তাইজুলের বোলিং ভেল্কি, পাকিস্তানকে অলআউট করে লিড নিয়েও স্বস্তিতে নেই বাংলাদেশ

চট্টগ্রাম টেস্টে পাকিস্তানের দুই ওপেনারের ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিল, বিশাল লিডের নিচে চাপা পড়তে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু পাকিস্তানকে সে পথে হাঁটতে দেননি বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তার বোলিং ভেল্কিতে পাকিস্তান অলআউট হয়ে যায় ২৮৬ রানে। তাইজুল নেন ৭ উইকেট। তাতে করে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ৪৪ রানের লিড।

তবে দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতে আবারও হোঁচট খায় বাংলাদেশের ইনিংস। প্রথম ইনিংসের মতো আবারও জুটি গড়তে পারেননি ওপেনাররা। ব্যর্থ হয়েছেন শান্ত, অধিনায়ক মুমিনুলও। তাতে করে দলীয় রান ৩০ হওয়ার আগেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ৪ উইকেট। এরপর মুশফিক ও অভিষিক্ত রাব্বি তৃতীয় দিন শেষ করেছেন আর কোন বিপদ ঘটতে না দিয়ে। ফলে তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের লিড গিয়ে দাঁড়ায় ৮৩ রানে। মুশফিক ১২ রানে ও রাব্বি ৮ রানে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করবে।

১৪৫ রানে তৃতীয় দিন শুরু করা পাকিস্তান দল সকালের সেশনে ৫৮ রান তুলতে হারায় ৪ উইকেট। যেখানে ৩ উইকেট নেন তাইজুল। দ্বিতীয় সেশনে ফিরেও বাজিমাত এই বাঁহাতি স্পিনারের। পাঁচ উইকেটের স্বাদ পাওয়ার পাশাপাশি ৭ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে আটকে দেন ২৮৬ রানে। এতে প্রথম ইনিংসে ৩৩০ রান করা বাংলাদেশ দল দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করবে ৪৪ রানের লিড হাতে নিয়ে।

ম্যাচের আগের দুদিন সকালের সেশন বাদ দিলে বাকি চার সেশনে কোন উইকেট পড়েনি দুই দলের। আজ এই সমীকরণের মুখে যেন ঝামা ঘসে দিলেন বাংলাদেশি বোলাররা। বাংলাদেশের থেকে ১২৭ রান পিছিয়ে অর্থাৎ দলীয় স্কোর ২০৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশনের খেলা শুরু করেন আবিদ আলী (১২৭) ও মোহাম্মদ রিজওয়ান (৫)। তাদের সুবিধা করতে দেননি স্বাগতিকরা।

শুরুটা হয় রিজওয়ানকে দিয়ে। সেশনের তৃতীয় ওভারে সফরকারী শিবিরে আঘাত হানেন পেসার এবাদত হোসেন। অফ স্টাম্পে টানা আউট সু্ইং করা এবাদত হঠাৎ করেন ইনসুইং। রিজওয়ানের ব‍্যাট এড়িয়ে লাগে প‍্যাডে। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ না নিয়ে সেই ৫ রানেই ফিরে যান বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছোটানো রিজওয়ান। ভাঙে ৭৬ বল স্থায়ী ২৫ রানের জুটি।

এরপর ইনিংসের ৯৪ ও ৯৬তম ওভারে জোড়া আঘাত তাইজুলের। বাংলাদেশ দলের গলার কাটা বনে যাওয়া আবিদ আলী প্রথম সেশনে ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে স্বাগতিক শিবিরের ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়ান। ৮০তম ওভারের একবার জীবন পান। দ্বিতীয় সেশনের শুরুতে আবিদের একটি ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি ইয়াসির আলী। এই ওপেনারের ব্যাটে যখন শঙ্কার মেঘ জমছিল, তখন ত্রাতার ভূমিকায় তাইজুল।

৯৪তম ওভারের তৃতীয় বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন আবিদকে। আম্পায়ারের দেওয়া সিদ্ধান্তে চ্যালেঞ্জ জানিয়েও পার পারননি তিনি। ১৩৩ রানে ফিরতে হয় আবিদকে। ২৮২ বলের ইনিংসটি সাজান ১২টি চার ও ১টি ছয়ের মারে। নিজের করা এরপরের ওভারে হাসান আলীকে স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন তাইজুল। ঘূর্ণি বলে হাসানকে জায়গা ছেড়ে বের হতে বাধ্য করেন। বিচক্ষণতার সঙ্গে সুযোগটি কাজে লাগান লিটন।

হাসান ১২ রানে আউট হওয়ার পর সাজিদ খানকে ফেরানোর দায়িত্ব নেন এবাদত। দ্বিতীয় সেশনের পানি পানের বিরতির আগে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে উইকেট উপড়ে দেন। সাজিদ ফেরেন ৫ রান করে। ৪ উইকেট হারিয়ে ২০৩ রানে দ্বিতীয় সেশন শুরু করা পাকিস্তান দল মুহূর্তেই ২৪০ রান তুলতে হারিয়ে বসে ৮ উইকেট।

সুবিধা করতে পারেননি বাকিরাও। আবার দৃশ্যপটে সেই তাইজুল। নোমান আলীকে লেগবিফরের ফাঁদে ফেলেন নিজের ৪১তম ওভারে। যদিও নোমানের শারীরিক ভাষ্য দেখা অনুমান করা গেল, বল প্যাডে লাগার আগে ব্যাট ছুয়ে গেছে। নোমানকে ৮ রানে সঘরের পথ দেখান তাইজুল।

অন্যপ্রান্তে অবশ্য রান বাড়ানোর কাজ অব্যাহত রাখেন ফাহিম আশরাফ। শেষ উইকেট জুটিতে তার সঙ্গে যোগ দেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। পার্টনারশিপ জমিয়ে তোলেন দুজন। ৭২ বল খেলে যোগ করেন ২৯ রান। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফাহিম ৩৮ রান করে তাইজুলের সপ্তম শিকারে পরিণত হলে ২৮৬ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। এতে প্রথম ইনিংসে ৪৪ রানের লিড পায় বাংলাদেশ দল।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!