ঢাকায় ধরা সোনাপাচার-হুন্ডির ‘বস’ চট্টগ্রামের আবু, একদশকে হাজার কোটির মালিক
কারাগার ছেড়েছিলেন নিপুণ জোচ্চুরিতে
ঢাকা বিমানবন্দরে ধরা পড়েছেন চট্টগ্রামের কুখ্যাত সোনা চোরাচালানি ও হুন্ডি ব্যবসায়ী আবু আহমেদ ওরফে সোনা আবু। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বান্ধবী হিসেবে পরিচিত তৌফিকা করিমকে হাত করে তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া বিভিন্ন মামলায় অভাবনীয় প্রভাব খাটিয়েছেন। ঢাকা-চট্টগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, সাংসদ এমনকি ব্যবসায়ী নেতাকেও বিভিন্ন সময় তৎপর দেখা গেছে আবুর পক্ষে। ফলে পরোয়ানা মাথায় নিয়েও তিনি দুবাই-চট্টগ্রাম নির্বিঘ্নে আসা-যাওয়া করে বিছিয়েছেন অপরাধের এক বিশাল সাম্রাজ্য।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) আরব আমিরাতে পালিয়ে যাওয়ার সময় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পুলিশের হাতে ধরা পড়েন সোনা আবু। সোমবার ঢাকা থেকে তাকে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
রাতে ডবলমুরিং মডেল থানার ওসি কাজী রফিক আহমেদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ঢাকা ইমিগ্রেশন পুলিশের সহায়তায় আবুকে গ্রেপ্তার করে আমরা চট্টগ্রাম নিয়ে আসি। আবু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ঘটনায় ২২ সেপ্টেম্বর দায়ের করা একটি হত্যামামলার এজাহারভুক্ত আসামি। সোমবার তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে তাকে আদালত কারাগারে পাঠান।’
৫৭ বছর বয়সী সোনা চোরাচালানি আবু আহমেদ ফটিকছড়ির জাফতনগর ইউনিয়নে ফয়েজ আহমদ ও জাহানারা বেগমের পুত্র। চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ হিলভিউ আবাসিক এলাকার ৬ নম্বর রোডের নিরিবিলি ভবনে তার বাসা।
আন্ডারওয়ার্ল্ডের কিংবদন্তী
দেশের চোরাচালান ও হুন্ডির সাম্রাজ্যে রীতিমতো কিংবদন্তী চট্টগ্রামের আবু আহমেদ। সোনা চোরাচালান করতে করতে তার নামই রটে গেছে ‘সোনা আবু’। এভাবে গত এক দশকে তিনি বনে গেছেন প্রায় হাজার কোটি টাকার মালিক। সীমিত অনুসন্ধানে পুলিশের তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি ২০২২ সালে ৭২১ কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পায়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ মিলেছে তার নামে কেনা মূল্যবান ২৪টি জমির খোঁজ, সেই সঙ্গে নগরীতে বিলাসবহুল অন্তত তিনটি বাড়িও। কিন্তু ৫৭ বছর বয়সী এই আবু আহমদ ওরফে আবুর নাগাল কেউ পাচ্ছিল না। সহযোগী কেউ কেউ ধরা পড়ে পুলিশের হাতে, কিন্তু আবুর খোঁজ পাওয়া যায় না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিজে অধরা থাকলেও আবুর চোরাচালান সাম্রাজ্য চলছিল আগের মতোই বাধাহীন।
আড়ালের গডফাদার
চট্টগ্রামের বাসিন্দা আবু আহমেদ একসময় তার বাড়ি ফটিকছড়িতে সিগারেট ও ঝালমুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। ১৯৯১ সালে শ্রমিক ভিসা নিয়ে দুবাই যান তিনি। এর কয়েক বছর পর আবার দেশে ফিরে আসেন। সেই থেকে তিনি ছিলেন আরব আমিরাত আর বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার মধ্যেই। সোনা চোরাচালান ও হুন্ডির ব্যবসায় তাকে ‘গডফাদার’ হিসেবে গোণা হয়ে থাকে। একদশক আগে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িয়ে পড়া আবু হুন্ডিসহ চোরাই মালের ব্যবসায়ও করিৎকর্মা।
১০ বছর আগে দৃশ্যপটে আবুর নাম
