তামিম-মেহেদির ম্যাজিকে ঢাকার জয়ের চাকা চলছেই

মেহেদীর টানা দ্বিতীয় ফিফটি, ফিফটির দেখা পেলেন তামিমও

অসুস্থতা থেকে তামিম ইকবাল ফিরতেই ঢাকার জয়ের চাকা আবার চলতে শুরু করেছে। আগেরদিন তামিমের ফেরার ম্যাচে কুমিল্লার বিপক্ষে সবটুকু আলো কেড়ে নিয়ে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে আলোর বিকিরণ ঘটিয়েছিলেন তরুণ মেহেদী হাসান। ব্যাটে-বলে সমানতালে লড়ে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার বগলদাবা করে মাঠ ছেড়েছিলেন মেহেদী। সেদিন তামিমের অপেক্ষাকৃত ধীরলয়ের ত্রিশোর্ধ ইনিংসটি মেহেদীর ঝড়ের সামনে আরো বেশি দৃষ্টিকটু লেগেছিল। তাই মঙ্গলবার বিপিএলের চট্টগ্রাম পর্বের শেষ দিনের প্রথম ম্যাচে সিলেটের দেয়া ১৭৫ রানের স্কোর তাড়া করতে নেমে শুরু থেকে হাত খুলে খেলা শুরু করেন তামিম। আরেক ওপেনার বিজয়কে নিয়ে গড়েন ৫৮ রানের পার্টনারশিপ। বিজয়ের বিদায়ের পর ওয়ানডাউনে আবারও ব্যাট হাতে নামেন মেহেদী হাসান। তিনি নেমেই যেন আগেরদিন যেখানে শেষ করেছিলেন সেখান থেকেই শুরু করলেন, তুলে নেন টানা দ্বিতীয় ফিফটি। ফলে সিলেটের টিলাসম রান পাড়ি দিতে কোন বেগ পেতে হয়নি ঢাকাকে।

মাত্র ২৪ ঘন্টা আগে এক ম্যাচে ওয়ানডাউনে প্রমোশন পেয়ে ঝটপট হাফসেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলের জয়ে বড় ভুমিকা রাখা অফস্পিনার মেহেদি হাসান পরের ম্যাচেও করেন একই কীর্তি! ২৮ বলে ৫৬ রান। ৫ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কা। সিলেট থান্ডারের বিপক্ষে ঢাকা প্লাটুনের ৮ উইকেটের বড় জয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রইলো মেহেদি হাসানের চমকপ্রদ ব্যাটিং! টানা দুই ম্যাচে যখন ব্যাট হাতে শক্তিমান হয়ে উঠা নিশ্চয়ই কোন ফ্লুক নয়। টি-টোয়েন্টি ধাঁতের ব্যাটিংটা ভালই জানেন মেহেদি। এবং সেই সঙ্গে ব্যাটিংয়ে চ্যালেঞ্জ জেতার সাহসও তার আছে বেশ-দুই ম্যাচে তারই প্রমাণ রাখলেন মেহেদি হাসান।

সামনের দিকে অনেকখানি সরে গিয়ে প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন মেহেদী হাসান। ঠিকমতো ব্যাটে বল লাগাতে না পারায় জ্বলে উঠে স্টাম্পের বেল। অবশ্য তার আগেই টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তাঁর ব্যাটের তাণ্ডব উপভোগ করে চট্টগ্রামের দর্শকরা। ছবি: আজীম অনন
সামনের দিকে অনেকখানি সরে গিয়ে প্যাডেল সুইপ করতে চেয়েছিলেন মেহেদী হাসান। ঠিকমতো ব্যাটে বল লাগাতে না পারায় জ্বলে উঠে স্টাম্পের বেল। অবশ্য তার আগেই টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তাঁর ব্যাটের তাণ্ডব উপভোগ করে চট্টগ্রামের দর্শকরা। ছবি: আজীম অনন

সিলেট থান্ডারের ১৭৪ রানের জবাব দিতে নেমে ঢাকা প্লাটুন তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়ের ওপেনিং জুটিতে ম্যাচ জয়ের প্রথম স্তর পার করে। ২৩ বলে ৩২ রান করে এনামুল হক ডাগআউটে ফেরার পর আগের ম্যাচের মতো এবারো প্রমোশন পেয়ে মাঠে নামেন মেহেদি হাসান। এবং এবারো সেই আগের ম্যাচের কীর্তি! ব্যাটিংয়ে নেমেই মেহেদির ঝড়ের শুরু। মাত্র ২৩ বলে তুলে নিলেন হাফসেঞ্চুরি। ২৮ বলে ৫৬ রান করে মেহেদি যখন আউট হয়ে ফিরছেন তখন ম্যাচ জয় থেকে ৩০ রান দুরে দাড়িয়ে ঢাকা প্লাটুন। ম্যাচ জয়ের বাকি কাজটুকু ঢাকা সুসম্পন্ন করে তামিম ইকবালের হার না ৬০ রানের হাফসেঞ্চুরি এবং জাকের আলীর ১১ বলে তোলা অপরাজিত ২২ রানের সুবাদে। ৮ উইকেটে এই ম্যাচ জিতল ঢাকা ৯ বল বাকি থাকতে।

