ডিম ছেড়েছে মা মাছ, হালদা পাড়ে উৎসবের বন্যা

অবশেষে এশিয়ার একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদায় ডিম ছাড়লো রুই কাতলা মৃগেল মা-মাছ। আর সেই ডিম সংগ্রহ করছেন অভিজ্ঞ, দক্ষ, পরদর্শী জেলেরা। দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে জেলেদের মাঝে বইছে আনন্দ-উৎসব আর শত ব্যস্ততা।

শুক্রবার (২২ মে) সকালেই দলে দলে মা-মাছ ডিম ছাড়তে শুরু করে। ডিম ছাড়ার জন্য নদীর তলদেশ থেকে ভেসে উঠে ওরা।

মে মাসের শুরুতে হালদায় মা মাছের আগাগোনা বেড়েছে। ডিম সংগ্রহকরীরা ৭ মে থেকে ভারি বর্ষণের অপেক্ষায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত মা মাছ ডিম ছাড়েনি। প্রতিবছর এপ্রিল- মে মাসে অমাবস্যা, পূর্নিমার জো’তে ডিম ছাড়ে মা মাছ। ১৯ মে থেকে ভারি বর্ষণে আশায় বুক বাঁধে হালদা পাড়ের ডিম সংগ্রহকারীরা। ২১ মে নমুনা ডিম ছাড়ে মা মাছ। শুক্রবার (২২ মে) সকাল ৭টায় মা মাছ ডিম ছাড়া শুরু করে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আজিমের ঘোনা অংকুরি ঘোনা, রামদাস মুন্সির হাট, মাদার্শা সাত্তারঘাট, মাছুয়া ঘোনা, কাগতিয়া, গড়দুয়ারা এলাকায় হাজারো ডিম সংগ্রহকরী সারি সারি নৌকায় ডিম সংগ্রহ করছে। পুরো হালদাজুড়ে উৎসবের আমেজ। ডিম সংগ্রহকারীদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক।

হালদা পাড়ের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম মুন্না বলেন, প্রতি বছর ডিম সংগ্রহকে কেন্দ্র করে উৎসব লেগে যায়। ছোটকাল থেকে দেখে আসা এই চিত্র দেখতে খুব ভালো লাগে। তাই এবারও ডিম সংগ্রহের চিত্র দেখতে এসেছি। আশা করি এবার ভালো ডিম সংগ্রহ করতে পারবে সংগ্রহকারীরা।

ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, সকাল থেকে এ পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ সন্তোষজনক। অন্য যে কোনও বছরের তুলনায় ভালো। এবছর লকডাউনে সব ধরণের কলকারখানা বন্ধ থাকায় দূষণ কমে গেছে। ফলে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহের আশা করছেন তারা।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মা মাছের ডিম সংগ্রহের পর রেণু ফোটানোর জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে হাটহাজারী উপজেলার শাহমাদারি, গড়দুয়ারা ও রাউজান অংশের মুবারকখীল ও পশ্চিম গহিরায় মোট ৫টি সরকারি হ্যাচারি ও ১৬৭টি কুয়া প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়রা আরও শতাধিক কুয়া প্রস্তত করেছে। স্থানীয় প্রশাসন ডিম সংগ্রহ ও রেণু ফোটানো, বিক্রিসহ সব বিষয়ে সহায়তা করছেন।

হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবটরির সমন্বয়ক এসএম মনজুরুল কিবরিয়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, হালদায় মা মাছ ডিম ছেড়েছে। সকাল থেকে ডিম সংগ্রহ করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা। আমরা নিয়মিত তদারকি করছি। এখনও ডিম সংগ্রহ চলছে। তাই কি পরিমাণ ডিম সংগ্রহ হবে তা বলা যাচ্ছেনা। তবে লকডাউনে কলকারখানা বন্ধ থাকায় দূষণ অনেকটা কমে গেছে। ফলে এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম সংগ্রহের আশা করি।

সরকারি সূত্রে জানা যায়, ২০২৯ সালের ১৫ মে ডিম ছাড়ে হালদায় মা মাছ। আহরণ করা প্রায় ১০ হাজার কেজি ডিম থেকে ২০০ কেজির বেশি রেণু উৎপাদিত হয়েছিল। তবে এবার ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ডিম আহরণের আশা করছেন স্থানীয় ডিম সংগ্রহকারী, প্রশাসন ও হালদা গবেষণা সেন্টার।

সিএম/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!