তীব্র গরমে শিশুরা কাবু, চাপ বাড়ছে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে গত এক সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ হাসপাতালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। অতিরিক্ত শিশু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যে শয্যাই খালি হচ্ছে, সেখানে নেওয়া হচ্ছে।
পটিয়া থেকে তিন বছর বয়সী শিশুপুত্র আবরারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তার বাবা নাজিম উদ্দিন। তিনি জানান, অতিরিক্ত গরমের কারণে আবরারের নাক দিয়ে পানি পড়তে থাকে। পরদিন থেকে হালকা কাশি ছাড়াও শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকে সে। সঙ্গে জ্বরও ছিল। প্রথমে তাকে বাড়ির কাছের একটি প্রাইভেট হসপিটালে নিয়ে যাই। অবস্থার অবনতি দেখে আবরারকে নিয়ে এখানে চলে এসেছি।
গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড গরম পড়ছে। এতে বিভিন্ন রোগব্যাধির প্রকোপ বাড়ছে। চিকিৎসকদের মতে, এ ধরনের আবহাওয়া শিশুদের জন্য খুবই মারাত্মক। ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের মতো রোগের প্রকোপ বাড়ে এ সময়। যাকে বলা হয় ‘ভাইরাল ফিভার’ বা মৌসুমী রোগ। মৌসুমী রোগের মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, সর্দি, কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা-বেদনা ইত্যাদি। এসব রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আন্যান্য সময়ের তুলনায় ইদানিং প্রায় কয়েকগুণ বেড়েছে।
চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি কয়েকটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে গিয়ে দেখা গেছে, শিশুরোগী আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রায় সব হাসপাতালে আগের তুলনায় শিশু ওয়ার্ডে কয়েকগুণ বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে। এসব শিশুরোগীর বেশিরভাগই ভাইরাসজনিত জ্বরে ভুগছে। ঋতু পরিবর্তনের এই সময়ে আরএসবি (রেসপিরেটারি সিনসেটিয়াল ভাইরাস) ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত ব্যাধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের প্রকোপ।
এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কারণ ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া একইসঙ্গে আক্রমণ করলে মৃত্যুও হতে পারে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী জানান, শিশু ওয়ার্ডের তিনটি সাধারণ ইউনিটে মোট ৬৫ শয্যার বিপরীতে রোগী ভর্তি থাকে। বিশেষ চারটি ইউনিটসহ সবকটি ইউনিট মিলে শিশু ওয়ার্ডে শিশুরোগীর জন্য মোট শয্যাসংখ্যা ১০২। কিন্তু বর্তমানে চিকিৎসাধীন শিশুরোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০০।
চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালেও গত এক সপ্তাহ ধরে রোগীর চাপ বেড়েছে। এ হাসপাতালে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু ওয়ার্ড রয়েছে। অতিরিক্ত শিশু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যে শয্যাই খালি হচ্ছে, সেখানে নেওয়া হচ্ছে।
এ হাসপাতালের বহির্বিভাগের ইনচার্জ ডা. ফাহিম হাসান রেজা জানান, গত কয়েকদিন ধরে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও খিঁচুনি রোগীর সংখ্যা বেশি আসছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু। অতিরিক্ত চাপ সামলাতে জেনারেল বেডেও তাদের রাখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ড. ধীমান দাশ বলেন, প্রচন্ড গরম কিংবা ঠান্ডাজনিত কারণে সাধারণত রোগব্যাধি বেড়ে যায়। এ থেকে বাঁচার জন্য শিশুকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে খাবার খাওয়াতে হবে। তরলজাতীয় খাবার বেশি খাওয়াতে হবে। মৌসুমী ফলমূল বেশি খাওয়াতে হবে। শিশুকে নিয়ে প্রচন্ড দাবদাহে বের করা যাবে না।
ড. ধীমান দাশ আরো বলেন, আক্রান্ত শিশুর হাঁচি থেকেও ইনফ্লুয়েঞ্জা, প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে যে কোনো শিশু। বড়দের থেকেও ভাইরাস রোগের সংক্রমণের ঝুঁকি তাদের বেশি। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে হঠাৎ কাশি বেড়ে যাওয়া, নাক দিয়ে পানি পড়া ও অল্প জ্বরের সাথে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে। আর এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে ঘর ও শিশুকে সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, শিশুর নাক পরিষ্কার রাখা এবং শিশুর শরীরে গরম না লাগানোর পরামর্শ দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকেও শিশু রোগীর সংখ্যা আগের তুলনায় কয়েক গুণ বেড়েছে।