চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে বসতবাড়ির সীমানা সংক্রান্ত জটিলতায় দুই পরিবারের মধ্যে সংঘর্ষে ২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন নিহত খালেকের মা মমতাজ বেগম। ওই ঘটনায় ‘উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়রানির উদ্দেশ্যে’ পিতাকে আটক করা হয়েছে দাবি করে থানার ভেতরে বিষপান করা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ইকবাল ও তার পিতার নামও মামলার এজাহারে আছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল উদ্দিন। এদিকে বৃহস্পতিবার (২১ অক্টোবর) বিকেল ৪ টা নাগাদ নিহত খালেক ও টিপুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে।
বুধবার (২০ অক্টোবর) দুপুর ২টার দিকে বাঁশখালী পৌরসভার জলদি এলাকায় মুনছুরিয়া বাজারের পাশে এই ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে জড়ানোরা সম্পর্কে আত্মীয় হন। বাড়ির সীমানা প্রাচীরে পানি নিষ্কাশনের একটি পাইপ নিয়ে এই সংঘর্ষ হয় বলে পুলিশ জানায়।
নিহতরা হলেন জলদি এলাকায় মুনছুরিয়া বাজারের আবুল কাশেমের ছেলে আব্দুল খালেক (৩৪) এবং কামালের ছেলে সোলতান মাহমুদ টিপু। টিপু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। সংঘর্ষে আহত হল খালেকের ভাই মো. কামাল উদ্দিন। এই ঘটনার অপরপক্ষে ছিলেন খালেকের চাচাতো ভাই মঞ্জুর আলম এবং মো. বাহাদুর। সংঘর্ষের ঘটনায় আহত অবস্থায় তারাও বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আব্দুল খালেক ও সোলতান মাহমুদ টিপু হত্যার পর পর শীলকূপের মো. ছিদ্দিককে গ্রেপ্তার করলে তার পুত্র মো. রাসেল থানায় এসে থানার ভেতরে পুলিশের সামনে বিষপান করেন। বিষপানের কারণ হিসেবে চিৎকার করে তিনি বলেন, ‘আমার বাবা হত্যার সাথে জড়িত নয়, আগেও পুলিশ উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার ও আমার পরিবারকে হয়রানি করেছে। এবার পুলিশ অন্যায়ভাবে আমার বাবাকে ধরেছে, তাই বিষপান করে আত্মহত্যা করবো।’
এ সময় তিনি সাথে নিয়ে আসা বিষপান করেন থানা ফটকে বসে। মো. রাসেল বিষপান করার সাথে সাথে পুলিশ তাকে বাঁশখালী হাসপাতালে ভর্তি করায়। সেখান থেকে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিহতের মা ছাত্রলীগ নেতা রাসেল ইকবালকেও এজাহারে ৪ নম্বর আসামি করেছেন।
রাসেলের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি কামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘একটা হত্যার ঘটনায় যারা মারা গেছে তাদের পরিবারের সদস্যরা এজাহারে কারও নাম দিলে তাকে কি আমরা এরেস্ট করবো না?’
এক্ষেত্রে পারিবারিক দ্বন্দ্বের মামলায় এজাহার হওয়ার আগেই পুলিশ ছাত্রলীগ নেতা রাসেলের পিতা মো. ছিদ্দিককে আটক করেছিল— এমন কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হলে ওসি কামাল উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালেকের পরিবারের সদস্যদের দেখানো লোকদেরই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’
রাসেলের ঘনিষ্ঠদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাঁশখালী থানা পুলিশের সোর্স কালা শুক্কুর ও মাহমুদুল ইসলাম নামে দুজন থানা পুলিশের সহায়তায় এলাকার নিরীহ মানুষকে হয়রানির মুখে ফেলে চাঁদাবাজি করে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করলে রাসেল ইকবালকে বিভিন্নভাবে ফাঁসাতে কাজ করে আসছিল দালালচক্রটি। এই ক্ষোভ থেকেই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন রাসেল।
এই বিষয়ে দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের চটগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এই ঘটনায় রাসেলের কোনো সম্পৃক্ততা নাই। কিন্তু তার বাবাকে ও তাকে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। আমরা সাংগঠনিকভাবে এসব বিষয়ে দলের হাই কমান্ডে জানাবো।’
এআরটি/সিপি