অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বরাবরে আট দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন এবং রাষ্ট্র গঠনে চারটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৪ আগস্ট বিকাল থেকে আমরা অন্তত ৫টি জেলায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়কে টার্গেট করে হামলা ও হুমকির নানান ঘটনার সংবাদ জানতে পারি। এর পরদিন ৫ আগস্ট থেকে তা তীব্রতর হয়। আমাদের সূত্র ও সংবাদমাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫০টিরও অধিক জেলায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তির মূল লক্ষ্য ছিল সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, বসতভিটি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়। এসবে হামলা হয়েছে, ব্যাপক লুটপাট হয়েছে, কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, জমিজমা দখল করা হয়েছে, নারীদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। চাঁদাবাজি, দেশ ছাড়ার হুমকি, জমি দখল ও দখলের চক্রান্ত আজও অব্যাহত আছে।
এই পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দন্ধের দাবিতে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ছাত্র-জনতা, নারী-পুরুষ প্রতিবাদ করার জন্যে রাস্তায় নেমে এসেছে এবং তারা সহিংসতা, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে প্রতিবাদ গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
আট দফা দাবি
সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা হোক, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন ও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করা হোক, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে যাবতীয় আমলাতান্ত্রিক বাধা অপসারণ করে ট্রাইব্যুনালের রায়ের আলোকে জমির মালিকানা ও দখল ভুক্তভোগীদের বরাবরে অনতিবিলম্বে প্রত্যর্পণ করা হোক; জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সরকারে, সংসদে, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সকল সংস্থায় অংশীদারিত্ব ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হোক; দেবোত্তর সম্পত্তি সংরক্ষণে আইন প্রণয়ন করা হোক (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত), বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন করা হোক (ইতোমধ্যে খসড়া বিল চূড়ান্তকৃত), পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ আইন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইনের যথাযথভাবে কার্যকর করা হোক; হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গাপূজায় অষ্টমী থেকে দশমী-এ ৩ দিন, বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমায় ১ দিন ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ইস্টার সানডে-তে ১ দিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হোক।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলা ও সহিংসতা বন্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হোক। সাম্প্রদায়িক দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে তাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের সম্মুখীন করা হোক। ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন এবং জখমীদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। যারা ইতোমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে তাদের জায়গাজমি, বসতভিটি, উপাসনালয় তাদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
বিজ্ঞপ্তিতে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ পুনর্গঠনে প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। প্রস্তাবনাগুলো হলো— ধর্মগ্রস্থ থেকে পাঠের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণ, সকল রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও সংসদের প্রতিটি অধিবেশনের সূচনায় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে সকল ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের পদক্ষেপ গ্রহণ করা, সংবিধানে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণ, সংবিধানে বিদ্যমান সাংবিধানিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষে ১২(ক) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক রাষ্ট্রধর্ম সম্বলিত ২(ক) অনুচ্ছেদের বিলোপ করা, ধর্মীয় শিক্ষায়তনের বৈষম্য দূরীকরণ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় শিক্ষায়তনের উন্নয়ন ও বিকাশে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ধর্মীয় শিক্ষকদের বেতন কাঠামোর বৈষম্য দূর করা, ধর্মীয় বাজেটের বৈষম্য দূরীকরণ, ধর্মীয় বাজেটে বিরাজিত বৈষম্য দূর করা।