তিন পাসপোর্টধারী আজম খান দুবাই শুধু নয়, নারী পাচার করতেন ওমানেও

দেশে তরুণী সংগ্রহের কাজ তদারকি করতেন ফটিকছড়ির সেলিম

দুবাইয়ে হাজারেরও বেশি নারীকে পাচারকারী চট্টগ্রামের আজম খানের রয়েছে তিনটি পাসপোর্ট। একেক দেশে তিনি একেক পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন। দুবাই যাওয়ার পাসপোর্ট ব্যবহার করতেন না ওমান বা সিঙ্গাপুর যাওয়ার সময়। ওমানে যাওয়ার সময় ব্যবহার করতেন আরেক পাসপোর্ট। ওমানের দুটি হোটেলে রয়েছে তার শেয়ার। এছাড়া ওমানের আবির নামক স্থানে রয়েছে ফলের ব্যবসাও।

আজম খানের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন প্রবাসী জানান, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে আজম খানের রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যা ব্যবহার করে দুবাই ও ওমানে নারী পাচার করতেন তিনি। এছাড়া দুবাই থেকে স্বর্ণপাচারের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্কও রয়েছে আজম খানের।

জানা গেছে, আজম খানের নামে ইস্যু করা পাসপোর্টগুলোর একটি হচ্ছে এইচ-০১৬৫১২৮— এটি তার আসল নাম-ঠিকানায় তৈরি পাসপোর্ট। এছাড়া আর-০৫৭৯৪৬৯ নম্বরের পাসপোর্টে তার নাম মোহাম্মদ আজিম উদ্দিন, পিতা মোহাম্মদ আবদুল আলম, মাতা ছবিলা খাতুন এবং বর্তমান ঠিকানা কাজিহাঠা, ডাকঘর ও থানা রায় পাড়া, জেলা রাজশাহী। এ ঠিকানার পাসপোর্টে স্থায়ী ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে গ্রাম ছাতক নগর, ডাকঘর কাটিরহাট, থানা হাটহাজারী, জেলা চট্টগ্রাম। উল্লেখিত দুটি পাসপোর্টের বিপরীতে দুবাই সরকার মামলা দায়ের করেছে দুটি— মামলা নম্বর ৯৫০৩৫ ও ২৩২১৫২।

জানা গেছে, আজম খান দুবাইতে আসা-যাওয়া করতেন এ দুটি পাসপোর্ট ব্যবহার করে। বাংলাদেশ থেকে নারীপাচার করে তাদের যৌনকর্মে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুবাইতে মামলা হয় আজম খানের বিরুদ্ধে। ফলে সে ওই দুটি পাসপোর্ট ব্যবহারকারী ব্যক্তি আজম খানের ওপর দুবাই সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়। কিন্তু আজম খান এর মধ্যেই বানিয়ে নেন আরও একটি পাসপোর্ট। এর নম্বর কিউ-০৩৩৭৯৯২। এ পাসপোর্ট দিয়েই তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগ পর্যন্ত দুবাইতে আসা-যাওয়া করেছেন। তবে তিন নম্বর এই পাসপোর্টে কোন্ ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে সেটা জানা যায়নি।

তিন পাসপোর্ট বানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস চট্টগ্রামের পরিচালক আবু সাঈদ বলেন, বর্তমান সময়ে দেশে তিনটি পাসপোর্ট করা ও রাখার সুযোগ নেই। এক ব্যক্তি এতোগুলো পাসপোর্ট ব্যবহার করা আইনত অপরাধ। তবে এখন ডিজিটাল পাসপোর্ট হয়ে গেছে, কেউ চাইলে ম্যানুয়াল পাসপোর্ট ব্যবহার করতে পারবে না। ডিজিটাল ব্যবহার করতে হবে।

দেশে তরুণী সংগ্রহের কাজ তদারকি করতেন ফটিকছড়ির সেলিম
স্থানীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে আজম খানের অপকর্ম দেখাশোনা করতেন স্থানীয় সন্ত্রাসী সেলিম। এ সেলিমকে দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী সংগ্রহ করতেন আজম খান। চট্টগ্রাম ছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট থেকে বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে নারী সংগ্রহের কাজটি তদারকি করতেন সেলিমই। সংগ্রহ করা নারীদের পাসপোর্ট তৈরি করে বিমানবন্দর পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্বও তারই ছিল। দুবাই থেকে এসব নারীর ভিসাসহ যাবতীয় কাগজপত্র দেশে সেলিমের কাছেই পৌঁছাতেন আজম খান।

সেলিম দীর্ঘদিন ধরেই আজমের একান্ত সহচর হিসেবে এলাকায় পরিচিত। ফটিকছড়ির পৌর এলাকায় আজমের পাশের বাড়িটিই সেলিমের বাড়ি।

স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, আজম খানের সহচর হিসেবে সেলিম এলাকায় পরিচিত। ফটিকছড়ির সন্ত্রাসী ওসমান বাহিনীর সেকেন্ড-ইন কমান্ড থাকাকালে আজমের অস্ত্র বহন করতো সেলিম। এলাকায় তার একটি নিজস্ব বাহিনীও ছিল। সপ্তাহখানেক আগে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আত্মগোপনে চলে যায় সেলিম।

জানা যায়, সেলিমের বিরুদ্ধে ফটিকছড়ি থানা ও নগরের অন্যান্য থানায় বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। ঢাকায় সিআইডির হাতে আজম খান গ্রেফতারের পর সেই সেলিম গা ঢাকা দিয়েছে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘ঢাকায় গ্রেফতার হওয়ার পর আজম খানের বিরুদ্ধে সব তথ্য ঢাকা প্রেরণ করা হচ্ছে। তার সহযোগীদের সম্পর্কেও খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।’

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!