চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেব ও আ ম ম মিনহাজুর রহমানের দায়ের করা অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছেন প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী।
বুধবার (৬ ডিসেম্বর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই দাবি করেছেন আসনটির বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মোহাম্মদ নিজামুদ্দিন নদভী।
বিবৃতিতে আবু রেজা নদভী বলেন, ‘আমি বিগত দুই টার্মে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত দুই দুইবার সাংসদ হই। অত্র সংসদীয় আসনে বিগত ১০ বছরে জনগণের ভাগ্য ও জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে জননেত্রী শেখ হাসিনা যে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন তা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। বিগত ১০ বছরে আমি কোনো সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিইনি। অত্র সংসদীয় এলাকায় থানা প্রশাসনের মাধ্যমে সন্ত্রাসীদের জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছি।’
তিনি বলেন, ‘গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক আমাকে পুনরায় নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ঘোষণা পর এলাকায় বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ, উদ্দীপনা ও গনজাগরণে ক্ষীপ্ত হয়ে, সর্বোপরি তাদের (স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেব ও আ ম ম মিনহাজুর রহমান) মনোনয়ন ফরমে ক্রটি—বিচ্যুতি ও তথ্য বিভ্রাট থাকায় মনোনয়ন বাছাইয়ের দিন তাদের মনোনয়ন ফরম বাতিল হয়ে যায়। এতে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেব ও আ ম ম মিনহাজুর রহমান ঈর্ষান্বিত হয়ে পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও বানোয়াট অভিযোগ দায়ের করেন।’
চট্টগ্রাম-১৫ আসনের বর্তমান এই সাংসদ বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর প্রতিশ্রুতি তো দূরের কথা, আমি কোনো সমাবেশ অংশও নিইনি। ২৯ নভেম্বর নমিনেশন পেপার জমাদানের পর সোজা চট্টগ্রাম শহরের বাসায় চলে আসি। ১ ডিসেম্বর সাতকানিয়া মাদার্শা বাবুনগরে গ্রামের বাড়িতে অবস্থানের পর ২ ডিসেম্বর আবার চট্টগ্রাম শহরে চলে আসি। গত ২ ডিসেম্বর নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার এবং নির্বাচন কমিশনকে সব ধরণের সহযোগিতা প্রদানে বদ্ধপরিকরের কথা উল্লেখ করে আমি নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সহকারী জজ শাহনেওয়াজ মনির বরাবর জবাব প্রদান করেছি।’
অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মিনহাজুর রহমান কর্তৃক তার সমর্থকদের বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অমান্য করে এবং সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ এনে ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী বলেন, ‘আমি আমার মনোনয়ন ফরমের কাগজপত্র নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। আমি অথবা আমার কোনো সমর্থক এই ধরনের কোনো ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত নই। এ ধরনের কোনো ঘটনা সম্পর্কেও আমি ওয়াকিবহাল নই। যেহেতু আমি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী, তাই আমার মানসম্মান নষ্ট করার কু-মানসে এবং আমার জনপ্রিয়তা নষ্ট করার অপচেষ্টায় আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে এই ধরনের ষড়যন্ত্র ও প্রগাপন্ডা ছড়িয়ে দুর্নাম রটাচ্ছে।’
নদভী বলেন, ‘মিথ্যা অপবাদ দিয়ে, মিথ্যা তথ্য জনসমক্ষে উপস্থাপন করে, আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে, আমি এসব অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এর আগে গত ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম-১৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বেকারিপণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বনফুলের মালিক আব্দুল মোতালেব সাতকানিয়ার দেওদীঘি এলাকায় তার সমর্থকদের গাড়িবহর আটক, একই দিন কেরানীহাট এলাকায় তার বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল, কুশপুত্তলিকা দাহ এবং তার গাড়িবহর দেখে অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন, একটি সমাবেশে নির্বাচনী আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর বিরুদ্ধে বিবৃতি দেন।
একই দিন অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আ ম ম মিনহাজুর রহমান তার মনোনয়নপত্রে সংযুক্তি হিসেবে দাখিলকৃত এক শতাংশ সমর্থনকারী ভোটার তালিকার ক্রম ৩১০-এ থাকা লোহাগাড়ার পুটিবিলার সৈয়দুল আলমকে সাংসদ আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর চট্টগ্রাম শহরস্থ চান্দগাঁও রূপালী আবাসিকের বাসায় আটকে রাখায় ৪ নভেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাইকালে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে স্বাক্ষর দিতে পারেননি বলে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
এসব অভিযোগ দেওয়ার পাঁচ দিন পর ড. আবু রেজা নদভী এ দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন উল্লেখ করে বিবৃতি দিলেন।