নিজের খামার থেকে প্রাইভেট কারে করে বাড়ি ফিরছিলেন আবদুল হাকিম। পথে হঠাৎ মোটরসাইকেলে এসে হেলমেট পরা তিন যুবক এলোপাথাড়ি গুলি ছুঁড়তে থাকে। গাড়ির গ্লাস ভেদ করে সেই গুলি লাগে হাকিমের গায়ে। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তার গাড়িচালকসহ অজ্ঞাত একজনও এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বিকালে সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার মদুনাঘাট ব্রিজসংলগ্ন হাটহাজারী সড়কে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত আবদুল হাকিম (৬৫) রাউজানের বিএনপি নেতা। তিনি উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের পাঁচখাইন গ্রামের বাসিন্দা।
জানা গেছে, গ্রামে নিজের খামার থেকে গাড়িতে করে বিকালে চট্টগ্রাম নগরে ফিরছিলেন আবদুল হাকিম। মদুনাঘাট এলাকা থেকে মোটরসাইকেল আরোহী একদল অস্ত্রধারী তার গাড়ির পিছু নেয়। হাকিমের গাড়িটি পানি শোধনাগার এলাকায় পৌঁছালে অস্ত্রধারীরা তার গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে নগরীর এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়ার পথে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় অস্ত্রধারীদের গুলিতে আবদুল হাকিমের গাড়িচালক মোহাম্মদ ইসমাইলও আহত হন। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া গুলিবিদ্ধ অপরজনের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার পরপরই নিহতের গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। কে বা কারা জড়িত এবং কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, তা তদন্তের পর বলা যাবে। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রাউজানের কেন্দ্রীয় বিএনপির শীর্ষ নেতা গোলাম আকবর খন্দকার ও গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্যের জেরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। তবে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে বলে অনেকে অনুমান করছেন।
এর আগে গত ২৯ জুলাই চট্টগ্রাম–রাঙামাটি সড়কের পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সত্তারহাট এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী ও উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ছিলেন গোলাম আকবর খন্দকার, রাউজান উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম আকবর খোন্দকারের ব্যক্তিগত সহকারী অর্জুন কুমার নাথ ও এপিএস আসিকুর রহমান, যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন, বিএনপি নেতা আওরঙ্গজেব সম্রাট, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাঈম উদ্দিন মিনহাজ, মোহাম্মদ হুমায়ুন। তবে আহত অনেকের পরিচয় তখন পাওয়া যায়নি।
এক বছরে ১৪ খুন
এ নিয়ে রাউজানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে গত এক বছরে ১৪টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। যার বেশিরভাগই রাজনৈতিক আধিপত্যের জেরে ‘টার্গেট কিলিং’। তবে এর মধ্যে ১১টিই রাজনৈতিক বলে মনে করছে পুলিশ। বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, এলাকা দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে ঘিরেই মূলত এই সংঘর্ষগুলো ঘটে। এর মধ্যে অন্তত ৩ শতাধিক ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এর আগে গত ৬ জুলাই দুপুরে কদলপুর ইউনিয়নের ইশানভট্ট হাটবাজারে দিনদুপুরে অটোরিকশায় করে এসে বোরকা পরা একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে মুহাম্মদ সেলিম নামের এক যুবককে গুলি করে হত্যা করে।




