ডেঙ্গুবাহী দুই মশার প্রকোপ, চট্টগ্রামে তবু হয় না মশক জরিপ

আবহাওয়ায় গরমিল। ক্যালেন্ডারের পাতায় শরৎ এসে গেলেও মনে হয় এ যেন বর্ষা। মাঝেমাঝেই বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায়। সাধারণত বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে গত তিন বছরের রেকর্ড ভেঙে এবারই প্রথম চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার। আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

চট্টগ্রামে ২০১৭ সালের পর দুই বছরেও হয়নি কোনো মশক জরিপ। ঢাকায় নিয়মিত হলেও চট্টগ্রামে না হওয়ায় জানা নেই মশার সর্বশেষ অবস্থা। সিভিল সার্জন থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে মশক জরিপের জন্য দল পাঠানোর আবেদন করলে আসি আসি করে এখনও আসেননি ঢাকার টিম। এদিকে চলতি বছরের আগস্ট মাসে মশক জরিপের সিদ্ধান্ত নিয়েও লোকবল সংকট এবং জরিপ বিশেষজ্ঞ না থাকায় এখনও শুরু হয়নি মশক জরিপ। ঢাকার মতোই চট্টগ্রামেও এডিস ইজিপ্টি ও এডিস আলবো পিটাস দুই মশার প্রকোপ বেশি। তাই কোন জায়গায় মশার অস্তিত্ব বেশি তা জানার জন্য জরিপটি দ্রুত চালানো দরকার—তাগিদ সংশ্লিষ্টদের।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুসারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৫৭ জন। তবে নগরীতে এ বছর প্রথম ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বাদশা মোল্লা নামের একজন মারা যায় ৩১ আগষ্ট এবং বিপ্লব দাশ নামের একজন মারা যায় ৩ সেপ্টেম্বর।

তবে সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ জানান, ডেঙ্গু রোগে মারা যাওয়া বাদশা মোল্লা ডায়বেটিস, লিভার ও কিডনিসহ নানান জটিলতা নিয়ে ২২ আগষ্ট ভর্তি হয় হাসপাতালে। তারপরেই পরীক্ষায় নিশ্চিত হয় তিনি (রোগী) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। পরবর্তীতে রক্তে প্লাটিলেট কমে গিয়ে ৩১ আগষ্ট মারা যান। এদিকে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) ডেঙ্গু আক্রান্ত বিপ্লবকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার সকালে তাকে পরিবারের সদস্যরা হাসপাতাল থেকে নিয়ে যান। কিন্তু তার অবস্থার অবনতি হলে দুপুরে তাকে আবারও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। এসময় চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০১৭ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় ৬৬ জন। ২০১৮ সালে এ সংখ্যা বেড়ে হয় ১৭৭ জন। ২০১৯ সালের চলতি মাস পর্যন্ত শনাক্ত হয় এক হাজার ৩০০ জন।

মশক জরিপ
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট থেকে ২৫ আগস্ট নগরীর ৪১ ওয়ার্ডকে সাতটি জোনে ভাগ করে ৮২০ স্থানে জরিপ চালানো হয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কীটতত্ত্ব বিভাগে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন পাঁচজন। এতো অল্পসংখ্যক লোকবল দিয়ে মশক জরিপ চালানো সম্ভব না বলেই ঢাকার টিমের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৭ সালের পর আর মশক জরিপ করা হয়নি। এ বছরই অনেক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। আরও বাড়তে পারে। জরিপটি দ্রুত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসেই জরিপকারী দলটি আসার সম্ভাবনা রয়েছে।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৭ সালের পর এ দুই বছর কোনো জরিপ চালানো হয়নি। আসলে জরিপ করার জন্য অতো লোকবল আমাদের নেই। তাই বড় একটা টিম আসে ঢাকা থেকে। এই বছর উনারা আসার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে ঢাকার অবস্থা খারাপ হওয়ায় উনারা তাই নিয়েই ব্যস্ত। আমরা কয়েকবার বলছি। উনারা বলছেন হবে হবে কাজটা। কিন্তু এখনও টিম পাঠায়নি। টিম পাঠালে তখন হবে। ঢাকার মতোই আমাদের এখানেও এডিস ইজিপ্টি ও এডিস আলবো পিটাস দুই মশার প্রকোপ বেশি। তাই কোন জায়গায় মশার অস্তিত্ব বেশি তা জানার জন্য জরিপটি দ্রুত চালানো দরকার।

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!