ডবলমুরিংয়ে কিশোরী ধর্ষণে ছিল পাঁচজনের চক্র, চান্দুর জবানে উঠে এল ঘটনা

চট্টগ্রামের ডবলমুরিংয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসা কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনার মূল হোতা চান্দু মিয়া ধর্ষণের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। নিজের অপরাধ স্বীকারের পাশাপাশি এই ঘটনায় তার সাথে আরও চারজন জড়িত ছিল বলে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন চান্দু। এর মধ্যে তিনজনকে ঘটনার দিন রাতেই গ্রেপ্তার করেছে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুল আমীনের আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন চান্দু মিয়া। সোমবার রাতে তাকে নগরীর পতেঙ্গায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ডবলমুরিং থানার সুপারিওয়ালা পাড়ার ১ নম্বর গলিতে চান্দু মিয়ার বাসায় ১৪ বছর বয়সী এক কিশোরীকে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়।

এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডবলমুরিং থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল ইসলাম জানান ‘চান্দু মিয়া এই ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। তার জবানবন্দিতে আরও ৪ জনের নাম উঠে এসেছে যারা তাকে ধর্ষণে সহযোগিতা করেছে। এর মধ্যে ৩ জনকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যজনের নাম এই মুহূর্তে বলতে চাচ্ছি না।’

এই ঘটনায় চান্দু মিয়া ছাড়াও এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হওয়া ৩ আসামি হলেন নুরী আক্তার (২০) ও তার স্বামী মো. অন্তর (২২) এবং রাজিব হোসেন (২২)। এর মধ্যে প্রথম দুজনকে ধর্ষণের শিকার হওয়া কিশোরীর পরিবারের সদস্যরা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে রাজিব হোসেনকে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করে ডবলমুরিং থানা পুলিশ।

জানা গেছে, গত রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় স্বর্ণার ফুফাতো বোনের বান্ধবী নুরী বেগমের (২০) দাওয়াতে সুপারিওয়ালাপাড়ার একটি বাসায় যান স্বর্ণা ও তার ফুফাতো বোন রত্না (ছদ্মনাম)। নুরী বেগম নিজের বাসায় নেওয়ার কথা বলে বিকেল ৫টার দিকে তাদের দুজনকে যে ভবনে নিয়ে যান, সেটি মূলত চান্দু মিয়া নামের এক ‘পুলিশ সোর্সে’র বাসা।

ধর্ষিত কিশোরী স্বপ্নার ফুফা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ওই ভবনে নিয়ে গিয়ে নুরী বেগম কৌশলে স্বর্ণা ও রত্নাকে আলাদা দুই রুমে আটকে রাখে। একপর্যায়ে তার মেয়ে রত্নাকে নিয়ে নুরী বেগমের স্বামী অন্তর (২৫) ‘বাইরে’ চলে যান। এরপর ভবনের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দিয়ে ওই ভবনেই স্বর্ণাকে ধর্ষণ করেন চান্দু মিয়া। ধর্ষণ শেষে সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্বর্ণাকে তার ফুফুর বাসার পাশে এনে ফেলে রেখে যান নুরী বেগম।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, নুরী বেগমের স্বামী অন্তরের সঙ্গে সেই বিকেলে ‘বাইরে’ চলে গেলেও রত্না বাসায় ফিরেন রাত সাড়ে ১০টার দিকে। মাঝের এই সময়টায় রত্না কোথায় ছিল— এই বিষয়ে কোন স্পষ্ট জবাব জানা যায়নি রত্নার পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে। চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে ধর্ষিত কিশোরী স্বপ্নার ফুফা ও রত্নার বাবা নিজেও ছিলেন নিরুত্তর।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসায় ফেরার পরই স্বর্ণা তার ফুফুকে সবকিছু খুলে বলেন। তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় কয়েকজনকে নিয়ে গিয়ে প্রথমে সুপারিওয়ালাপাড়ার বাসা থেকে নুরীকে আটক করেন স্বর্ণার স্বজনরা। পরে মোবাইল নিয়ে যাওয়ার কথা বলে নুরীর স্বামী অন্তরকে ডেকে আনা হয় ওই বাসায়। স্বর্ণার স্বজনরা এ সময় তাকেও আটক করে। দুজনকে আটক করার পর ডবলমুরিং থানায় খবর দেয় স্বর্ণার স্বজনরা। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে রোববার দিবাগত রাতে ধর্ষক চান্দু মিয়ার সহযোগী মো. রাজিবকে (২৩) আটক করে।

ধর্ষণের শিকার কিশোরী স্বর্ণা বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি রয়েছেন। এই ঘটনায় ভিকটিম স্বর্ণার মা বাদি হয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!