তথ্যমন্ত্রীর উদ্যোগ/ সেই মুক্তার অ-বাক পৃথিবী ভরলো নতুন সুসংবাদে

0

তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদের উদ্যোগে বাংলাদেশ টেলিভিশনে চাকরি পেলেন আফরোজা মুক্তা, যার পরিবারের সবাই—বাবা-মা-ভাই মূক ও বধির। চার সদস্যের এই পরিবারের একমাত্র স্বাভাবিক মানুষ— মুক্তা। কথা বলতে পারেন তিনি, শুনতেও। মুক্তা যেমন কখনও তার বাবা-মার কাছ থেকে নিজের নামটি শুনতে পাননি। বাবা-মাও একইভাবে মুক্তার কণ্ঠ থেকে উচ্চারিত ভালোবাসার মা কিংবা বাবা ডাক শুনতে পাননি। সন্তানদের প্রতি কণ্ঠধ্বনিতে ভালোবাসার যে প্রকাশ—সেটা কখনও দেখাতে পারেননি বাবা-মা।

মুক্তার জীবনকাহিনী নিয়ে ২৫ মে চট্টগ্রাম প্রতিদিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

ইশারা ভাষার উপস্থাপিকা হিসেবেই বাংলাদেশ টেলিভিশনে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন মুক্তা। আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-অর-রশীদ মুক্তাকে নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

s alam president – mobile

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মুক্তা বলেন, ‘আমি মাননীয় তথ্যমন্ত্রীর প্রতি কিভাবে কৃতজ্ঞতা জানাবো বলতে পারছি না। মাননীয় মন্ত্রী সন্তানের মতো আমায় কাছে ডেকে আমার কথা শুনেছেন। প্রতিটি কথা গুরুত্ব দিয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। ইশারা ভাষায় আমি যে ক্যারিয়ার গড়ার স্বপ্ন দেখেছি সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন মাননীয় তথ্যমন্ত্রী। তথ্যমন্ত্রীর আন্তরিকতা আর ভালোবাসার কারনেই একটি প্রতিবন্ধি পরিবারের সদস্য হিসেবে আমার বাবা মায়ের সারাজীবনের দুঃখ মোচন হতে যাচ্ছে।’

চার সদস্যের এই পরিবারের একমাত্র স্বাভাবিক মানুষ— মুক্তা।
চার সদস্যের এই পরিবারের একমাত্র স্বাভাবিক মানুষ— মুক্তা।

এমন একটি পরিবারে বড় হয়ে উঠছেন মুক্তা—যেখানে কেবল নিঃশব্দ ইশারা ভাষার ভর করেই শৈশব থেকে কৈশোর আর কৈশোর থেকে তারুণ্য কেটেছে। বর্তমানে চট্টগ্রামের মহসিন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষের পর্যায়ে থাকা মুক্তাকে এই পর্যন্ত বড় করে তুলতে তার বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী পিতাকে কম যুদ্ধ করতে হয়নি। যুদ্ধ করছেন এখনও। নিজে বাসায় দর্জির কাজ করে সন্তানদের মানুষ করছেন। নিজে কথা বলতে বা শুনতে না পেলেও পরিবারে একমাত্র কথা বলতে ও শুনতে পারা মুক্তা জীবনে অনেক সাফল্য পাবে এই আশা বুকে পুষে রেখেছেন। বাবা মায়ের সাথে ইশারা ভাষায় কথা বলতে বলতে মুক্তার কাছে ইশারা ভাষাই এখন সব কিছু। এই ভাষা নিয়ে পৌঁছে গেছেন প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রীর পাশে থেকে অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সরাসরি ইশারা ভাষাতে অনুবাদ করেছেন অজস্র অতিথির সামনে।

Yakub Group

পুরো নাম আফরোজা খাতুন মুক্তা। বয়স ২০ পেরিয়েছে সদ্য। এই ২০ বছরের জীবনেই অনেক যুদ্ধ দেখেছেন বড় হয়ে উঠতে। জন্ম নিয়েই মা-বাবার কাছ থেকে কথা বলা শেখার প্রথম বুলি শুনতে পাওয়ার কথা—এমন সৌভাগ্য মুক্তার হয়নি। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার কুয়াইশ ভরাপুকুর গ্রামের আফজল তালুকদার বাড়িতে মুক্তাদের পরিবারের বসবাস। এটি মুক্তার নানাবাড়ি। এখানেই জন্মেছেন। এখানেই বেড়ে উঠেছেন। আছেন এখনও এখানেই। মুক্তার বাবা মনজুরুল আলম বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। নিজের বাসায় দর্জির কাজ করে তিনি সংসার চালান কোনভাবে। মুক্তার মা আরেফা খাতুন এবং একমাত্র ছোট ভাই মামুনুর রশিদ ইফতিও বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। এর মধ্যে ইফতি ঢাকার মিরপুরে প্রতিবন্ধী স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। এমন একটি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বড় হয়ে মুক্তা কুয়াইশ সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং চট্টগ্রাম হাজেরা তজু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেছেন। বর্তমানে মুক্তা চট্টগ্রামের হাজী মহসিন কলেজে বিবিএস দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন। গ্রাম থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শহরে আসা-যাওয়া করে নিজের উচ্চশিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন মুক্তা।

সুকণ্ঠের অধিকারী মুক্তা শুধুমাত্র পড়ালেখায় নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে উপস্থাপনা এবং ইশারা ভাষা নিয়ে কাজ করছেন। চেষ্টা করছেন ইশারা ভাষা নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি এই ভাষাকেই পেশা হিসেবে নিয়ে বাবা মায়ের আজন্মের দুঃখ গোছাতে। চট্টগ্রাম বধির উন্নয়ন সংঘ এবং চট্টগ্রাম বিভাগীয় বধির ক্রিকেট এসোসিয়েশনের দোভাষী হিসেবে থাকা আফরোজা আক্তার মুক্তার সুযোগ হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ইশারা ভাষায় উপস্থাপনের। ২০১৮ সালের ২৭ অক্টোবর পটুয়াখালীতে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ইশারা ভাষায় উপস্থাপনের জন্য ডাক পড়ে মুক্তার।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!