তথ্য ফর্মের একটি প্রশ্নই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে বিরোধের মূলে, জানালেন নাছির

চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া নালিশের মীমাংসা হচ্ছে ঢাকায়

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে কেন্দ্রে জমা পড়া নালিশের মীমাংসা করতে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও নালিশ দেওয়া নেতাদের নিয়ে ঢাকায় বৈঠকের উদ্যোগ নিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা ঢাকায় পৌঁছেছেন। শনিবার (১৫ জানুয়ারি) বিকেলে তারা ঢাকায় পৌঁছান।

জানা গেছে, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আগে সম্মেলন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়ে এই সভায় আলোচনা হবে।

চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ বলেন, ওয়ার্ডের সম্মেলনগুলো কিভাবে করা হবে, সে বিষয়ে কথা বলতে শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে। বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি থেকে শুরু করে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পর্যন্ত সব নেতাকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

সভায় যোগ দিতে নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ঢাকায় গেছেন শনিবার। তাদের সাথে নগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী ও সহ সভাপতি এডভোকেট সুনীল সরকারও ছিলেন।

চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলন নিয়ে শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। ইউনিট সম্মেলনের শুরু থেকেই নগর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা এই সম্মেলনগুলোর প্রকাশ্যে বিরোধিতা করে আসছিলেন।

সম্মেলন প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয় নেতাদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী উল্লেখযোগ্য। তাদের সকলেই এই সভায় অংশগ্রহণ করার জন্য বর্তমানে ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

তারা নগরের ইউনিট সম্মেলনে গঠনতান্ত্রিক নিয়ম না মানা এবং সদস্য করার ক্ষেত্রে যাচাই-বাছাই করা হয়নি বলে দাবি করেন। ঢাকায় উপস্থিত হয়ে তারা কেন্দ্রীয় নেতাদের মৌখিক ও লিখিতভাবে অভিযোগ জানান।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র থেকে ইউনিট সম্মেলন শেষ করে ওয়ার্ড সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর দুই পক্ষের দূরত্ব কমাতে ঢাকায় রোববারের এই বৈঠক ডাকা হল।

তবে এসব অভিযোগের যৌক্তিকতা নেই দাবি করে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত অনুসারে নগর আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক করে ইউনিট সম্মেলন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এমনকি তা স্থানীয় দৈনিকগুলোতে ফলাও করে তুলে ধরা হয়। তখনও তাদের কোনো প্রকাশ্যে আপত্তি নেই। ইউনিট সম্মেলনগুলোতে তাদের বেশ কয়েকজনের উপস্থিতিও ছিল। ইউনিট সম্মেলন যখন শেষের দিকে— এখন কেন অভিযোগ করছেন তা তো বুঝতে পারছি না।’

এক্ষেত্রে অভিযোগকারীরাই দলীয় সিদ্ধান্তকে অসম্মান করে ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে— এমন মন্তব্য করে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘সম্মেলনের প্রতিটা পদক্ষেপ দলের গঠনতন্ত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী হয়েছে। ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং, সম্পাদকমণ্ডলীর মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একেক ওয়ার্ডে একেকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সব কার্যক্রম হয়েছে দলীয় কার্যালয়ে। দলের মত দল চললে যদি কারও সমস্যা হয়, তাহলে ভেবে নিতে হবে তারা কারও ব্যক্তিস্বার্থের কূটকৌশলে নিজেদের স্বকীয়তাকে বিক্রি করে দিয়েছে।’

এক্ষেত্রে তৃণমূলে আওয়ামী লীগের সদস্য ফরমের পাশাপাশি নগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে একটি যাচাই ফরমও যুক্ত করা হয়। যে ফরম নিয়েও অভিযোগ ছিল ওই পক্ষের। সে ফরমের বিষয়ে জানতে চাইলে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, অনুপ্রবেশকারী কেউ আছে কিনা সেটা বের করতে আমরা ওই ফরম দিয়েছি। এখন আমাদের তথ্য ফর্মে একটি কলাম আছে। যেখানে পূর্বে কোনো দল করলে তার নাম ও পদবি উল্লেখ করতে হয়। এটার দেওয়ার পর থেকে অনেকের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।’

খানিকটা ঠাট্টার সুরে আ জ ম নাছির সেই গাত্রদাহের কারণও তুলে ধরে বলেন, ‘অনেকেই বলেন যারা এসব বিরোধিতা করছে তাদের অনেকে নাকি আগে রাজ্জাকী বাকশাল, বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন, জাসদ, চিনি জাফরের দল থেকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে। এই কারণে ওই ফরমের বিষয়টি তাদের আঘাত করেছে।’

তবে কোনোভাবেই এসব বিরোধিতাকারীদের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী মানতে চান না জানিয়ে আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, ‘যারা এখন নিজেদের মহিউদ্দিন ভাইয়ের খুব বড় ভক্ত দাবি করছে, তারাই তো মহিউদ্দিন ভাই-দানু ভাইয়ের কমিটি ভেঙে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিল। মহিউদ্দিন ভাইকে স্বৈরাচারী-যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে আঁতাতকারী বলতে দ্বিধা করেনি তারা। এখন আবার প্রেমিক বনে যেতেও দেরি নেই তাদের।’

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!