তিন মাসের ছুটি নিয়ে ১২ মাসেও ফেরেননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
চাকরির ১৫ মাসে কর্মস্থলে উপস্থিত মোটে ২০ দিন!
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে ২০২৩ সালের ৪ মার্চ প্রভাষক পদে নিয়োগ পান সৈয়দ মুসা কাজিম নুরী। পরবর্তীতে একই মাসে যোগদান প্রক্রিয়া ‘অসম্পূর্ণ’ রেখেই তিন মাসের শিক্ষা ছুটিতে বিদেশ চলে যান তিনি। তিন মাসের সেই ছুটি এখন ১২ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি আর কর্মস্থলে যোগ দেননি। এমনকি এ বিষয়ে বিভাগীয় কর্তৃপক্ষকে কোন কিছু জানানওনি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিভাগের পক্ষ থেকে একাধিকবার চিঠি দিলেও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিভাগের একাধিক শিক্ষক জানান, বিভাগে বর্তমানে ৫টি বর্ষে প্রায় ৪০টি কোর্স পড়ানো হয়। শিক্ষক সংকটের কারণে ২০২৩ সালে নতুন করে তিনজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু পাঠদান সহজ করার জন্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও যোগদান করেই ছুটিতে চলে যান সৈয়দ মুসা কাজিম নুরী। ফলে এতগুলো কোর্স পাঁচজন শিক্ষককেই টানতে হয়। এতে একদিকে শিক্ষার্থীদের যেমন ভালোভাবে পাঠদান করা সম্ভব হচ্ছে না, অন্যদিকে শিক্ষকরাও নিজেদের গবেষণায় মনোযোগ দিতে পারছেন না।
ছুটি মেলে উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতায়
ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে যোগদানের ১২ তম দিনে ১ বছরের জন্য পিএইচডি শিক্ষা ছুটির আবেদন করেন সৈয়দ মুসা কাজিম নুরী। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি জরুরি সভা আহ্বান করে। ২০২৩ সালের ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত সভায় নিয়োগপত্রের শর্ত পূরণ না করায় তার শিক্ষা ছুটির আবেদন বিবেচনা না করার সুপারিশ করা হয়। এরপর বিভাগের সভাপতি বরাবর ২৩ মার্চ ওই শিক্ষক ৯০ দিনের শিক্ষা ছুটি চেয়ে আবার আবেদন করেন। কিন্তু বিভাগ কোনো সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে ছুটি নিয়ে নেন ওই শিক্ষক।
যোগদান অসম্পূর্ণ রেখেই বিদেশ পাড়ি
সৈয়দ মূসা কাজেম নুরীকে নিয়োগপত্রের ৮ নম্বর শর্তে বর্তমান গবেষণা/কর্মরত প্রতিষ্ঠান ফিনল্যান্ডের ল্যাপল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মূল ছাড়পত্র জমা দিতে বলা হয়। তবে তিনি মূল ছাড়পত্র জমা না দিয়েই উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতা বলে ছুটি নিয়ে ফিনল্যান্ড পাড়ি জমান।
চার দফা চিঠি চালাচালিও নিস্ফল
এ দিকে ৯০ দিনের শিক্ষা ছুটি শেষ হওয়ার পরও বিভাগে যোগদান না করায় রেজিস্ট্রারকে চার দফা চিঠি দিয়েছে বিভাগ কর্তৃপক্ষ। সর্বপ্রথম ৯০ দিন শেষ হওয়ার এক মাস পর বিভাগে যোগদান না করায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেন বিভাগের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন।
বিভাগীয় সভাপতি চিঠি দেওয়ার পরও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগের পরিকল্পনা কমিটির সিদ্ধান্ত জানিয়ে ওই বছরের ৮ আগস্ট রেজিস্ট্রারকে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেয় বিভাগ কর্তৃপক্ষ।
পরিকল্পনা কমিটি সিদ্ধান্ত আমলে না নেওয়ায় একই বছরের ৬ আগস্ট বিভাগের একাডেমিক কার্যক্রমকে ও সচল রাখার স্বার্থে ওই শিক্ষকের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক জরুরিভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিতে রেজিস্ট্রারকে সুপারিশ করে বিভাগের একাডেমিক কমিটি। যা ২১ আগস্ট রেজিস্ট্রারকে চিঠি দিয়ে জানায় বিভাগের সভাপতি। সর্বশেষ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল চতুর্থ দফায় রেজিস্ট্রারকে চিঠি দেয় বিভাগীয় সভাপতি।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সৈয়দ মুসা কাজিম নুরীকে হোয়াইটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
যা বললেন তাঁরা
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রিমিনোলজি এন্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে ৩ মাসের ছুটি নিয়ে বিদেশ গিয়েছেন বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মুসা কাজিম নুরী। কিন্তু ছুটি শেষ হওয়ার ১২ মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি বিভাগে যোগদান করেননি। এ বিষয়ে তিনি কোন কিছু জানানওনি। আমরা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে কয়েক দফা চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। কর্তৃপক্ষ এখনও দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ নেয়নি।’
সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহ এ বিষয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের রেজিস্ট্রারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কেএম নুর আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছি। তিনি নোটিশের জবাব দিয়েছেন। এই জবাব সিন্ডিকেটে পেশ করা হবে। সিন্ডিকেট পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে।’