চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত সেবা দিতে ওষুধ, অর্থ, খাবার, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ ডিএনএ নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তা করছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের সহায়তা কেন্দ্রের থেকে ২৪ ঘণ্টা এই সহায়তা পাচ্ছেন রোগী ও স্বজনরা।
জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান প্রতিদিন রাতে সহায়তা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে কার্যক্রম তদারকি করছেন। এছাড়া অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ, একশ কর্মকর্তা ও দুইশ স্বেচ্ছাসেবক পালাক্রমে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে খোলা এই সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে মুমূর্ষু রোগীদের দ্রুত সেবা প্রদান ওষুধ, নগদ অর্থ, শুকনো খাবার, এম্বুলেন্স সেবা, নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ সংরক্ষণ, স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরসহ নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়েছে। স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরের সময় ৫০ হাজার ও আহত রোগীদেরকে ২৫ হাজার টাকা করে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া জেলা প্রশাসন চট্টগ্রামের সহায়তা কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক ও অন্যরা ওয়ার্ডে গিয়ে রোগী ও স্বজনদের মাঝে খাবার প্রদান করা হচ্ছে। মুমূর্ষু রোগীদের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করা হয়। নিহত ব্যক্তি, মুমূর্ষু আহত ব্যক্তি ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের তালিকা করার ফলে স্বজনের খোঁজ পেতে সহজ হয়েছে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নিহত ও আহত ব্যক্তির স্বজনদের নানান সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। দুর্ঘটনার পর থেকে এই পর্যন্ত পাঁচশ’র বেশি রোগীদের ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
অগ্নিকাণ্ডে আহত জামালপুরের বাসিন্দা মাসুদ রানা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে মারা যান। তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় জেলা প্রশাসন।
২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন জামাল উদ্দিন। তার ভাই হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘জেলা প্রশাসনের সহায়তা ডেস্ক জরুরিভাবে আমার ভাইয়ের জন্য রক্তের ব্যবস্থা করেছে।’
৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আরেক রোগী মো. মহিউদ্দিনের মেয়ে সাদিয়া জান্নাত বলেন, ‘এমন অসহায় মুহূর্তে আমাদের মাথার ওপর ছায়া হয়ে দাঁড়ায় জেলা প্রশাসন।’
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান বলেন, ‘মেডিকেলের জরুরি বিভাগে আসা সাধারণ রোগীদেরও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এই সহায়তা কেন্দ্রে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ১০০ জন স্টাফ পর্যায়ক্রমে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ অনেকে অনুদান দিয়ে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এই সেবা কার্যক্রম চলবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন হাসপাতালে থাকা বিএম ডিপোর অগ্নিকাণ্ডে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের আর্থিক সহায়তা, ওষুধ এবং খাদ্য সহায়তাসহ নানা সেবা দিয়েছে। আগুনে পোড়া শেষ রোগী বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত এই সেবা চলমান থাকবে।’