দলবেঁধে চাঁদাবাজদের হামলা প্রবাসীর ঘরে, ‘অন্য কারণে’ মামলা নিচ্ছে না পাঁচলাইশ পুলিশ

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম (৬২)। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের কষ্টের রোজগারের টাকায় নির্মাণ করছেন একটি ভবন। ভবনটির তৃতীয় তলার কাজ করতে গেলে সম্প্রতি তার কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন স্থানীয় ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ কয়েকজন সদস্য।

তাদেরকে নেতৃত্বে দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের এক ব্যক্তিও। চাঁদাবাজদের কথা মতো টাকা দিতে অস্বীকার করায় ওইদিন ধারালো অস্ত্র হাতে শাহ আলমের ঘরে হামলাও করে তারা।

হামলায় আহত হয়ে জাতীয় নাগরিক সেবা হটলাইন- ৯৯৯ এ ফোন করা হলে তাৎক্ষনিক পুলিশ এসেই তাকে উদ্ধার করে।

গত ১৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার হামজারবাগ হামজার খাঁ লেইনের শাহ আমানত আবাসিক এলাকায় মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী শাহ আলমের ভবনে এ হামলা চালায় কিশোর গ্যাংয়ের চার ‘বড় ভাই’। হামলার ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে এসেছে।

হামলার ঘটনার আলামত থাকার পরও পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মামলা নিচ্ছে না। ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে থানা থেকে কয়েক দফা ঘরে ফেরত পাঠিয়েছে ভুক্তভোগীকে।

Yakub Group

ভুক্তভোগী শাহ আলমের অভিযোগ, পুলিশ লিখিত অভিযোগ নিলেও এই অভিযোগের কোনো ‘রিসিভ কপি’ দেয়নি। ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলে শুধুই সময়ক্ষেপন করে যাচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্তরা স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার আশ্রয়ে থাকায় কোনো ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে না পাঁচলাইশ থানা। এ ঘটনায় ঘরের ভেতর তাকে মারধরের প্রমাণ হিসেবে একটি ভিডিও থাকার পরও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে নিরব ভূমিকায় রয়েছে পুলিশ।

ভিডিওতে দেখা যায়, ওইদিন শাহ আলমের ভবনে ঢুকে আশালীন ভাষায় গালি দেয় আরিফ হোসেন ও হায়দার। এই দুইজন শাহ আলমকে মারধর করে। মারধরের একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে গালিগালাজ করতে করতে শাহ আলমের দিকে তেড়ে যেতে দেখা গেছে আবু হায়দারকে।

জানা গেছে, শাহ আমানত আবাসিক এলাকার আরিফ হোসেন (৩৫), আবু হায়দার (৩৪) এবং আশিক আহমেদ রাব্বির (২৭) বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন অভিযোগ।

এই তিনজন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের ‘বড় ভাই’ হিসেবে স্থানীয়দের কাছে পরিচিত। তাদের রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় দিচ্ছেন সাহেদ আলী রানা নামে এক ব্যক্তি। তিনি নিজে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে দাবি করে বেড়ান হামজারবাগ এলাকায়। যদিও এই সংগঠনটির কোনো কমিটিতে তার নাম নেই।

জানতে চাইলে আবু হায়দার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শাহ আলম কাজ দেওয়ার কথা বলে নাটকীয় কায়দায় একটা ঝামেলা তৈরি করছে। শাহ আলমের সাথে নির্মাণ সামগ্রী সরবরাহের কাজ নিয়ে মুলত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব এটা। এখানে কোনো কিছু হয়নি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাহেদ আলী রানা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছাসেবক লীগ করি। আমি যেহেতু রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান আমার সঙ্গে স্থানীয় অনেকের সঙ্গে পরিচয় থাকতে পারে। সেখানে পরিচিত ব্যক্তিরা কে, কি করছেন সেটা আমার জানা কথা না। আমি অন্যায় কাজে কাউকে প্রশ্রয় দিইনি, ভবিষতেও দিব না।’

জানতে চাইলে শাহ আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি প্রায় দুই বছর আগে প্রবাস জীবন শেষ করে দেশে ফিরেছি। কষ্টের রোজগারের টাকায় একটি ভবন নির্মাণ করছি। ভবনটিতে ইতোমধ্যে তৃতীয় তলার ছাদের কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে থেকেই চাঁদা দাবি করে আসছে আরিফ, হায়দার ও রাব্বি। প্রথমবার রাব্বি ও আরিফকে আমি ২০ হাজার টাকা চাঁদা দিয়েছিলাম। পরে এই তিন জন আমার কাছ থেকে আবারও ১ লাখ টাকা দাবি করেছে। এই টাকা দিতে আমি অস্বীকৃতি জানাই। এ কারণে তারা আমার ভবনের ভেতরে এসে গালিগালাজ ও মারধর করেছে আমাকে। এমনকি হায়দার ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে কুপিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। পরে উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন করলে থানার পুলিশ এসেই আমাকে উদ্ধার করে।’

শাহ আলম আরও বলেন, ‘উদ্ধারের পর পুলিশ আমাকে পাঁচলাইশ থানায় ওসি স্যারের রুমে নিয়ে যায়। সেখানে ওসি স্যার ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে পরদিন থানায় এসে একটি অভিযোগ দিতে বলেন। পরদিন থানায় এসেই আমার কাছ থেকে ডিউটি অফিসার অভিযোগ জমা নেয়, কিন্তু কোনো রিসিভ কপি আমাকে দেয়নি। তাদের বিরুদ্ধে আমি মামলা করতে চাইলেও পুলিশ কালক্ষেপন করে চলছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা বিভিন্নভাবে আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত।’

জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন মজুমদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিষয়টি একটু রহস্যজনক মনে হচ্ছে। তাই এতো তাড়াতাড়ি মামলা নিচ্ছি না। এখানে আমার জানামতে শাহ আলমের নির্মাণাধীন ভবনের জিনিসপত্র সরবরাহকারীদের দুই ভাইয়ের মধ্যে একটু ঝামেলা রয়েছে। এ ঘটনায় শাহ আলম কোন বিষয় না, এখানে অন্য বিষয় কাজ করছে। তাই বিষয়টি পুরোপুরি তদন্ত করে তারপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এমএ/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!