সন্দ্বীপের ১২ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য তৃণমূলকে পাশ কাটিয়ে সাংসদের পছন্দ মত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। সাংসদের পছন্দমত তালিকা প্রস্তুত করতে গিয়ে বিভিন্ন কৌশলে এই উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নেই আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের নাম দেয়া হয়েছে তালিকার একেবারে শেষে। আর এসব করতে গিয়ে প্রার্থী মনোনায়নের জন্য আওয়ামী লীগের ঘোষনাপত্রের নির্দেশনা যেমন লঙ্গন করা হয়েছে তেমন অবিচার করা হয়েছে দলটির দুঃসময়ের পরীক্ষিত ও জনপ্রিয় নেতাদের সাথে।
আগামী ১১ এপ্রিল সারাদেশের ৩৭১ টি ইউনিয়নের সাথে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার ১২ ইউনিয়নের ভোট গ্রহনের তারিখ ঘোষনা করেছে নির্বাচন কমিশন। দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য এই নির্বাচনে শাসক দল আওয়ামী লীগের মনোনায়নের জন্য ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের সাথে আলোচনা করে একটি প্রাথমিক তালিকা প্রস্তুত করে, উপজেলা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাক্ষর সহ সেই তালিকা ঢাকায় পাঠানোর নির্দেশ দেয়া আছে দলটির ঘোষণা পত্রে।
তৃণমূলকে পাশ কাটিয়ে পছন্দসই প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের আপত্তির মুখে স্থানীয় সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতার ইচ্ছায় সবগুলো ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা করা হয় সন্দ্বীপের উপজেলা চেয়ারম্যানের বাসভবনে। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের প্রাথমিক তালিকার জন্য এই বর্ধিত সভা করার কথা থাকলেও এসব ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোন সভাতেই তেমনটি করা হয়নি। এমনকি কোন আলাপ আলোচনা ছাড়াই ফটোসেশনের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এসব বর্ধিত সভা।
পরে শুধু মাত্র ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারন সম্পাদককে ডেকে নিয়ে এমপির উপস্থিতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার শাহজাহান বিএ ও সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন মিশন এসব ইউনিয়নের প্রার্থী তালিকায় সাক্ষর নেন। এসব তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের কথাও বলতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছে তাদের পক্ষ থেকে।
তাদের মধ্যে একজন সারিকাইত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আশ্রাফ উল্ল্যাহ আসিফ। তালিকা তৈরির সময় অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গেলে মাস্টার শাহজাহান বিএ তাকে থামিয়ে দেন বলে অভিযোগ তার। পরে সভা থেকে বের হয়ে অপমানে ক্ষোভে নিজের ছেলেকে ফোন দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন এই নেতা। ছেলের সাথে আশ্রাফ উল্ল্যাহ আসিফের ফোনালাপের অডিও রেকর্ড চট্টগ্রাম প্রতিদিনের হাতে রয়েছে।
তৃণমূলকে পাশ কাটিয়ে এমপির পছন্দমত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে একেক ইউনিয়নের ক্ষেত্রে একেক রকমের নিয়ম চাপিয়ে দেন সাংসদ মিতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। যেমন মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম উওর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমানকে তালিকায় নিচের দিকে ঠেলে দিতে মাইটভাঙ্গার তালিকা তৈরিতে নিয়ম করা হয় প্রথমে আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম দিয়ে পরে অন্য সংগঠনের নেতাদের নাম দেয়ার। পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় না থাকা অনেক ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে ফরম কিনিয়ে তার নাম দেয়া হয় তালিকার ৬ নম্বরে। অথচ পাশের ইউনিয়ন মুছাপুরে এই নিয়ম পুরোপুরি উল্টো। এমপির ঘনিষ্ঠ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমানকে তালিকায় ২ নম্বরে দিয়ে তার পরে দেয়া হয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি, দপ্তর সম্পাদক সহ অন্য আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম।
একইভাবে মাইটভাঙ্গা ইউনিয়নের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধা বিবেচনায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম ও কর্মসংস্থান বিষয়ক সম্পাদক ফখরুল ইসলামকে ১ নম্বরে রাখা হলেও পাশের ইউনিয়ন সারিকাইত থেকে মনোনায়ন চাওয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও উপজেলা আওয়ামী লিগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাজাহারকে সারিকাইতের তালিকায় ৩ নম্বরে রাখা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সন্দ্বীপের একটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তৃনমূলের সাথে কথা বলে যে তালিকা তৈরির কথা সে তালিকা তৈরি করার বিষয়ে তৃণমূলের কোন মতামতই নেয়া হয়নি। একপেশে ভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকদের ডেকে এমপি সাহেবের মনমত করা তালিকায় সাক্ষর নিয়ে নেয়া হলো। বেশিরভাগ ইউনিয়নেই জনপ্রিয় প্রার্থীদের তালিকার শেষে নাম দেয়া হয়েছে। এমনকি নিজেদের সুবিধামত তালিকা তৈরি করতে একেক ইউনিয়নে একেক নিয়ম হাজির করেন এমপি সাহেব। স্বাভাবিকভাবেই ব্যক্তিগতভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোন সভাপতি সাধারণ সম্পাদক এমপির সাথে দ্বিমত করবেন না। সেই সুযোগটাই তিনি নিয়েছেন।’
এই বিষয়ে জানতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন মিশন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের নির্দেশেই আমরা এসব করেছি।’ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ঘোষনাপত্রের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে এক্ষেত্রে তৃণমূলের অধিকার হরণ এবং সিনিয়র নেতাদেরকে অপমান করা হয়েছে বলে কথা উঠছে এমন কথা বলতেই মিশন বলেন, সংগঠনিক বিষয়ে জানেন না বলেই তারা এসব কথা বলছেন।
এসব বিষয়ে সাংসদ মাহফুজুর রহমান মিতা কোন কথা বলতে রাজি নন বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান আতা বলেন, ‘কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নিব।’
এমএহক