তেলের ধাক্কায় চট্টগ্রাম হঠাৎ অস্থির, পেট্রোলপাম্পে দীর্ঘ লাইন, মানুষের ক্ষোভ

ভাড়া না বাড়ালে চট্টগ্রামে গাড়ি চালাবে না মালিকরা

দেশে আবারও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণায় রাতেই চট্টগ্রামজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে। অনেক স্থানে হয়েছে বিক্ষোভও। পেট্রোল পাম্পগুলোর দিকে মোটরসাইকেল, ড্রাম বা বিভিন্ন পাত্র নিয়ে জ্বালানি তেল সরবরাহের জন্য ছুটছে নগরবাসী। তবে শুক্রবার (৫ আগস্ট) মধ্যরাতে দাম বাড়ানোর ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের অধিকাংশ পেট্রোল পাম্পগুলো ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে তালা। বেশি লাভের আশায় নতুন দর কার্যকরের আগে মজুদ থাকা তেল সরবরাহ বন্ধ করে দেয় পাম্পমালিকরা।

তেলের ধাক্কায় চট্টগ্রাম হঠাৎ অস্থির, পেট্রোলপাম্পে দীর্ঘ লাইন, মানুষের ক্ষোভ 1

এদিকে শনিবার (৬ আগস্ট) সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপ। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর যানবাহনের ভাড়ার হার পুনঃনির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত গণপরিবহন চলবে না— এমন ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।

শুক্রবার (৫ আগস্ট) বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দেশে আবারও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়।

নতুন দর অনুসারে, ৮০ টাকার প্রতি লিটার ডিজেল কিনতে এখন দাম পড়বে ১১৪ টাকা, ৮০ টাকার প্রতি লিটার কেরোসিনের দাম দাঁড়িয়েছে ১১৪ টাকা, ৮৬ টাকার প্রতি লিটার পেট্রোল এখন ১৩০ টাকা এবং ৮৯ টাকার প্রতি লিটার অকটেন কিনতে দাম পড়বে ১৩৫ টাকা।

ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে জ্বালানি তেলের নতুন নির্ধারিত দর শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে কার্যকর হওয়ার ঘোষণার সাথে সাথেই আগের মূল্যে তেল সংগ্রহের জন্য চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের ছোটাছুটি শুরু হয়। কেউ মোটরসাইকেলের অকটেন বা পেট্রোল সংগ্রহের জন্য, কেউবা আবার জেনারেটরের জন্য ডিজেল সংগ্রহ করতে ড্রাম বা অন্যান্য পাত্র নিয়ে ছোটেন পেট্রোল পাম্পের দিকে।

পেট্রোলপাম্পগুলোতে তেলের জন্য তৈরি হয় দীর্ঘ লাইন। তবে নতুন দর কার্যকর হওয়ার নির্ধারিত সময় রাত ১২ টার প্রায় ২ থেকে ৩ ঘন্টা আগে থেকেই বন্ধ করে ফেলা হয় নগরের অধিকাংশ পেট্রোল পাম্প। বন্ধ করার আগেই দু একটা পেট্রোল পাম্পে তেল কিনতে ভিড় করলেও চাহিদামত তেল কিনতে পারেনি বলে জানায় অনেকে।

নগরীর দামপাড়ার এসএইচ খান অ্যান্ড সন্স ফিলিং স্টেশনে শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে হঠাৎ তেলের জন্য ছুটে আসা মোটরসাইকেলের ভিড় বেড়ে গেলে হট্টগোল লেগে যায়। এ সময় পাম্প কর্তৃপক্ষ ক্রেতাদের দাবিতে অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রতি মোটরসাইকেলে সর্বোচ্চ ১০০ টাকার তেল বিক্রি করে। এসময় কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে তেল কিনতে না পেরে অনেককেই ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।

নগরীর শাহ আমানত এলাকায় পেট্রোল পাম্পে মোটরসাইকেল নিয়ে তেল সরবরাহ করতে আসা আশরাফুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাতে অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে হঠাৎ জানতে পারলাম আবারও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। মোটরসাইকেলে আগে প্রতি লিটার অকটেন নিতাম ৮৯ টাকা করে, নতুন দামে ৪৬ টাকা বেশি দিয়ে প্রতি লিটার ১৩৫ টাকায় কিনতে হবে। রাত ১২টার পর থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে শুনে রাত ১০ টায় পাম্পে ছুটে এসেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি পাম্প বন্ধ।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে এক সহকর্মী আমাকে ফোন করে জানাল তিনিও তেলের জন্য পাম্পে পাম্পে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরছেন, কিন্তু এখনও তেল নিতে পারেননি। যেটা খোলা আছে সেটাও নাকি তেল দিচ্ছে না। এভাবে হঠাৎ করে লিটার প্রতি এত টাকা বাড়িয়ে দেওয়াতে আমাদের মত মধ্যবিত্তের জন্য দৈনন্দিন জীবন আরও কঠিন হয়ে গেল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগরীর এক পেট্রোল পাম্পের ম্যানেজার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমনিতেই লোডশেডিংয়ের কারণে চট্টগ্রামে ডিজেলের চাহিদা বাড়ার পর থেকে পাম্পে তেলের সরবরাহ কম ছিল। তেল কোম্পানি আমাদের পাম্পে আগে নিয়মিত চার গাড়িতে প্রায় ৩৬ হাজার লিটার জ্বালানি তেল সরবরাহ করত। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে হঠাৎ করে এক গাড়ি কমিয়ে তা ২০ থেকে ২৫ হাজার লিটার করে। হয়তো তারা দাম বৃদ্ধির পর সরবরাহের জন্য তখন থেকে আমাদের কাছে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তাই দাম বাড়ার সাথে সাথে পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যেন রাত ১২ টার পর নতুন দর কার্যকর হলে পাম্পে আগের সরবরাহ করা তেল নতুন বাড়তি দামে বিক্রি করা যায়।’

এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য ও অপারেশন) মুস্তফা কুদরত-ই-ইলাহীকে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

জেএন/এমএফও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!