দলে ফিরছেন মনোয়ারা বেগম মনি, অপেক্ষা নির্বাচনের

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের চট্টগ্রাম নগর কমিটির বহিষ্কৃত সভানেত্রী মনোয়ারা বেগম মনিকে ফিরিয়ে নিচ্ছে দল। তবে এজন্য ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে— এমনটিই জানালেন মহিলা দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।

বহিষ্কারের ৪ মাসের মাথায় এসে মনোয়ারা বেগম মনির অনুসারীরা তৎপর হয়েছে তাকে স্বপদে ফিরে পেতে। মনোয়ারা বেগম মনির ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, মনিকে দলে ফিরিয়ে না নিলে তাকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রার্থী করাবেন তারা।

দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর মনি দীর্ঘদিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। ১৫ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি আবার নিজ নির্বাচনী এলাকায় কর্পোরেশনের নিয়মিত কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হয়েছেন। তার অনুসারী নেত্রী-কর্মীরাও নিয়মিত তার বাসায় গিয়ে দেখা করছেন বলে জানা গেছে। ২২ জানুয়ারি অনুসারীদের নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর বাসভবনে গিয়ে দেখাও করেছেন মনি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা এসেছে, কথা হয়েছে। তাকে ফিরিয়ে নেওয়া বা তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে মহিলা দল।’

মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা সুলতানা আহমেদ বলেন, ‘মনোয়ারা বেগম মনিকে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বহিষ্কার করা হয়নি। তাকে বহিষ্কারের আগে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়ার দরকার ছিল। সে যেহেতু আলোচিত সেই বক্তব্যের জন্য অনুতপ্ত এবং দুঃখ প্রকাশ করেছে আমরা তা বিবেচনা করবো। তবে সবাই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত। নির্বাচন শেষে বসে ঠিক করবো কী করা যায়।’

উল্লেখ্য, মনোয়ারা বেগম মনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) বাগমনিরাম, জামালখান ও লালখান বাজার ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। তিনি পরপর ৩বার নির্বাচিত হয়েছেন। গত ৪ অক্টোবর নগরীর লালখান বাজার এলাকায় দুর্গাপূজা উপলক্ষে আয়োজিত এক বস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে মনোয়ারা বেগম মনি চসিক মেয়র পদে বর্তমান মেয়র আ জ ম নাছিরকে আবারও নির্বাচিত করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

ওই অনুষ্ঠানে মনোয়ারা বেগম মনি বলেছিলেন, ‘আজকে আমি আ জ ম নাছির উদ্দীন সম্পর্কে কিছু কথা বলতে চাই। উনাকে আমি যখন ডেকেছি, যে কোনও প্রোগ্রামে, নাক ফোঁড়ানো অনুষ্ঠানে, একটু অসুস্থ রোগীকে দেখতে, সব কিছুতেই উনি হজির হন। সকাল ৮টা থেকে রাত ২টা পর্যন্ত উনি জনগণের সাথে মিশে যান। উনি একঘণ্টাও রেস্ট নেন না, আমি নিজে দেখেছি। আমি অবাক হয়ে যাই, একজন মানুষ কিভাবে জনগণের জন্য এভাবে নিজেকে নিবেদিত করতে পারেন।’

মেয়র ও তার রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে মনি বলেন, ‘আ জ ম নাছির একটা দল করেন, আমি আরেকটা দল করি। সেটাতে আমি বিশ্বাসী না। আমি বুঝি, দল ও মতের উর্ধ্বে মানবতার সেবা। মানবতার জন্য কাজ করাই হচ্ছে রাজনীতি, সমাজনীতি। কে কোন দল করে সেটা বিবেচনা করে আ জ ম নাছির কাজ করেন না। উনি একটা জায়গায় আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। কিন্তু উনি চট্টগ্রামের অভিভাবক। আগামী দিনেও আমরা আ জ ম নাছিরকে আবার মেয়র হিসেবে দেখতে চাই। সবকিছুর উর্ধ্বে উঠে, সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে আ জ ম নাছির মেয়র হবেন। আবার এখানে আসবেন। আমরা আবার ফুল দিয়ে বরণ করে নেবো তাকে।’

তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে নিজ দলের বাইরেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও সংবাদের শিরোনামে আসে মনির বক্তব্যটি। বিশেষ করে নগর বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব ও মহিলা দলের ভেতর মনির দেওয়া এই বক্তব্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। পর দিন ৫ অক্টোবর সন্ধ্যায় তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

৪ অক্টোবরের সেই সমাবেশে আ জ ম নাছিরকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মেয়র আখ্যা দিয়ে মনি আরও বলেন, ‘যখন কেউ আ জ ম নাছিরের বিরুদ্ধে কিছু বলে, প্রতিবাদ করি। আমি নিজে সাক্ষী, আ জ ম নাছির কখনো কাউকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেননি। যে যখন গিয়েছেন নাছির ভাই তাকে সময় দিয়েছেন। আমি তিনটা মেয়র পেয়েছি। মহিউদ্দীন চৌধুরী, মনজুর আলম (বিএনপি সমর্থিত) ও আ জ ম নাছিরকে পেয়েছি। আমার দৃষ্টিতে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। আপনারা যদি আ জ ম নাছিরকে আবার নির্বাচিত করতে না পারেন সেটা হবে আপনাদের জন্য ব্যর্থতা। চরম ব্যর্থতা। নাছির ভাই নমিনেশন না পেলে আমি নির্বাচন করবো না। নাছির ভাই ছাড়া অন্য কোন মেয়রের অধীনে কাউন্সিলর হওয়ার ইচ্ছে নাই। অনেক করেছি, আর নির্বাচন করবো কী না সেটারও ঠিক নাই। আ জ ম নাছির একটি বিপ্লবের নাম।’

এ প্রসঙ্গে মনোয়ারা বেগম মনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি আবেগে বলে ফেলছিলাম। আমার কথায় দলের নেতা-কর্মীরা মর্মাহত হয়েছেন। সবার কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার বিরুদ্ধে আদালতে ৭টি মামলা ছিল। ৩টি মামলা শেষ হয়েছে। আরও ৪টি মামলায় আমি নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিই। সারা শরীরে পুলিশি নির্যাতনের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছি। জন্মলগ্ন থেকে আমি বিএনপি করি, আমি আমৃত্যু বিএনপির হয়ে কাজ করবো।’

এফএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!