দীর্ঘসময় ধরে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে বিশ্বরেকর্ড সৃষ্টিকারী পন্ডিত সুদর্শন দাশের তবলার বোল শুনল দর্শকরা। নগরীর থিয়েটার ইনিস্টিউটে লন্ডন তবলা এন্ড ঢোল একাডেমির বাংলাদেশ শাখা শিক্ষার্থীদের মাঝে সনদপত্র ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তবলা বাজিয়ে শোনান তিনি।
সোমবার (১০ জানুয়ারি) অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের সন্তান ব্যারিস্টার পন্ডিত সুদর্শন দাশকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পর লন্ডন তবলা এন্ড ঢোল একাডেমি বাংলাদেশ শাখার শিক্ষার্থীদের মনোজ্ঞ সাংষ্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পরে পন্ডিত সুর্দশনের একক তবলা পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধ করে।
পন্ডিত সুদর্শনের বাবা অমূল্য রঞ্জন দাশের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর বেনু কুমার দে, প্রধান বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর সুধীর বিকাশ দেব।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য গীতিকার ও ছড়াকার অশোক কান্তি চৌধুরী। অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য প্রফেসর ড. সরোজ কান্তি সিংহ হাজারী।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পন্ডিত সুর্দশন চট্টগ্রামের গর্ব। তবলা ও পড়ালেখার প্রতি তার অধ্যাবসায় তাকে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।
শিমুল নন্দীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার একরাম হোসেন,আনোয়ার হোসেন ও তবলা প্রশিক্ষক শ্যামল দত্ত, তবলা এন্ড ঢোল একাডেমির ডাইরেক্টর উত্তম কুমার দাশ, সাধারন সম্পাদক প্রবাল চৌধুরী।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর লন্ডনে একটানা ১৬ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে ড্রাম বাজিয়ে বিশ্বের দীর্ঘসময় ধরে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর রেকর্ডটি গড়েন তিনি। এর আগে ২০১৬ সালে লংগেস্ট তবলা ম্যারাথনে টানা ৫৫৭ ঘণ্টা ১১ মিনিট তবলা বাজিয়ে প্রথম রেকর্ডটি গড়েন তিনি।
এরপর ২০১৭ সালে টানা ২৭ ঘণ্টা ঢোল বাজিয়ে, ২০১৮ সালে টানা ১৪ ঘন্টা ড্রাম বাজিয়ে মোট পাঁচটি বিশ্বরেকর্ড ঝুলিতে ভরেন চট্টগ্রামের এই কৃতি সন্তান।
সুদর্শন দাশের পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার কালিয়াইশ ইউনিয়নে। তবে তার জন্ম চট্টগ্রাম নগরীর ফিরিঙ্গিবাজারে। পণ্ডিত সুদর্শন যুক্তরাজ্যের পূর্ব লন্ডনের তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমির অধ্যক্ষ।
তার প্রতিষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা বাদ্যযন্ত্রে তাল তোলার কসরত শেখেন। পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস, নিউহ্যাম এবং রেড ব্রিজ কাউন্সিলের অধীনে তিনি স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ‘মিউজিক ইন্সপেক্টর’ হিসেবে কাজ করেন।
চট্টগ্রামের আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমিতে সুদর্শনের তবলায় হাতেখড়ি হয় চার বছর বয়সে। ১৯৯০ সালে ফুলকুঁড়ি আয়োজিত এক প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক পাওয়ার দুই বছরের মাথায় শান্তিনিকেতনে যান পণ্ডিত বিজন বিহারি চ্যাটার্জির কাছে প্রশিক্ষণ নিতে। সেখানেই ১৯৯৮ সালে মেলে ‘তবলাবিশারদ’ উপাধি।
পরে আইন পড়তে লন্ডন গেলেও তবলার নেশা তাকে ছাড়েনি। ২০০৪ সালে নিউহ্যাম এলাকায় ‘তবলা অ্যান্ড ঢোল একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন সুদর্শন। ২০১১ সালে তার ‘লার্ন টু প্লে তবলা’ ডিভিডি আকারে প্রকাশিত হয়। দুই বছর পর বাজারে আসে ‘লার্ন টু প্লে তবলা উইথ মিউজিক’।
চ্যানেল ফোর, বিবিসি টেলিভিশন, স্কাই টিভি ও ব্রাজিলের ফিনিক্স টেলিভিশনে তবলা বাজানো সুদর্শনের রয়েছে ১০০টির বেশি কনসার্ট ও পুরস্কার বিতরণীতে বাজানোর অভিজ্ঞতা।
কেএস