ডেপুটি রেজিস্ট্রারের কাঁধে দায় চাপিয়ে ৫ দিন পর চবি কর্তৃপক্ষের দুঃখ প্রকাশ

বিজয় দিবসের ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিজয় দিবসের আলোচনা সভার ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবি দেওয়ার ঘটনায় উপাচার্যের পিএস ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের কাঁধে দায় চাপিয়ে ৫ দিন পর দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এর আগে এই ঘটনায় জাহাঙ্গীর আলমকে উপাচার্য দপ্তর থেকে পরিষদ শাখায় বদলি করা হয়।

সোমবার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য শাখা থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই দুঃখ প্রকাশ করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে আয়োজিত হয় মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানমালা। স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে পুস্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন এবং তাঁদের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া-মোনাজাত শেষে আয়োজিত ‘বিজয় দিবস শীর্ষক’ আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বক্তব্য রাখেন। উপাচার্যের কার্যালয়ে কর্মরত ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠানের জন্য ব্যানার প্রস্তুত করেন। ব্যানারে প্রাসঙ্গিকক্রমে জাতীয় স্মৃতি সৌধের ছবি ব্যবহার করার কথা থাকলেও শহীদ মিনারের ছবি দিয়ে ব্যানার তৈরি করে অনুষ্ঠানে নিয়ে আসেন এবং কাউকে না দেখিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে উক্ত ব্যানার উপস্থাপন করেন। অনাকাঙ্খিতভাবে সঠিক ছবি ব্যবহার না করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যসহ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সিনেট, সিন্ডিকেট সদস্যগণসহ অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ ক্ষুব্ধ হন এবং সঙ্গে সঙ্গেই ঐ ব্যানার সরিয়ে ফেলা হয়।

উল্লেখ্য, মো. জাহাঙ্গীর আলম বিগত দুইজন উপাচার্যের দায়িত্বকালীন উপাচার্য দপ্তরে ডেপুটি রেজিস্ট্রার (পিএস টু ভিসি) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কর্মরত থাকার ধারাবাহিকতায় বর্তমান উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার দায়িত্বগ্রহণ করার পরে তিনি একইপদে বহাল ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতার উপর নির্ভরতার কারণেই অনাকাঙ্খিত এ ভুল হয়েছে। যার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত ও লজ্জিত।

এ প্রসঙ্গে উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এ সকল ঘটনাগুলোও সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। প্রশাসনে কোনো ধরনের অনিয়ম গ্রহণযোগ্য নয়। আমি আমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়মের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে একজন দায়িত্বশীল উপাচার্য হিসেবে স্বপরিবারে আমি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করি এবং কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউন চলাকালীন ক্যাম্পাসে অবস্থানরত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশে থেকে দাপ্তরিক কাজ সচল রাখি।

তিনি আরও বলেন, কাজ করতে গিয়ে নিজে স্বপরিবারে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছি। এর ফলে হারিয়েছি নিজের মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে। আমার সমস্ত ত্যাগের বিনিময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিবেদিত দায়িত্বশীল প্রশাসন গড়ে তোলার মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অনিয়মের মূলউৎপাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতি আমার আহবান, আপনারা আপনাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে শ্রম ও মেধার সমন্বয় ঘটিয়ে দেশের উন্নয়নে অংশীজন হোন।”

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করায় ও প্রশাসনিক দায়িত্বে অবহেলার কারণে ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে স্ট্যান্ড রিলিজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (পিএস টু ভিসি)-এর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে অন্য অফিসে বদলি করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ভবিষ্যতে এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সজাগ থাকবে।

এ দিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উদযাপন কমিটি’ গঠন করার কথা বলা হয়। সেখানে কোথাও ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলমের নাম ছিল না। কমিটিতে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. আতিকুর রহমানকে আহ্বায়ক ও তথ্য শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার দিবাকর বড়ুয়াকে সদস্যসচিব করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ, চবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হক ও এফ রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এসএম খসরুল আলম কুদ্দুসী।

বিশ্বিবদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলেন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার জাহাঙ্গীর আলম কমিটির সদস্য না হয়ে কীভাবে ব্যানার তৈরি করেন? আর ব্যানার তৈরি করলেও কমিটির সদস্যরা কেনইবা ব্যানার আগে যাছাই করে দেখলো না? তাদের মতো কমিটিকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি না করে জাহাঙ্গীর আলমকে বদলি করা অযৌক্তিক।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm