দিনভর চট্টগ্রামের কলেজে ‘ক্ষমতার লড়াই’, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, থানার সামনে দুই দল মুখোমুখি
উত্তপ্ত ক্যাম্পাসে আহত ৪, বৈঠকেও হাতাহাতি
চট্টগ্রাম নগরীর উত্তর কাট্টলী আলহাজ্ব মোস্তফা হাকিম ডিগ্রি কলেজে এক নারী শিক্ষককে কলেজে আসতে নিষেধ করা এবং প্রভাব খাটিয়ে এক বিএনপি নেতার চাচাকে কমিটিতে ঢোকানোর প্রতিবাদ জানানোয় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের হামলার অভিযোগ উঠেছে। দিনভর উত্তপ্ত ক্যাম্পাসে একাধিক দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিতেও উত্তেজনা থামেনি, বরং এক পর্যায়ে কলেজের বৈঠক কক্ষে হট্টগোল ও হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ ঘটনায় দুই নারী শিক্ষার্থীসহ অন্তত চারজন আহত হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন।
১৭ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) রাত নয়টায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ছাত্রদলকর্মীদের থানার সামনে অবস্থান নিয়ে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। শিক্ষার্থীরা ওই সময় থানার ভেতরে আটকে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনাকে কেন্দ্র করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বহিরাগত নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে ছাত্রপরিষদের প্রায় শতাধিক ছাত্র মিছিল নিয়ে এসে আকবরশাহ থানা ঘেরাও করে। এর কিছুক্ষণ পর বিএনপি ও ছাত্রদলের প্রায় ২০০ নেতাকর্মী মিছিল নিয়ে এসে থানার সামনে অবস্থান নেয়। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানার বাইরে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে তাদের স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে উত্তেজনার সূচনা হয়। শিক্ষার্থীদের ভাষ্য অনুযায়ী, কলেজ পরিচালনা কমিটির নবনির্বাচিত সদস্য, চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন এক নারী শিক্ষককে কলেজে না আসার মৌখিক নির্দেশ দেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শিক্ষার্থীরা এর প্রতিবাদে টেস্ট পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলনে নামে।
আবার অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মনজুরুল আলম মঞ্জু ওরফে কাট্টলী মঞ্জুর নিজের প্রভাব খাটিয়ে তার চাচা আকবরশাহ থানা বিএনপি নেতা মাঈনু চৌধুরীকে কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সদস্য করায় শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। বিএনপি নেতা মঞ্জুর বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় প্রভাব খাটানোর বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিএনপি নেতা কাট্টলী মঞ্জু ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সিরাজ উদ্দিনের অনুসারী ছাত্রদল কর্মীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। নারী শিক্ষকের পাশে দাঁড়ানোয় শিক্ষার্থীদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।
ঘটনার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতারা কলেজে আসেন। কিন্তু তারাও ছাত্রদলের হামলার শিকার হন বলে জানা গেছে। এনসিপির কোতোয়ালী থানা সংগঠকের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়েছে।
পরে পরিস্থিতি সামাল দিতে কলেজ কর্তৃপক্ষ, সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনী একাধিকবার বৈঠকে বসে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমঝোতার চেষ্টা বিফলে যায়। বিকেল সাড়ে তিনটায় বৈঠকের এক পর্যায়ে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে চলমান আলোচনায় হঠাৎ করেই হাতাহাতি শুরু হয়। উপস্থিত পুলিশ, সেনাবাহিনী ও কলেজ কর্তৃপক্ষের সামনেই শুরু হয় হট্টগোল ও সংঘর্ষ।
ছাত্ররা অভিযোগ করেছেন, মাঈনু চৌধুরীর উপস্থিতিতে মঞ্জু ও সিরাজের অনুসারী ছাত্রদল কর্মীরা সাধারণ ছাত্রদের মারধর করে। পুলিশ এ সময় নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে।
এদিকে এ ঘটনায় অন্তত চারজন আহত হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন। এর মধ্যে এসএম মারুফ ও আয়াত নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই কর্মী রয়েছেন । হামলায় আহতদের মধ্যে দুজন নারী শিক্ষার্থীও রয়েছেন।
সিপি