তামিম হত্যার প্রতিবাদে চুয়েটে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানববন্ধন

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তানজিল জাহান ইসলাম তামিম হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

রোববার (২০ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতা চত্ত্বরের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

জানা গেছে, চুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর তামিম যোগ দেন দীপ্ত টিভির সম্প্রচার বিভাগে। ঢাকায় মহানগর প্রজেক্টের বাড়ির ৭ম তলায় দুটি ফ্ল্যাটে পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। প্লিজেন্ট প্রপার্টিজ লিমিটেড ডেভেলপার কোম্পানির তাদের মোট পাঁচটি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেওয়ায় বছরখানেক আগে এ ব্যাপারে একটি মামলাও করেন তামিম।

গত ৯ অক্টোবর ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে একটি সমঝোতা হয় এবং অষ্টম তলায় তাকে দুটি ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়। সেই অনুযায়ী ১০ অক্টোবর সকালে অষ্টম তলার ফ্ল্যাটে লেবার দিয়ে কিছু কাজ করাচ্ছিলেন তামিম। তখন হঠাৎ ডেভেলপার কোম্পানির ব্যবস্থাপক আব্দুল লতিফ মির্জা, ফ্ল্যাট মালিক মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মামুন, ডেভেলপার কোম্পানির কর্ণধার বিএনপি নেতা রবিউল আলম এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনী ফ্ল্যাটে অতর্কিত হামলা চালায়। তামিমকে মারধর করতে থাকে তারা।

চিৎকার শুনে তামিমের বড় ভাই সামভির জাহান ইসলাম ছুটে এলে তাকেও মারধর করে একপর্যায়ে চলে যায় তারা। তখন ৯৯৯ এ কল করে সহায়তা চান ভুক্তভোগীরা। এর মধ্যে ভীষণ অসুস্থবোধ করতে থাকেন তামিম। মনোয়ারা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তামিমকে মৃত ঘোষণা করেন।

মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রহমান ভূইঞা বলেন, আমাদের চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী ও গ্রাজুয়েট তামিমকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, আজকের বাংলাদেশে এ বিষয়টি মোটেই কাম্য নয়। আমরা এমন ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি ও যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতিও আমরা সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

তিনি বলেন, সমাজের এমন ব্যক্তিরা যদি এভাবে হারিয়ে যায়, তাহলে এ সমাজের দায়িত্ব কারা নেবে? আমাদের প্রশ্ন, দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির এত অবনতি কেন? আমরা অতিসত্বর হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় আনতে চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. জিএম সাদিকুল ইসলাম বলেন, চুয়েটে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা কর্মচারী যারা আছেন, আমরা সবাই একটা পরিবার। সকলের বিপদেই আমরা পাশে দাঁড়াব। সম্প্রতি যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই ন্যাক্কারজনক। সামান্য একটা ফ্ল্যাটের বিরোধের জেরে একজন প্রকৌশলীকে এভাবে প্রাণ দিতে হলো। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা সবাই মিলে এর প্রতিবাদ চালিয়ে যাব, যতক্ষণ পর্যন্ত এর সুষ্ঠু বিচার না পাওয়া যায়। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, আমরা চাই ঘটনার হুকুমদাতাসহ যারা দায়ী, তারা যে মতাদর্শেরই হোক, তাদেরকে যেন গ্রেপ্তার করা হয়।

স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. জামাল উদ্দীন বলেন, আমরা চুয়েটের সাবেক শিক্ষার্থী তানজিল জাহান তামিমের হত্যার বিচারের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি। দোষীদের গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা যেন করা হয়।

কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি প্রকৌশলী সৈয়দ মো. ইকরাম বলেন, দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমাদেরকে এখানে এভাবে দাঁড়াতে হবে আমরা ভাবিনি। কর্মকর্তা সমিতির পক্ষ থেকে এমন হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ বর্বেরোচিত হত্যা কখনও কাম্য ছিল না। সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীকে অনুরোধ করব, যদি নিয়মবহির্ভূত হত্যা বন্ধ করা না যায়, তবে কোনো উন্নতিই সফলতা বয়ে আনবে না। সেজন্য এ ঘটনায় আমরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত সকলকে যেন বিচারের আওতায় আনা হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।

এর আগে ১৮ অক্টোবরও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে চুয়েটের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং সাধারণ জনতার উপস্থিতিতে প্রকৌশলী ও নাগরিক সমাজ মানববন্ধন করে।

জেডএস/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm