থাকুক উপোস, পিতৃহারা তিন মেয়েকে পড়ানোর স্বপ্নে মায়ের লড়াই
মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে এতদিন সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারলেও শারীরিক অসুস্থতায় মা এখন কর্মহীন। তাই শেষ সম্বল ছাগল বিক্রি করে মেয়েরা ভর্তি হল পতেঙ্গার স্কুলে।
নগরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হয় চারদিক। সে আলোয় বসে জীবনের আলো ছড়ানোর প্রস্তুতি নেয় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু নগরের পতেঙ্গার নুর বেগমের ঘরের চিত্র ভিন্ন। যে ঘরে জ্বলে না বিদ্যুতের আলো। কখনও মোমের আলোয়, কখনও দিনের আলোয় চলে তার তিন সন্তানের পড়ালেখা। নাই বলতে কিছুই নাই। তবে আছে একবুক স্বপ্ন। বাবা হারানো সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার স্বপ্ন।
নুর বেগমের তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে মেহেরুন নিসা স্থানীয় পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণি, মেজ মেয়ে নুসরাত জাহান সপ্তম শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে সুমাইয়া আলহাজ্ব হাফিজুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী।
নুর বেগম গত ১৪ বছর পতেঙ্গা পশ্চিম মুসলিমাবাদ নৌবাহিনীর দেওয়াল সংলগ্ন আব্দুল্লার বাড়ির পাশে পরের জায়গায় বসবাস করছেন। তার স্বামী জামাল উদ্দিন ৮ বছর আগে লিভার ক্যন্সারে মারা যান। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে এতদিন সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারলেও শারীরিক অসুস্থতায় তিনি এখন কর্মহীন। দুই বেলা দুই মুঠো ভাত জোটে অন্যের দয়ায়। প্রায়ই দিন কাটে উপোস।
সন্তানদের আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে মরিয়া নুর বেগম। তিনি জানান, শেষ সম্বল ছাগল বিক্রি করে মেয়েদের পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন।
নুর বেগমের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, একচালা টিনের ভাঙ্গা ঘরে তিন সন্তান নিয়ে কোনও রকম জীবনযাপন করছেন। তাও আবার অন্যের জায়গায়। চুলোয় আগুন প্রায়ই জ্বলে না। ছোট মেয়ে খিদের তাড়নায় কাঁদছে।
অভাব অনটনের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন নুর বেগম। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বললেন, দুই বেলা ঠিকমতো সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারি না। অসুস্থতার জন্য এখন আর কারও বাসায় কাজ করতে পারছি না। কিভাবে এই তিন মেয়েকে মানুষ করবো জানি না। আমাদের এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা উপোস থাকতে হয়। টাকার অভাবে মেয়েদের প্রাইভেট পড়াতে পারি না, বই-খাতা কিনে দিতে পারি না, ভাল পোশাক কিনে দিতে পারি না।
তিনি জানান, স্বামী জামাল উদ্দিন মারা যাবার পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাদের কোনও খোঁজ খবর রাখেনি। বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থাও ভালো না। অর্থের অভাবে তিন মেয়েকে লেখাপড়া করানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হয়তো মাঝপথে তাদের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা কিংবা বিত্তশালীদের একটু সহায়তা পেলে তিন মেয়ের ভবিষ্যত সুন্দর হবে আশা করেন তিনি।
নুর বেগমের প্রতিবেশী মো. সোলায়মান বলেন, নুর বেগম তিন সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বর্ষাকালে ঘরের ভেতর পানি থৈ থৈ করে। ঠিকমত তাদের খাবার জোটে না। প্রতিবেশিরা যার যার মত করে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করার চেষ্টা করে। পতেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুল কর্তৃপক্ষ যদি নুর বেগমের দুই মেয়েকে বিনাবেতনে লেখা পড়ার করার সুযোগ করে দেয় তাহলে অসহায় পরিবারটির অনেক বড় উপকার হতো।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় পতেঙ্গা এলাকায় এই একটিমাত্র পরিবার, যাদের ঘরে বিদ্যুতের লাইন নেই। বিদ্যুতের ব্যবস্থাও যদি করা যেতো, তাদের মেয়েগুলোর পড়ালেখা করতে সুবিধা হতো।
এসএ/সিপি