২০১৩ সালের ৩ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকার বাসার সামনে থেকে হঠাৎ অপহৃত হন আবু। তখনই প্রথম আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনে ওঠে আসে আবু নামের রহস্যময় এক বিত্তশালীর নাম। প্রায় ১০ বছর আগের সেই অপহরণের ঘটনায় আবু এক কোটি টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান অজ্ঞাত একদল দুর্বৃত্তের হাত থেকে। পরে ঘটনার পাঁচ মাস পর ২০১৪ সালের ২২ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা দায়েরের পর অপহরণের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে স্বর্ণ চোরাচালানের গডফাদার হিসেবে আবুর নাম প্রথম আলোচনায় আসে ২০১৪ সালে। ওই বছর ঢাকায় চোরাচালানের স্বর্ণ উদ্ধারের পর পর তিনটি ঘটনায় দৃশ্যপটে চলে আসেন আবু। এর মধ্যে ১০৫ কেজি ওজনের ৯০৪ পিস স্বর্ণের প্রথম চালানটি ধরা পড়ে রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দরে। পরে একই বিমানবন্দরে ৫২৫ পিস সোনার বারসহ ধরা পড়ে বিপুল পরিমাণ সৌদি মুদ্রার অপর একটি চালান। ৬১ কেজি স্বর্ণ অপর একটি চালান ধরা পড়ে ঢাকার নয়াপল্টন থেকে। এসব ঘটনায় ঢাকা বিমানবন্দর থানা ও পল্টন থানায় আবুর বিরুদ্ধে মামলা হয়।
এরপর ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারের বাহার মার্কেট থেকে বর্তমানে স্ত্রী খুনের মামলায় আলোচিত তৎকালীন নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে উদ্ধার করা হয় তিনটি সিন্ধুকভর্তি বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ ও নগদ টাকা। এর মধ্যে একটি সিন্দুক থেকে ২৫০টি স্বর্ণের বার এবং অন্য এক সিন্ধুকে পাওয়া যায় নগদ ৬০ লাখ টাকা। এই ঘটনায় আবু ও তার ম্যানেজার এনামুল হক নাঈমকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা হয়।
এই মামলায় আবুকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু নাটকীয় কায়দায় তিনি মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় চট্টগ্রাম কারাগার থেকে বের হয়ে যান। সেই থেকে তিনি বরাবরই রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
কারাগার ছাড়েন নিপুণ জোচ্চুরিতে
জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে হাইকোর্টের দুই বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে স্বর্ণ চোরাচালান মামলার কার্যক্রম স্থগিতের বিষয়ে একটি পিটিশন তৈরি করান আবু। ২০১৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারি মিস শাখার মাধ্যমে সেই পিটিশনটি বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়। ভুয়া স্থগিতাদেশ তৈরি করে তথ্যগোপনের মাধ্যমে জামিন নিয়ে ওই বছরের আগস্টে তিনি কারাগার থেকে বের হয়ে যান।
জালিয়াতির এই ঘটনা ধরা পড়ার পর ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (ফৌজদারি-২) বাদি হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় আবু আহমদসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করেন।
কিভাবে এলো এতো সম্পদ
কিভাবে আবুর এতো সম্পদ হল— এ প্রশ্ন ভাবিয়েছে ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াডসহ তদন্তকারী সংস্থাকেও। সিআইডি বলছে, চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজারকেন্দ্রিক প্রসাধনী সামগ্রীর ব্যবসাই আবুর একমাত্র বৈধ আয়ের উৎস। এর বাইরে দৃশ্যত তার আর কোনো ব্যবসা নেই। সিআইডির অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার ফারুক হোসেন বলেন, আবুর নেতৃত্বাধীন একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের মাধ্যমে বিপুল টাকা আয় করেছে— যা মানি লন্ডারিংয়ের মধ্যে পড়ে। চক্রটি ব্যাংকের মাধ্যমেই শুধু শত শত কোটি টাকা লেনদেন করেছে।
আবুর দৃশ্যমান সম্পদের মধ্যে রয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলার ধর্মপুর ও জাহানপুর এলাকায় ২৪টি দলিলমূলে কেনা বহু জমি। এছাড়া কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকার ৩৩ নম্বর প্লটে ১৬ কাঠার প্লট ছাড়াও পাঁচলাইশ হিলভিউ আবাসিক এলাকার পাঁচতলা নিরিবিলি ভবন এবং চান্দগাঁওয়ে ছয়তলা বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক বাড়ি রয়েছে তার। অন্যদিকে রাউজানের ফতেহনগর এলাকায় পল্লী কানন ও পল্লী শোভা কনভেনশন হল, ফটিকছড়ির ফতেহপুরে দৃষ্টিনন্দন শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিনতলা বাড়ি জাহানারা ম্যানশন, চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজউদ্দিন বাজারে দুটি, স্যানমার ওশান সিটিতে একটি দোকান ছাড়াও দুবাইয়ে অন্তত তিনটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের খোঁজ মিলেছে।
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবুর সম্পদের এই হিসাব সামান্যই। সহযোগীদের নামেও তিনি গড়েছেন সম্পদ। বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়েছে তাদের মাধ্যমেও। যেমন আবুর ম্যানেজার এনামুল হক নাঈমের নামে চট্টগ্রামে আবু গড়ে তুলেছেন অন্তত ছয়টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
সিআইডির অনুসন্ধানে ৭২১ কোটির সম্পদ
২০২৩ সালের মাঝামাঝিতে এসে চোরাচালানি আবু আহমেদের ৭২১ কোটি ১৭ লাখ টাকার সম্পদের খোঁজ পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি ফিনান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট পরে আবুর নেতৃত্বাধীন চক্রের সঙ্গে জড়িত মোট ২১ জনকে অভিযুক্ত করে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয় আদালতে।
সিআইডি জানায়, মূল হোতা আবু আহমেদ চট্টগ্রামে অর্থ পাচার এবং সোনা ও অন্যান্য পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে অবৈধভাবে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জন করেছে। তার মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভবন, প্লট, বিলাসবহুল বাড়ি। দুবাইতেও তার তিনটি দোকান রয়েছে। তদন্তে প্রমাণ মিলেছে, আবু আহমেদ ফরহাদ ট্রেডিং, রিয়াল ট্রেডিং, নাইস টেলিকম সেন্টার, রূপা টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ২১টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলেন, যাতে লেনদেন হয়েছে বিপুল পরিমাণ টাকা।
তদন্তে দেখা গেছে, আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে যারা দেশে টাকা পাঠাতে চায়, তাদের কাছ থেকে সে দেশের মুদ্রা সংগ্রহ করেন আবুর এক সহযোগী খোরশেদ আলম। অন্যদিকে আবু আহমেদ ও তার সহযোগী ফরিদুল আলম প্রবাসীদের কাছ থেকে নেওয়া সেই মুদ্রার বিপরীতে দেশে থাকা স্বজনদের কাছে নির্ধারিত হারে টাকা পৌঁছে দেয়। এভাবে চক্রটি বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডার গড়ে তোলে— যা দিয়ে তাদের স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যবসা ফুলেফেঁপে ওঠে।
চট্টগ্রামে ১৭ একাউন্টে ৪০৯ কোটি টাকা মাত্র
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আবু আহমদ ওরফে আবু চট্টগ্রাম নগরীর স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও দি সিটি ব্যাংক লিমিটেডের শাখায় ২০০৫ সালের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংক একাউন্ট খোলেন। পরবর্তী সময়ে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ওইসব ব্যাংক একাউন্টে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার ৮৬৭ টাকা জমা হয়। বিপুল এই টাকার বৈধ কোনো উৎস তিনি দেখাতে পারেননি।
সিআইডির ইকোনমিক ক্রাইম স্কোয়াড প্রায় দুই বছর ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে আবু ও তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে ১৭টি ব্যাংক একাউন্টে ৪০৯ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে। সর্বশেষ দুই বছর আগে আবুর ব্যাংক একাউন্টগুলোতে জমা ছিল ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আর এর বিপরীতে ওই একাউন্টগুলো থেকে তোলা হয়েছে ২৪০ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ২০০৫ সালের ৩ এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নথিপত্র ঘেঁটে অন্তত আড়াইশ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি। নগরীর স্টেশন রোড স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক শাখার নয়টি একাউন্ট, সিটি ব্যাংক জুবলী রোড শাখার চারটি একাউন্ট, যমুনা ব্যাংক জুবলি রোড শাখার তিনটি একাউন্ট, ব্র্যাক ব্যাংক নিউমার্কেট শাখার সাতটি একাউন্ট এবং ইস্টার্ন ব্যাংক নিউমার্কেট শাখার একটি একাউন্ট সিআইডির আবেদনে স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত।
সর্বোচ্চ আদালতকেও অবজ্ঞা করতেন
২৪০ কোটি ৫ লাখ ১২ হাজার ১৬০ টাকা পাচারের অভিযোগে চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানায় ২০২০ সালের ১৮ মার্চ মামলা হয় আবুর বিরুদ্ধে। এই মামলায় ২০ জনকে আসামি করেন অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. হারুন উর রশীদ। কিন্তু আইনজীবীর মাধ্যমে দুই বছর পর আগাম জামিন চান আবু। সেই আবেদনে ২০২২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আবুকে তিন সপ্তাহের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এছাড়া হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ আদালতের অনুমতি ছাড়া তার বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দেন। কিন্তু তিনি অসুস্থতা ও নানা বাহানায় বার বার সময়ের আবেদন করতে থাকেন। পরে একই বছরের ১৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আজিজ আহমেদ ভূঁঞার আদালত তার জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্টে জামিন আবেদন করলে পরদিন ৬ ডিসেম্বর আবুর বিদেশযাত্রায়ও আসে নিষেধাজ্ঞা।
২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি হাজিরার পর সোনা আবুকে শাহবাগ থানা পুলিশের হাতে তুলে দেন হাইকোর্ট। পরে চট্টগ্রামের একটি আদালতে হাজির করা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তিনি হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন। এরপর ওই বছরের ৬ এপ্রিল তাকে জামিন দিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ১১ এপ্রিল চেম্বার আদালত ৮ মে পর্যন্ত তার জামিন স্থগিত করেন। পরে ২৯ মে আপিল বিভাগের শুনানিতে আবুর আইনজীবী আদালতকে জানান, আসামি হেফাজতের বাইরে। আবুর দেশত্যাগ করার বিষয়টি আদালতকে জানান। সেদিন শুনানি শেষে আবুকে ১২ জুনের মধ্যে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু সে আত্মসমর্পণ না করায় ২০২৩ সালের ১০ জুলাই সাবেক প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ আবু আহমদ ওরফে সোনা আবুকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। সেই থেকে আবুর নাগাল আর কেউ পায়নি। ঢাকা ও চট্টগ্রামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এমনকি ব্যবসায়ী নেতাদেরও তিনি টাকা ছিটিয়ে পকেটে পুরে রেখেছিলেন। ফলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তাকে সমীহ করে চলতো।
সিপি