ঢাকায় প্রতারক ব্যবসায়ী ধরে বিমানে আনা হল চট্টগ্রামে, বিমানবন্দরেই হাতবদল

৫ কোটি টাকা মেরে দুবাই পালিয়েছিলেন

দুবাই থেকে বিএস-৩৪৪ ফ্লাইটে ঢাকা বিমানবন্দরে নামতেই ইমিগ্রেশন শাখার পুলিশ চিনে ফেলে চট্টগ্রামের প্রতারক ব্যবসায়ী ইসমাইলকে। তাৎক্ষণিক গ্রেপ্তার। সেই খবর দ্রুত পৌঁছে যায় চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থানায়। দুপুরে পুলিশের দুই উপপরিদর্শক (এসআই) বিমানে করেই দ্রুত চলে যান ঢাকায়। বিমানবন্দরের ভেতরেই হাতবদল হয় আসামি। রাত পৌনে আটটায় এয়ার অ্যাস্ট্রার ফ্লাইটে এক আসামি নিয়ে দুই এসআই চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে পৌঁছান পৌনে নয়টায়। সেখান থেকে সরাসরি সদরঘাট থানা।

এর আগে গত ৯ মে ইসমাইলের দুই সহযোগী আল আমিন প্রকাশ নোমান ও কাউছার আহমদ সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে গত ৯ মে ইসমাইলের দুই সহযোগী আল আমিন প্রকাশ নোমান ও কাউছার আহমদ সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শুক্রবার (২১ জুন) দিনভর এমন সব নাটকীয়তায় চট্টগ্রামের সদরঘাট স্ট্যান্ড রোডের মাছ ব্যবসায়ীদের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা মেরে হাওয়া হয়ে যাওয়া এনএন ফিশ প্রতিষ্ঠানের মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল হোসেনকে (৩৯) পাকড়াও করা হল। তিনি কর্ণফুলী উপজেলার চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে। পরিবারের অন্য সদস্যদের দুবাই নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি দেশে এসেছিলেন।

জানা গেছে, গত ২ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ হাবিব নামে এক মাছ ব্যবসায়ী তিন কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ তুলে তিনজনের বিরুদ্ধে সদরঘাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ওই মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ইসমাইল কয়েক দফায় হাবিবের কাছ থেকে ৮০ লাখ টাকার সামুদ্রিক মাছ কেনেন। এর মধ্যে দুই দফায় ৩০ লাখ টাকা পরিশোধ করেন। বাকি ৫০ লাখ টাকা ১৯ ফেব্রুয়ারি পরিশোধ করার কথা ছিল। ওইদিন হাবিবের ম্যানেজার সাদ্দামকে টাকার জন্য পাঠালে ইসমাইলের প্রতিষ্ঠান এন এন ফিশের অফিস তালাবদ্ধ দেখতে পান। মুঠোফোনও বন্ধ করে দেন ইসমাইল। এরপর থেকে তার খোঁজ মেলেনি।

সদরঘাট এলাকায় এনএন ফিশ প্রতিষ্ঠানের মালিক ইসমাইল মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাছ কিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করতেন। নোমান ও সাগর নামের দুই ব্যক্তি কমিশনে তার ব্যবসা দেখাশোনা করতেন।

সর্বশেষ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বিভিন্ন মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছ কেনেন ইসমাইল। এরপর তিনি গা ঢাকা দেন। পরে ব্যবসায়ীরা নোমান ও সাগরের কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে তারাও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ওই মাসেই ইসমাইলকে প্রধান আসামি করে সদরঘাট থানায় একটি মামলা করা হয়।

ওই মামলায় গত ৯ মে ভোরে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটা এলাকা থেকে এজাহারভুক্ত ইসমাইলের কর্মচারী আল আমিন প্রকাশ নোমান (৩৯) ও ম্যানেজার কাউছার আহাম্মদ সাগরকে (৩৫) গ্রেপ্তার করেন।

পরে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত হন ইসমাইল বিপুল পরিমাণ এই টাকা আত্মসাৎ করে দুবাই চলে গেছেন। শুক্রবার (২১ জুন) সকালে দুবাই থেকে ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছার পর ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এরপর বিমানে ঢাকা গিয়ে সদরঘাট থানার পুলিশের দুই এসআই তাকে রাতে চট্টগ্রাম নিয়ে আসে।

কর্ণফুলী মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আবু ইউছুপ জানান, ‘বিশ্বাসের ওপর আমাদের মাছের ব্যবসা হয়। কিন্তু বিশ্বাস ভেঙে ব্যবসায়ীদের ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ইসমাইল বিদেশে পালিয়ে ছিলেন।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদরঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) অর্ণব বড়ুয়া বলেন, ‘ইসমাইল প্রথমে এক হাতে ব্যবসা পরিচালনা করলেও পরে সেটা তার শ্যালক নয়ন ও ভাগ্নে সাগরকে নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দেন। মাছ ব্যবসায়ীরা তাদেরকেই চিনতেন বেশি। ইসমাইল শুধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। কিন্তু সে পাঁচ কোটি টাকার মাছ বাকিতে কিনে দুবাই পালিয়ে গিয়েছিলেন। আমরা তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইমিগ্রেশনে আবেদন করেছিলাম।’

এ প্রসঙ্গে সিএমপি সদরঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস জাহান বলেন, ‘মাছ ব্যবসায়ী হাবিবের দায়ের করা মামলায় আগে দুজনকে আমরা গ্রেপ্তার করেছিলাম। প্রধান আসামি ইসমাইলকে ঢাকা বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আমরা অফিসার পাঠিয়ে তাকে নিয়ে এসেছি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm