ডেঙ্গুর হানা চট্টগ্রামের এক উপজেলায়, আক্রান্ত হাজার ছুঁই ছুঁই

৩ মাসেই উপজেলাগুলোতে রোগী বেড়েছে ৩৫ গুণ

চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর লাগাম টানা যাচ্ছে না। নগরের সঙ্গে উপজেলাগুলোতে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর মধ্যে এক উপজেলাতেই এখন আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছুঁই ছুঁই। এছাড়া ছয় উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা শতক ছাড়িয়েছে আর দুটিতে আক্রান্তের সংখ্যা দুইশতের ওপরে। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত উপজেলায় আক্রান্তের হার ৩০ শতাংশ। সংখ্যার হিসেবে যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৮৯ জন।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চেয়ে উত্তরের উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। উত্তরের সীতাকুণ্ড উপজেলা এই তালিকার শীর্ষস্থানে রয়েছে। এখানে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৯৬৭ জন। এছাড়া হাটহাজারীতে ২১৭ জন, মিরসরাইয়ে ১৬৬ জন, ফটিকছড়িতে ১৩৩ জন, রাউজানে ১০০ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৫৭ জন ও সন্দ্বীপে ৫৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন। উত্তর চট্টগ্রামে মোট শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৯৫ জন ডেঙ্গু রোগী।

এছাড়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ায় সর্বোচ্চ ২৯৬ জনের শরীরের ডেঙ্গু পাওয়া গেছে। তবে বাঁশখালীতে ১৭৬ জন, সাতকানিয়ায় ১২১ জন, আনোয়ারায় ১১৪ জন, লোহাগাড়ায় ৯২ জন, কর্ণফুলীতে ৭৪ জন, বোয়ালখালীতে ৬৫ জন ও চন্দনাইশে ৫৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। সেই হিসেবে দক্ষিণ চট্টগ্রামে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৯৪ জন।

মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে ৩৫ গুণেরও বেশি! চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ছিল ১৪৪ জন। অর্থাৎ গড়ে প্রতি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ জন। পরবর্তী তিন মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে (২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত) ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫৪৫ জন। অর্থাৎ সর্বশেষ তিন মাসে গড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ৮৪৮ জনেরও বেশি!

তবে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে, সীতাকুণ্ডে রোগী বেশি শনাক্ত হওয়ার কারণ উপজেলাটির সীমানা। এই উপজেলার বেশকিছু অংশ নগরের মধ্যে। তাই এসব এলাকার মানুষ হাসপাতালে ভর্তির তথ্যে ঠিকানা সীতাকুণ্ড উল্লেখ করছে। তাই নগর-গ্রাম মিলে সীতাকুণ্ডে আক্রান্তের সংখ্যাটা বেশি।

এদিকে চট্টগ্রামে রোববার পর্যন্ত মোট আক্রান্তে সংখ্যা ৮ হাজার ৮৭৬ জন। যাদের মধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৮৩ জন, মহিলা ২ হাজার ৪৫১ জন এবং শিশু ২ হাজার ৩৪২ জন। মোট মৃত্যু হয়েছে ৭২ জনের। এর মধ্যে পুরুষ ২২ জন এবং মহিলা ও শিশু যথাক্রমে ২৫ জন করে।

Yakub Group

সেপ্টেম্বর মাসের ২৪ দিনে মোট আক্রান্তে সংখ্যা আগস্টকে ছাড়িয়ে শীর্ষে গেছে। সেপ্টেম্বরে এখনও পর্যন্ত আক্রান্ত দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৯ জন, আগস্টে যা ছিল ৩ হাজার ১১ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৬৮ জনসহ চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন ৪২৫ জন ডেঙ্গু রোগী। আর এই পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৮ হাজার ৪৫১ জন।

এই প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের জেলা কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদাওছ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘শহরের আশপাশের উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। সেই হিসেবে সীতাকুণ্ড ও পটিয়া উপজেলাতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেশি। আর সীতাকুণ্ডে ভারী শিল্পাঞ্চল ও জাহাজ ভাঙা শিল্প রয়েছে। এসব ভাঙারি জিনিসে পানি জমে থাকার সম্ভাবনা থাকে। ফলে এডিস মশা বংশ বিস্তারের সুযোগ পায়। এছাড়া এখানকার জেলেপাড়াগুলোতে পানির সংকট রয়েছে। তাই তারা পানি ধরে রাখে। এই ধরনের জমিয়ে রাখা পানিতে সহজেই বংশ বিস্তার করতে পারে এডিস মশা। ফলে উপজেলায় বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী।’

তিনি আরও বলেন, ‘নগরে আক্রান্ত অনেকে হাসপাতালে ভর্তির সময় স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে সীতাকুণ্ড উপজেলা লিখছেন। সেই হিসেবেও ওই রোগীকে সীতাকুণ্ডের হিসেবে ধরা হচ্ছে। এভাবেই মূলত সীতাকুণ্ডে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।’

বেশি আক্রান্ত উপজেলাগুলোতে ডেঙ্গু রোধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিনা, জানতে চাইলে এনতেজার ফেরদাওছ বলেন, ‘যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন, তারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। ফলে তারা সেখানে সেবা পাচ্ছেন। আর ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর লোকজনকে সচেতনতা বাড়াতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!