মেহেদি হাসান যখন ব্যাট করতে নামেন তখন তামিম ইকবাল খেলছেন ২০ বলে ২৩ রান নিয়ে। দেখতে না দেখতেই তামিমের রান ছুঁয়ে ফেললেন মেহেদি হাসান। ৩৯ বলে তামিম ইকবাল তার হাফসেঞ্চুরির আনন্দে ব্যাট তুললেন। ঠিক তার তিন বল পরেই নিজের হাফসেঞ্চুরির আনন্দে মেতে উঠলেন মেহেদি হাসানও।

এর আগে বঙ্গবন্ধু বিপিএলের ১৯তম ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেক। ফলে আগে বোলিং শুরু করে মাশরাফি বিন মুর্তজার ঢাকা। শুরুতেই গেল ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান আন্দ্রে ফ্লেচারকে তুলে নিয়ে দলকে সাফল্য এনে দেন মেহেদী হাসান। পরে জনসন চার্লসকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন আবদুল মজিদ। ক্রিজে সেট হয়ে যান তারা। এসময়ে রক্ষণাত্মক ছিলেন মজিদ। তবে খোলস ছেড়ে বের হতে গিয়ে ধরা খান তিনি। শহীদ আফ্রিদির বলে বিদান নেন এ ওপেনার।

সিলেটের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেও জ্বলে উঠলেন জনসন চার্লস। তবুও মিঠুন ছাড়া অন্য কেউ বড় ইনিংস খেলতে না পারায় সিলেটকে ১৭৪ রানেই সন্ত্বোষ্ট থাকতে হয়। ছবি: আজীম অনন
সিলেটের হয়ে দ্বিতীয় ম্যাচেও জ্বলে উঠলেন জনসন চার্লস। তবুও মিঠুন ছাড়া অন্য কেউ বড় ইনিংস খেলতে না পারায় সিলেটকে ১৭৪ রানেই সন্ত্বোষ্ট থাকতে হয়। ছবি: আজীম অনন

খানিক বিরতি দিয়ে ফিরে যান টপঅর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান। তবে থেকে যান চার্লস। ঢাকা বোলারদের ওপর রীতিমতো তাণ্ডব চালান তিনি। পথিমধ্যে আসরে দ্বিতীয় ফিফটি তুলে নেন এ ক্যারিবিয়ান। এরপরও তার ঝড় চলে। তাতে দ্রুতগতিতে ছোটে সিলেট। তবে হঠাৎই থেমে যান চার্লস। তার তাণ্ডব থামান শাদাব খান। ফেরার আগে ৪৫ বলে ৮ ছক্কার বিপরীতে ৩ চারে ৭৩ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলেন তিনি। চালর্সকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে যাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন এরপর দলের হাল ধরেন। তবে তাকে সমর্থন জোগাতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন। আফ্রিদির শিকার হয়ে ফেরেন তিনি।

পরে মিঠুনকে যোগ্য সহযোদ্ধার সমর্থন দেন শেরফান রাদারফোর্ড। শেষদিকে দুজনই ঝড় তোলেন। তাতে প্রত্যাশানুযায়ী সংগ্রহের পথে এগিয়ে যায় সিলেট। শেষ অবধি নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ১৭৪ রান তুলতে সক্ষম হয় তারা। ৩১ বলে ৪ ছক্কার বিপরীতে ১ চারে ৪৯ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন মিঠুন। আর ২৮ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৮ রানের হার না মানা গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেন রাদারফোর্ড। ঢাকার হয়ে আফ্রিদি নেন সর্বোচ্চ ২ উইকেট।

বঙ্গবন্ধু বিপিএলে ঢাকা প্লাটুন ৬ ম্যাচের ৪টিতে জিতে ৮ পয়েন্ট নিয়ে এখন টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে। আর সমান সংখ্যক ম্যাচে মাত্র ১টি জয় ও ৫টি হার নিয়ে সিলেট থান্ডার সাত দলের মধ্যে এখন ষষ্ঠ অবস্থানে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
সিলেট থান্ডার: ১৭৪/৪(২০ ওভারে, জনসন ৭৩, মিঠুন ৪৯*, রদারফোর্ড ৩৮*, আফ্রিদি ২/২৬, মেহেদি ১/৩৩, শাদাব খান ১/২৩)।
ঢাকা প্লাটুন: ১৭৫/২ (১৮.৩ ওভারে, এনামুল ৩২, তামিম ইকবাল ৬০*, মেহেদি হাসান ৫৬, জাকের আলী ২২*, মোসাদ্দেক ১/৩০, এবাদত ১/২৪)।
ফল: ঢাকা ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মেহেদি হাসান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!