ্ট যমুনা ভবনের দ্বিতীয় ফেইজের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। ১৫৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের মেয়াদকাল জুন ২০২১ সাল। প্রকল্প পরিচালক মো. ইসহাক চৌধুরী চুক্তিবদ্ধ থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত। তিনি এই পদ ছাড়লেও প্রকল্পের মেয়াদ থাকবে আরও দেড় বছর। সাধারণত সব প্রকল্পেই জেনারেটর কেনা হয় প্রকল্পের কাজের শেষ দিকে। প্রকল্পের কাজ প্রায় অর্ধেকের বেশি অবশিষ্ট থাকতে কেন তিনি তাড়াহুড়ো করে জেনারেটর কিনতে চাইছেন— এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যে।

যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াসউদ্দিন আনচারী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি আমি দেখবো। যেহেতু আমি দায়িত্বে আসার আগেই ডিপিপি তৈরি হয়েছে তাই আমি বিস্তারিত বলতে পারছি না। তবে নিয়মের বাইরে কোন কিছু হবে না। এতটুকু নিশ্চয়তা আপনাকে দিতে পারি।’

নির্মাণ কাজ শেষ হতে দেড় বছরের বেশি সময় হাতে থাকার পরও নিজের চাকরির শেষ সময়ে এসে কেন প্রকল্প পরিচালক জেনারেটর কিনতে তোড়জোড় করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে। পিডির মেয়াদ শেষে আমরা নতুন পিডির জন্য প্রস্তাবনা পাঠাবো।’

উল্লেখ্য, ভবন নির্মাণে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে মেসার্স স্থপতি সংসদ লিমিটেড। নির্মাণ করছে মেসার্স নাভানা কনস্ট্রাকশন লিমিটেড।

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!